Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

28খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ০২ জুন২০১৬: কেমন এগিয়ে যাচ্ছে ভারত? অনেকভাবেই বিশ্লেষণ করা যায়। ভারতের আজকাল পত্রিকায় সোমেন রায় একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। দুই-একটি বানান পরিবর্তন করে এখানে তা প্রকাশ করা হলো।
২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে ৭.৬% এবং ২০১৬ সালের প্রথম তিন মাসে প্রত্যাশা ছাপিয়ে যাওয়া ৭.৯% আর্থিক বৃদ্ধির খবরটা অর্থ মন্ত্রণালয় দিল মোদি সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদ্যাপনের পিছু পিছু।
গত অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের বৃদ্ধি হার ছিল ৬.৭%। চীনকে পিছনে ফেলে পৃথিবীর দ্রুততম বৃদ্ধি হারের বড় অর্থনীতি হয়ে ওঠার এ তথ্য আগামী সপ্তাহে দু-দিনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে বিনিয়োগ আকর্ষণে মোদিকে সাহায্য করলে ভাল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রক জি ডি পি-র যে বিশদ খতিয়ান প্রকাশ করেছে, তা খতিয়ে দেখলে যে ছবিটা স্পষ্ট হয়, সেটা মোটেই ভারতীয় অর্থনীতির শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞাপন নয়। নতুন বিনিয়োগ নয়, এই আর্থিক বৃদ্ধির মূল সঞ্চালক শক্তি বেসরকারি ব্যয়। ২০১৪-’১৫ সালের জি ডি পি-র ৫৭.৬% থেকে বেসরকারি ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে জি ডি পি-র ৫৯.৫%। কারণ, বেসরকারি ব্যয়ের বৃদ্ধিহার ২০১৪-’১৫ সালের ৬.২% থেকে বেড়ে ২০১৫-’১৬ সালে হয়েছে ৭.৪%।
কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের প্রধান অর্থনীতিবিদ উপাসনা ভরদ্বাজের মতে, দেশের বড় বাণিজ্য সংস্থাগুলি নতুন লগ্নির পরিবর্তে উঁচু হারে ডিভিডেন্ড দেওয়াতেই এতটা বেড়েছে বেসরকারি ব্যয়। ফলে, গ্রোস ফিক্সড ক্যাপিটাল ফরমেশন (জিএফসিএফ) বা স্থায়ী পুঁজি নির্মাণ আগের বছরের ৭.৯% থেকে নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ৩.৩%। এবং, ২০১৪-’১৫ সালের জিডিপি-র ৩০.৮% থেকে কমে স্থায়ী পুঁজি নির্মাণ হয়েছে জিডিপি-র ২৯.৩%। আমরা পশ্চিমবঙ্গে নতুন বেসরকারি বিনিয়োগের অভাবের কথা সর্বত্র ফলাও করে বলি। আসল সত্যিটা হল, সারা দেশেই নতুন বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রকট হয়ে উঠছে অনিশ্চয়তা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব। মাথায় বিপুল ঋণের বহর, তার সঙ্গে নিচু হারে উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার– এমন বাণিজ্যিক সংস্থার সংখ্যা এখন প্রতিদিন বাড়ছে সারা দেশে। আর সেই চাপ আনুপাতিক হারে গিয়ে পড়েছে দেশের ব্যাঙ্কিং শিল্পের ওপর। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের দেওয়া মোট ঋণের ১১ শতাংশই এখন ‘স্ট্রেসড অ্যাসেট’, বা এমন ঋণ যা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা সুদূর। দেশের ব্যাঙ্কিং শিল্প সঙ্কটে পড়লে তাঁর ধাক্কা সামলাতে লেগে যাবে বেশ কয়েক বছর।
নরেন্দ্র মোদি এবং তার অর্থমন্ত্রীর পক্ষে বিষয়টা গভীর উদ্বেগজনক বলেই বিবেচনা করা উচিত। কারণ, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আটকে-পড়া প্রকল্পের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এবং একটানা ১৭ মাস ধরে কমতে থাকা রপ্তানি। এর অনিবার্য আঘাত এসেছে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে। আর্থিক উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক হল নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। কারণ, ভারতের মতো দেশে কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা বছরে কয়েক লক্ষ করে বাড়ে। লেবার ব্যুরো-র পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালে নতুন কর্মসংস্থানের সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ লক্ষে, যা গত ৬ বছরে নিম্নতম।
চীনকে পিছনে ফেলা আর্থিক বৃদ্ধির অভিঘাতে দেশের আর্থিকভাবে দুর্বল অংশে কী, কী সুফল পৌঁছল, সে প্রশ্ন তো উঠবেই।
গত বছর প্রকাশিত জাতিসঙ্ঘের ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখছি, পৃথিবীর সমস্ত দেশের মধ্যে অভুক্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এখন ভারতে। চীনে অভুক্ত মানুষের সংখ্যা ১৩.৩৮ কোটি ছাপিয়ে ভারতে অভুক্ত মানুষ এখন ১৯.৪৬ কোটি। বস্তুত, পৃথিবীর ৭৯.৫ কোটি অভুক্ত মানুষের প্রায় এক-চতুর্থাংশই ভারতবাসী, পৃথিবীর বৃহৎ অর্থনীতিগুলির মধ্যে দ্রুততম হারে এগিয়ে চলা দেশের বাসিন্দা!