Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

35খোলা বাজার২৪, রোববার, ০৫ জুন ২০১৬ : জঙ্গি দমনে সাহসিকতার পরিচয় দেওয়া চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা মো. বাবুল আক্তার। পেয়েছেন একাধিক রাষ্ট্রীয় পদক। তিনি চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার থাকাকালে গত বছরের অক্টোবরে নগরের কর্ণফুলীর খোয়াজ নগর থেকে শুরু করে ডিসেম্বর পর্যন্ত হাটহাজারীর আমানবাজারে টানা অভিযান চালিয়ে অস্ত্র-গুলিসহ জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করেন। খোয়াজ নগরে অভিযান চালানোর সময় জঙ্গিরা তাঁকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়লেও তিনি বেঁচে যান। ওই অভিযানেই চট্টগ্রামে জঙ্গিদের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়।
এরপর থেকে বাবুল আক্তার নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কায় থাকলেও পিছু হটেননি অভিযান থেকে। কিন্তু পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনি সব সময় শঙ্কায় থাকতেন। সহকর্মী থেকে শুরু করে সাংবাদিকেরা যে-ই তাঁর সঙ্গে জঙ্গি–সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলতেন, তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁর শঙ্কার কথা বলতেন। তাঁর সেই শঙ্কাই সত্য হলো। আজ রোববার সকাল সাতটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে তাঁর স্ত্রী মাহমুদা খানমকে হত্যা করল দুর্বৃত্তরা।
বাবুল আক্তার সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) হন। গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দেন তিনি। তাঁর কর্মস্থল এখনো নির্ধারিত হয়নি। আজ সকালে স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি চট্টগ্রামে যান।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন বাবুল আক্তার। সেখানে থাকা নগরের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারকে কেন দেখে রাখা হয়নি? আমি তো আগেই বলেছিলাম, তারা আমার পিছু ছাড়বে না।’
খোয়াজ নগর থেকে হাটহাজারীর আমানবাজার পর্যন্ত অভিযান চালানোর সময় বাবুল আক্তারের সঙ্গে ছিলেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) সন্তোষ চাকমা। তিনি আজ হাসপাতালে বলেন, ‘খোয়াজ নগর থেকে হাটহাজারীর আমানবাজার পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের ধরার পর স্যার (বাবুল আক্তার) পরিবার নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন থাকতেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, তাঁকে মারতে না পারলেও জঙ্গিরা তাঁর পরিবারকে শেষ করে দিতে পারে।’
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ-উল-হাসান হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাবুল আক্তার জঙ্গি দমনে সক্রিয়ভাবে কাজ করতেন। তিনি কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। এ কারণে জঙ্গিরা তাঁকে টার্গেট করতে পারে। কিন্তু তাঁর স্ত্রীকে গুলি করে মারা, এটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর স্ত্রীকে কেউ এভাবে মারতে পারে, তা পুলিশের ধারণা ছিল না।’
জঙ্গি দমনে সক্রিয়ভাবে কাজ করা এ পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় পুলিশি নিরাপত্তা পর্যাপ্ত ছিল কি না, জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ হাসপাতালের মর্গের সামনে বলেন, ‘দুজন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক তাঁর বাসায় নিরাপত্তায় ছিলেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তাঁরা বাসা থেকে চলে আসেন। আজ রোববার সকালে আবার বাসায় যেতেন। এই সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে গেল।’
২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নগরের সদরঘাটে একে-২২ রাইফেলের গুলিতে দুই ছিনতাইকারী (পরে শনাক্ত হয় জেএমবি) ও এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় অস্ত্র-গুলি। এ ঘটনায় নগরের সদরঘাট থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। কিন্তু ঘটনার সূত্র বের করা যায়নি। নিহত দুজনের লাশও পরিবার নেয়নি। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম লাশগুলো দাফন করে। এ ঘটনার ১৩ দিন পর ৬ অক্টোবর নগরের কর্ণফুলী থানার খোয়াজ নগর এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে জেএমবির চট্টগ্রামের সামরিক কমান্ডার জাবেদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে। ওই দিন জঙ্গিরা তাঁর দিকে গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছিল। পরদিন গ্রেপ্তার জাবেদকে নিয়ে অক্সিজেন কুয়াইশ সড়কে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গেলে গ্রেনেড বিস্ফোরণে জাবেদ মারা যান। গ্রেপ্তার বাকি চার জঙ্গি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তাঁরা স্বীকার করেন যে তহবিল সংগ্রহের জন্য তাঁরা ছিনতাইয়ে নেমেছেন।
এ ঘটনার পর চট্টগ্রাম নগর পুলিশ নড়েচড়ে বসে। বাবুল আক্তারও থেমে থাকেননি। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজার এলাকায় জেএমবির চট্টগ্রামের প্রধান রাইসুল ইসলাম ওরফে ফারদিনের ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র-গুলি ও সেনাবাহিনীর পোশাক উদ্ধার করা হয়। বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে ওই অভিযানে গ্রেপ্তার হন রাইসুলের তিন সহযোগী। তাঁরা তিনজনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তিনজনই বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন। পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র রাইসুল সম্প্রতি ক্রসফায়ারে নিহত হন।