Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

17খোলা বাজার২৪, বুধবার, ০১ জুন ২০১৬: আ.লীগে প্রতি তিনজনে দুজন বদ্রিােহীষষ্ঠ এবং শেষ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৪৮৪ জন। ৪ জুন ৭২৭টি ইউপিতে শেষ পর্বের ভোট হবে। সে হিসাবে প্রতি তিন ইউনিয়নে দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন মাঠে।
ষষ্ঠ পর্বের ভোট নিয়ে সারা দেশ থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের এই হিসাব বেরিয়ে এসেছে।
এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচ ধাপের ভোটে ৯৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ভোটকে কেন্দ্র এই সংঘাতের বেশির ভাগই হয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যেও।
বিপুলসংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা এবং অতীত সংঘাতের নজির—সব মিলিয়ে ষষ্ঠ ধাপের ভোটও ভাবনার জন্ম দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে।
নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, প্রথম পাঁচ ধাপে ৩ হাজার ২৯০টি ইউনিয়নে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন ৬৯৭টি ইউনিয়নে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবেশিত খবর অনুযায়ী, এই ৬৯৭ জনের মধ্যে প্রায় ৫০০ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ২ হাজার ১৯৫ ইউপিতে (৬৭ শতাংশ)।
প্রথম পাঁচ ধাপে ভোটের আগে, ভোটের দিন এবং ভোট সম্পন্ন হওয়ার পরও সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক বেশির ভাগ সহিংস ঘটনা ঘটেছে সরকারদলীয় প্রার্থী ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে। দলের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হলেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কেউই বিষয়টি তেমন আমলে নেননি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, আগামী পর্বে সহিংসতা কমে আসবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বৃদ্ধি করা হবে। বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। তবে সহিংসতায় যাতে লিপ্ত না হয়, সে জন্য দলীয়ভাবে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিপুল প্রাণহানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সব সময়ই নির্বাচনে প্রাণহানি হয়। সামাজিক ও গোষ্ঠীগত নানা বিষয় নির্বাচনের সময় জেগে ওঠে। সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে সরকার ও আওয়ামী লীগ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা আছে।’
আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, সহিংসতা থামাতে তৃতীয় পর্বেই প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে তৃণমূলে বার্তা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কেউ তা কানে তুলছেন না। দলের প্রার্থীরা মনে করছেন, ‘মনোনয়ন পেলেই জয়’—এমন একটা পরিস্থিতিতে হারলে নিজের অবস্থান একেবারে শেষ হয়ে যাবে। আর বিদ্রোহীরা মনে করছেন, সরকারি দলের রাজনীতি করলেও একটু প্রভাব খাটাতে না পারলে প্রশাসন পাত্তা দেবে না। এ জন্য তাঁরাও কিছুটা শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করছেন। ফলে সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, এবারের ভোটে ভোটারের চেয়ে ব্যালটের গুরুত্ব বেড়েছে। এ জন্য যেকোনোভাবে ব্যালটটা ছিনতাই করা বা সিল মারার চেষ্টা চলছে। আর মাঠে আছে দুটি দল। একটি আওয়ামী লীগ, অন্যটি বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ। ফলে সংঘাতে প্রাণ যাচ্ছে।
প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের ভেতর এমন যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণ সম্পর্কে এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বলেন, এবার ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার কারণে ব্যক্তির নেতৃত্বের প্রতি উচ্চাকাক্সক্ষা ও আধিপত্যের উচ্চাভিলাষ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ব্যবসায়িক অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে। কারণ, একবার অর্থ বিনিয়োগ করে জয়ী হলে ব্যবসার জন্য তা সুবিধাজনক হবে। এ জন্যই সরকারি দল মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কুমিল্লা জেলায়। গত পাঁচ পর্বে ওই জেলায় ব্যাপক সংঘাত হয়েছে। তিনজনের প্রাণহানি হয়েছে। কুমিল্লা জেলায় ৪৫টি ইউপির ভোট হবে ষষ্ঠ ধাপে। এসব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগেরই ৭০ জন বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। এর আগে ইউপি ভোট উপলক্ষে জেলার চান্দিনা, ব্রাহ্মণপাড়া ও তিতাস উপজেলায় তিনজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দুজন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক। সর্বশেষ পঞ্চম পর্বে তিতাসে মারা যান বলরামপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী কামাল উদ্দিন। এই পরিস্থিতিতে আগামী পর্বের ভোটে উত্তেজনা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।
এর বাইরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বেশি আছেন চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, শরীয়তপুর, গাইবান্ধা, নওগাঁ, পাবনা ও যশোর জেলায়।
শেষ পর্বে কিশোরগঞ্জে ৪২টি ইউনিয়নের ভোট হচ্ছে। এসব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা ৪১। এরই মধ্যে চতুর্থ পর্বে অষ্টগ্রামের এক ইউনিয়নে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজনের প্রাণ গেছে। এই পর্বে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ভোট হবে। অধিকাংশই প্রত্যন্ত এলাকায়। গত ২৮ মে পঞ্চম ধাপের ভোটে জেলার মিঠামইন উপজেলায় সংঘাতের ঘটনায় বহু লোক আহত হন।
যশোর জেলায় নির্বাচন শুরু হওয়ার পর ইতিমধ্যে চারজনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে কেশবপুর ও মনিরামপুরে দুজন মারা যান। আর তৃতীয় পর্বের ভোটের আগের দিন সদর উপজেলায় বোমা বানাতে গিয়ে দুজন মারা যান। ষষ্ঠ ধাপে শার্শা ও চৌগাছা উপজেলায় ২১টি ইউনিয়নে ভোট হচ্ছে। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ১৭ জন বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। ইতিমধ্যে দুই উপজেলাতেই সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শার্শার কায়রা, লক্ষ্মণপুর ও উলসী ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন। চৌগাছাতেও ২৮ মে আওয়ামী লীগের এক বিদ্রোহী প্রার্থীকে অবরোধ করেন দলীয় প্রার্থীর সমর্থকেরা। এ নিয়ে সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হন। তাঁদের একজনের অবস্থা গুরুতর।
সিলেটের জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোয়াইনঘাটে ২১টি ইউপিতে ভোট হবে শেষ পর্বে। এসব ইউপিতে আওয়ামী লীগের ১৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এর আগে পঞ্চম পর্বে ওসমানীনগরে দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে মারামারিতে একজন প্রাণ হারান। আর ভোটের দিন আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
নওগাঁর ৩০টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের ১৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। আগের পর্বগুলোতে ভোটের দিন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রানীনগরে সংঘর্ষের পর চার কেন্দ্রে ভোটও স্থগিত করা হয়েছিল।
ময়মনসিংহে চেয়ারম্যান পদে শেষ পর্বে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন ৪২ জন। এই জেলায় ভোট হচ্ছে ৫২টি ইউপিতে। প্রথম আলো