Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

1খোলা বাজার২৪, শনিবার, ০৪ জুন ২০১৬ : দেশে চলমান প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভোটের ষষ্ঠ ও শেষ ধাপে ৬৯৮ ইউপি ভোট শনিবার। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। এ ধাপেও সহিংসতা ও কারচুপির আশঙ্কা করছেন অনেক প্রার্থী। দুই ইউপিতে সকল পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোট হচ্ছে না। ষষ্ঠ ধাপের ভোট ঘিরে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে।
নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বিরোধীমতের প্রার্থী নেতা কর্মীদের গণহারে গ্রেফতারের অভিযোগ রয়েছে। ভোটের আগের দিনও বেশ কিছু ইউপিতে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিরোধীমতের প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা হয়। তাদের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি-ধামকি দিচ্ছে প্রতিপক্ষের প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা। স্থানীয়ভাবে এসব ঘটনার প্রতিকার না পেয়ে ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কায় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শেষ ধাপের ভোট ঘিরে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টহল দিচ্ছেন পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির সদস্য। তবুও প্রার্থী ও ভোটারদের ভয় কাটছে না।
কিছু নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতরা মহড়া দিচ্ছে। এ ছাড়া পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়ররা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে ভোটের আগের দিন দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি। তারা হলেন- টাঙ্গাইলের গোপালপুর সার্কেলের এএসপি জমিরউদ্দিন সরকার ও ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার ওসি মুহিবুল ইসলাম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম ও সহিংসতার ঘটনা যাতে না হয়, সেজন্য পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মাঠে নামানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা চাই ভোটাররা স্বতস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরবেন।
প্রার্থীদের শঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই। নির্বাচনে অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, শেষ ধাপের ইউপি নির্বাচনে সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থা নিতে শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে চলমান ইউপি নির্বাচনে পাঁচ পর্ব শেষ হয়েছে। ৪ জুন ষষ্ঠ ও শেষ পর্বের ভোট হবে। পঞ্চম পর্বের ভোটেও বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, হানাহানি ঘটেছ এবং কিছু প্রাণহানি হয়েছে। যা কোনো মতেই কাম্য নয়। এ অবস্থায় শেষ পর্বের ইউপি নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়-তজ্জন্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে ইসি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এ চিঠির অনুলিপি পুলিশ মহা পরিদর্শকসহ র্যা ব, আনসার, বিজিবি মহাপরিচালককেও পাঠানো হয়।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ৬ষ্ঠ ধাপে ৬৯৮ ইউপিতে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ভোট হচ্ছে। দুই ইউপিতে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোট হচ্ছে না।
প্রার্থী, দল ও ভোটার: শেষ ধাপের ভোটের আগেই ইতোমধ্যে নৌকা প্রতীকের ২৭ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ২২৩ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫ হাজারের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি ভোটার । এক লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় লাখের মতো সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন ভোটের দায়িত্বে।
শেষ ধাপে নেই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা : ইসি সূত্রে জানা গেছে, ৬ষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লক্ষাধিক সদস্য মাঠে রয়েছেন। প্রথম পাঁচ ধাপের মতো এবারও নির্বাচনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। প্রতিটি ইউপিতে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি মোবাইল ফোর্স এবং তিনটি ইউপির জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় র‌্যাবর দুটি মোবাইল ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং বিজিবির দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকছে।
যান চলাচল ও মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ : এদিকে ষষ্ঠ ধাপের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে যানবাহন চলাচলের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে কমিশনের অনুমোদিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকসহ অন্যান্য গাড়ি চলাচল করতে পারবে। হাইওয়ে এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকছে না। একইসঙ্গে ভোটগ্রহনের আগে পরে সব ধরনের মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে শনিবার দিবাগত মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত।
কেন্দ্রে পৌঁছেছে ব্যালট ও নির্বাচনী সামগ্রী : ষষ্ঠ ধাপের ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচনী মালামাল কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সকালে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের মালামাল বুঝিয়ে দেওয়া হয়। রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির ৫৮টি কেন্দ্রে হেলিকপ্টার যোগে নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, মালামাল নিরাপদে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে।
পাঁচ ধাপে আ. লীগ ২২৬৭, বিএনপি ৩১০, স্বতন্ত্র ৬৯৬ : প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউপি ভোটে অন্তত দেড় ডজন দল অংশ নিলেও মূল লড়াই হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে। পাঁচ ধাপে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থীরা ২২৬৭, ধানের শীষ ৩১০ ও ৬৯৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন ।
নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, প্রথম ধাপে ৭৪ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৭৮ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৭৬ শতাংশ, চতুর্থ ধাপে ৭৭ শতাংশ ও পঞ্চম ধাপে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।
প্রথম ধাপের চূড়ান্ত ফলে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান হয়েছেন ৪৯৪ জন ও বিএনপির ৫০ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১০৯ ইউপিতে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ৫৪ জন।
দ্বিতীয় ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪১৯ জন ও ধানের শীষের ৬৩ জন বিজয়ী হন। ১১৭ ইউপিতে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের ৩৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
তৃতীয় ধাপের ভোটে আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৩৬৬ জন; বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৯ জন। বিএনপির প্রার্থীরা ৬০টি ইউপিতে জয়ী হয়েছেন; স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১৩৯টিতে।
চতুর্থ ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪০৫ জন জয়ী হয়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ৩৫ জন। এ ধাপে বিএনপির ৭০ জন ও ১৬১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন।
পঞ্চম ধাপে আওয়ামী লীগ বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৯ জনসহ ৪৩১ জন, বিএনপির ৬৭, স্বতন্ত্র ১৭০, জাতীয় পার্টির ৯ এবং অন্য দলের একজন প্রার্থী চেয়ারম্যান হয়েছেন।