Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

40খোলা বাজার২৪, রোববার, ০৫ জুন ২০১৬ : বাংলাদেশ এখন কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে শিল্পের দিকে যাচ্ছে জানিয়ে এদেশে বিনিয়োগের জন্য সৌদি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার সকালে জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানান।
বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
“সৌদি বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা নেতাদের আমাদের দেশে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমৃদ্ধি এবং লভ্যাংশের অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমেই কোটি মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের উদীয়মান শিল্প খাত যেমন-বস্ত্র, চামড়া শিল্প, পাট, সিরামিক, পেট্রো-কেমিকেল, ফার্মাসিউটিক্যালস, শিপ বিল্ডিং, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল ও ইলেকট্রনিকস, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও সমুদ্র সম্পদসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ‘সবচেয়ে উদার’ বিনিয়োগ নীতির দেশ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আইন করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা, ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর রেয়াত, রয়্যালটির রেমিটেন্স, অনিয়ন্ত্রিত প্রত্যাহার নীতি এবং লভ্যাংশ ও পুঁজি দেশে ফিরিয়ে নেওয়াসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া তরুণ, পরিশ্রমী এবং তুলনামূলক স্বল্প বেতনে প্রশিক্ষিত জনশক্তি, স্বল্প খরচে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান ও নিউজিল্যান্ডের বাজারে পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশ সুবিধার কথা তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তার সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) প্রতিষ্ঠা করছে এবং তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একাধিক হাই টেক পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
“এসইজেড ও হাই টেক পার্কে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হচ্ছে।”
বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “জীবন-জীবিকার প্রয়োজননির্ভর কৃষিভিত্তিক রাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ এখন একটি যন্ত্রনির্ভর, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বৈচিত্র্য ও মূল্য সংযোজনের দেশে পরিণত হচ্ছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, ক্রয় ক্ষমতার সক্ষমতার (পিপিপি) দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।
“আমাদের অর্থনীতি বর্তমান বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির একটি।”
গোল্ডম্যান স্যাস বাংলাদেশকে ‘নেক্সট ইলেভেন’ এবং জে পি মরগ্যান ‘ইমার্জিং ফাইভ’ অর্থনীতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার তথ্যও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
গত সাত বছরে ৬ ভাগের ওপর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা এবং রপ্তানি আয়, রেমিটেন্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির কথা সৌদি ব্যবসায়ীদের জানান তিনি।
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল এক বিলিয়ন ডলার। এটাকে আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে জেসিসিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান মাজেন এম বাত্রিজি দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “দুই দেশের মধ্যে বর্তমান ব্যবসার আকার যথেষ্ট না। এটা বাড়াতে হবে। এজন্য দুই দেশের ব্যবসায়ীদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে, সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।”
বিনিয়োগের সম্ভবনা খুঁজতে জেসিসি থেকে ব্যবসায়ীদের একটা প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে প্রকৌশলী, স্থপতির মত দক্ষ মানবসম্পদ রপ্তানির লক্ষ্যে সৌদি আরবভিত্তিক বাওয়ানি গ্রুপ এবং বাংলাদেশের সেনাকল্যাণ সংস্থার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ও বাওয়ানি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক ফাকের এ আল-শাওয়াফ নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদসহ অন্যান্য ব্যাবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।