Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

39খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০১৬: মানুষ আর কতো অমানুষ হবে? আর কতো নির্মমতা দেখলে মানুষের অনুভূতি বিকল হয়ে যাবে? মানুষ কি আজ মানুষ ছাড়া আর সবকিছুই? এসব প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হচ্ছে একটি দৃশ্য দেখে। যা দেখলে যে কারোই বুক কেঁপে উঠবে।
চাঁদপুর লঞ্চঘাটে একটি লঞ্চের কেবিনে দেখা গেছে এক তরুণীকে। দেখতে সুশ্রী। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ। বয়স কতোই বা, ২২ বা ২৩। নিথর দেহ পড়ে আছে কেবিনের বেডে। কক্ষের ভেতরে সবকিছু কেমন এলোমেলো।
রাতের কোনো এক সময় হত্যার শিকার হয়েছে। নির্মম আর পাশবিকভাবে। না, শুধু তরুণীকে একাই নয়, একই সঙ্গে হত্যা করা হয়েছে তার অনাগত সন্তানকেও। না এখানেই শেষ হয়নি, মা আর তার গর্ভের সন্তানকে হত্যার আগে ধর্ষণও করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে হয়তো প্রথম মা হওয়ার স্বর্গীয় আনন্দও!
কী পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল সেই তরুণী মাকে! ভাবা যায়? একদিকে গর্ভের সন্তানকে বাঁচানোর আকুতি। আরেকদিকে, নিজের সম্ভ্রম আর প্রাণ রক্ষা। না, শেষ অবধি কোনোটাই রক্ষা হয়নি। হতে দেয়নি পৈশাচিক ঘাতক।
আচ্ছা, কী এমন অপরাধ করেছিলেন ওই তরুণী মা? হয়তো ছিল প্রথম স্বামীর ঘর ছেড়েছিলেন? কারো ভালোবাসার পাতে ছাই দিয়েছিলেন? নাকি শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া করেছিলেন?
হয়তো কেউ মনে মনে আওড়াতেও পারেন, ঘটনা হয়তো পরকীয়া, কিংবা অবৈধ গর্ভধারণ! হ্যাঁ, মুখে কিংবা প্রকাশ্যে না হোক মনে মনে তো এমন কথা কেউ বলতেই পারেন? কিন্তু তার জন্য কি এমন পাশবিক শাস্তি কেউ দিতে পারে? অন্তত সেই ঘাতক যতি হয় মানুষ। যদি এমনি কোনো মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করে থাকেন?
পুলিশ গিয়ে এমভি আব-এ-জমজম-১ এর স্টাফ কেবিন থেকে তরুণীর মায়ের লাশ উদ্ধার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লঞ্চের ম্যানেজার, কেরানি, কেবিনবয়সহ ৫ জনকে আটক করে নিয়ে এসেছে থানায়।
লঞ্চে র্ধষণরে পর র্গভবতীকে হত্যা ২ম্যানেজর জানান, সোমবার (৬ জুন) রাত ৮ টায় একজন পুরুষসহ ওই তরুণী লঞ্চে উঠে ১১২নং কেবিন বুকিং করেছিলেন। ঢাকায় লঞ্চটি ভিড়ার পর কেবিন বয়দের অগোচরে পুরুষটি নেমে চলে যায়। তবে তরুণী থেকে গিয়েছিলেন কেবিনেই। ঢাকা থেকে লঞ্চটি আবারো চাঁদপুর চলে যায়। এরপর কেবিনে তরুণী লাশ দেখতে পায় কেবিন বয়রা।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়ালী উল্যাহ অলির ধারনা, ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে ওই অন্তঃস্বত্ত্বা ওই তরুণীকে।
পুলিশ তদন্তে নেমেছে। একদিন হয়তো সব রহস্য উন্মোচিত হবে। ততোদিনে হয়তো আজকের এই অনুভূতি আমরা ভুলে যাবো। সেদিন আর কৌতুহল হবে না গর্ভের সন্তানসহ তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনার কারণ জানতে। কারণ ততোদিনে হয়তো এমন ঘটনা আরো কয়েকটা ঘটে যাবে। অনুভূতিগুলোও এমন ঘটনায় আর সাড়া দেবে না।
না, আর তো কিছুই ভাবা যায় না। ভাবনাগুলোর সঙ্গে যে অনুভূতির দূরত্ব বেড়েই চলছে। আমরা বোধ হয় মানবিকতার সব দরজা বন্ধ করে দিচ্ছি। অনুভূতির হাজারো জানালা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর আমরাও দিন দিন মানুষ থেকে হয়ে পড়ছি অমানুষ