Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

Natore pic 1   05.06খোলা বাজার২৪, রোববার, ০৫ জুন ২০১৬ : তাপস কুমার, নাটোর: নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায় সুনিল ড্যানিয়েল গোমেজ(৬৫) নামে এক খ্রিষ্টান দোকানীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার দুপুরে উপজেলার বনপাড়া খৃষ্টান পল¬ীতে এই ঘটনা ঘটে। নিহত সুনিল গোমেজ বনপাড়া খৃষ্টান পল¬ীর যোশেফ গোমেজের ছেলে। তবে, হত্যাকান্ডের পরপরই প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, রবিবার সকাল ৮টার দিকে তিনি সাপ্তাহিক প্রার্থনার জন্য গির্জায় যান। প্রার্থনা শেষে সেখান থেকে বের হয়ে তিনি বনপাড়া বাজার হয়ে নিজ বাড়ী ফিরে আসেন এবং প্রতিদিনের মত তার মুদিখানা দোকান খুলে বসেন। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কে বা কাহারা দোকানে এসে সুনীলের ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় তার তার কোমর ও মাথা দোকানের বাইরের দিকে উপুড় অবস্থায় ঝুলে ছিল। এছাড়া দুইটি হাতে তিনি টাকা ধরে ছিলেন। তবে হামলার সময় দোকানের বাইরে ও ভিতরের কোথায় ভাংচুর বা হামলার কোন আলামত পাওয়া যায়নি। এছাড়া, হত্যাকান্ডের সময় তার ভাড়াটিয়ারা বাসায় ছিলেন না বলে স্থানীয়রা জানান।
নিহতের মেয়ে স্বপ্না গোমেজ জানান, আমার বাবা অত্যন্ত সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তার কোন শত্র“ই থাকতে পারে না। সারাদিন দোকানে বেচাকোনা করতেন। অন্যের সাথে কখনও বেশি কথা বলতেন না। দুপুরে ভাত খাবার সময় বাবাকে কে বা কাহারা কুপিয়ে মেরে ফেলেছে শুনে আমি তৎক্ষনাৎ ঘটনাস্থলে দৌড়ে যায়। সেখানে গিয়ে বাবার ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো মৃতদেহ দেখতে পায়। । আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই।
বনপাড়া মিশনের সিস্টার ইনচার্জ জয়ন্তী পিউরিফিকেশন জানান, এর আগে সুনীল বনপাড়া মিশনে মালির কাজ করতে। তিনি অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন। মালির চাকরীর মেয়াদ শেষ হবার পরেই তিনি মনিহারি দোকান পরিচালনা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।
স্থানীয় মর্জিনা বেগম জানান, দিনের বেলায় সুনীলের মত একজন নিরীহ লোককে হত্যার ঘটনার পর আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। এখানকার অনেক পরিবারের পুরুষরা জীবিকার তাগিদে বাইরে অবস্থান করছেন। এখন থেকে তো আর রাতেও ঠিকমত ঘুমাতে পারব না। আমরা আামাদের জীবনের নিরাপত্তা চাই।
খ্রিষ্টান পল¬ীর বাসিন্দা বেনেডিক্ট গোমেজ জানান, তার মত একজন সহজ সরল নিরীহ লোককে দিনে দুপুরে কেই হত্যা করবে এটা আমরা কেউ কখনও ভাবতে পারিনা। তাছাড়া, হত্যাকান্ডের সময় সুনীল গোমেজের ভাড়াটিয়া কেউ বাসায় ছিলেন না। এর আগে মোবাইলের মাধ্যমে সর্বহারা পরিচয়ে আমার কাছ থেকে ১০লক্ষ টাকার চাদা দাবি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এঘটনায় আমি থানায় সাধারন ডায়েরী করেছিলাম।
ভাড়াটিয়া সুখী খাতুন জানান, হত্যাকান্ডের সময় তিনি তার বাবার বাড়ীতে এবং তার স্বামী সবুজ ট্রাক ড্রাইভারী হওয়ায় পেশাগত কারনে বাইরে অবস্থান করছিলেন। সুনীলের মৃত্যুর খবর শুনেই তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
নাটোরের সিআইডি ইনচার্জ সেকেন্দার আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জানান, হত্যাকান্ডের ধরন দেখে প্রাথমিকভাবে যেটা মনে হচ্ছে, এটা জঙ্গী হামলার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। তবে, হত্যাকান্ডটি অন্য কোন কারনে ঘটতে পারে।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্সি সাহাবুদ্দীন জানান, সুনিল গোমেজকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘাড়ে কুপিয়েই হত্যা করা হয়েছে। নিহতের দু’হাতেই টাকা ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে, চাঁদাবাজীকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে। তবে কারা এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যা্েছ না। স্থানীয় লোকজন কাউকে হত্যা করতে দেখেনি। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আনতে পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিষয়টি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।