খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০১৬: চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যাকাণ্ডকে কাপুরুষোচিত আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, যারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। তাদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করানো হবে।’
মদিনায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার সন্ধ্যায় মদিনা হিলটন হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বলে বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে।
ঢাকার পুলিশ হেডকোয়ার্টারে সংযুক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে গত রোববার সকালে চট্টগ্রামে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর কোনো দোষ ছিল না। অথচ বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার পথে তাকেই তার বাচ্চার চোখের সামনেই খুন করা হলো। এটা খুবই দুঃখজনক একটি ঘটনা।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেব না। আমরা চাই এ ধরনের আর কোনো ঘটনা যেন বাংলাদেশে কখনো না ঘটে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা একসময় বাস, ট্রেন লঞ্চে বোমা ছুড়ে মেরেছে, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তারাই এখন গুপ্তহত্যায় নেমেছে।’
এ সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে প্রায় তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছে। এতে বিপুল অঙ্কের বাজেট প্রণয়ন অতীতের কোনো সরকারের পক্ষেই সম্ভবপর হয়নি।’
এ সময় দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ একে ‘বিস্ময়কর’ বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন। কিন্তু আমি বলি এতে বিস্ময়ের কিছু নেই, এটা আমাদের দেশের জনগণের জন্য ভালোবাসা ও কর্তব্যবোধ এবং আমরা সব সময়ই জনগণের কল্যাণের বিষয়টা মাথায় রেখেই কাজ করি। যে কারণে প্রয়োজনে আমরা আমাদের সেরাটা দিতে পারি।’ তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে বাংলাদেশ অন্তত আরো ২০ বছর আগে উন্নত হয়ে যেত।’
সৌদি বাদশাহের সঙ্গে বৈঠকসহ সৌদি আরব সফরের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর দিকেই তাঁর লক্ষ্য থাকবে। এ সময় জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেসিসিআই) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাঁর বৈঠককেও প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সব সময়ই সন্ত্রাস ও দুনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থা প্রতিরোধে তাঁর দেশ ইসলামী জোটে শরিক হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সৌদি আরবপ্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন এবং সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন। তিনি সৌদি আরবের আইনকানুন মেনেই সেখানে বসবাসেরও আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
দেশের উদ্দেশে পবিত্র মদিনা ত্যাগ
সৌদি আরবে পাঁচদিনের সরকারি সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশের উদ্দেশে পবিত্র নগরী মদিনা ত্যাগ করেছেন।
আজ সকালে দেশের উদ্দেশে যাত্রাকালে প্রধানমন্ত্রীকে এখানে আন্তরিক বিদায় জানানো হয়। মদিনার ডেপুটি গভর্নর আবদুল মুহসিন আল মুনিফ, সৌদি আরবে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত এবং ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি গোলাম মসিহ এবং মদিনার কনস্যুলার জেনারেল এ কে এম শহিদুল করিম বিমানবন্দরে তাঁকে বিদায় জানান।
বিমানবন্দরে সৌদি সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার জানায়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ বিমানবন্দর ত্যাগ করেছে।
বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে তিনি সৌদি আরব সফর করেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বাদশার শপথ গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রীর এই সফর অনুষ্ঠিত হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এবং একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে আছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা গত ৩ জুন জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।
সৌদি আরবে অবস্থানকালে তিনি মক্কায় পবিত্র ওমরাহ পালন করেন এবং মসজিদে নববীতে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন।
জেদ্দায় সৌদি বাদশার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।