Sat. Jun 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

46খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০১৬: বিরোধীদল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের আপত্তি সত্ত্বেও জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। এ বাজেট পাসের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ ৩৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অতিরিক্ত ১৯ হাজার ৮০৩ কোটি ৬২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয় করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে সম্পূরক বরাদ্দ অনুমোদনের জন্য ৩১টি মঞ্জুরি দাবি উত্থাপন করা হয়। এসব দাবির মধ্যে ছয়টি দাবির ওপর আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। বাকি মঞ্জুরি দাবিগুলো সরাসরি ভোটে প্রদান করা হয়। অবশ্য সব ছাঁটাই প্রস্তাবগুলোই কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূরক বাজেটটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। বছর শেষ হওয়ার আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ কাটছাঁট করার ফলে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। মূল বাজেট থেকে সংশোধিত বাজেটের ব্যয় হ্রাস পেয়েছে ৩০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা।
গত বছর পাস হওয়া চলতি অর্থ বছরের মুল বাজেট ছিল দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার। কিন্তু বছর শেষে ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের নির্ধারিত বরাদ্দ অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। অন্যদিকে ৩৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের অতিরিক্ত ১৯ হাজার ৮০৩ কোটি ৬২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয় করেছে। সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারেনি তাদের হ্রাসকৃত বরাদ্দের জন্য সংসদের অনুমতির প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ অতিরিক্ত ব্যয় করেছে কেবলমাত্র তাদের বরাদ্দই সংসদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। সম্পূরক বাজেট পাসের মাধ্যমে সংসদ সেই অনুমতি দিয়েছে।
সম্পূরক বাজেটের ওপর মোট ৩১টি দাবির বিপরীতে মোট ১৯২টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। এর মধ্যে ছয়টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে আনীত ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। সেগুলো হলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ব্যয় বরাদ্দের বিরোধিতা করে ছাঁটাই প্রস্তাব এনে আলোচনায় অংশ নেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম ওমর এবং নূরুল ইসলাম মিলন। তবে তাদের সবগুলো ছাঁটাই প্রস্তাবই কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
সম্পূরক বাজেটের আওতায় ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিপরীতে ১৯ হাজার ৮০৩ কোটি ৬২ লাখ ৮৮ হাজার টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে সর্বাধিক তিন হাজার ৫৭৬ কোটি ২৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে। সবচেয়ে কম ৪৭ লাখ ৯১ হাজার বরাদ্দ অনুমোদন পেয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের বিরোধীতা : এ মন্ত্রণালয় খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দের দাবির বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টি ও চার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য বলেন, এটি খুবই সেনসেটিভ বিভাগ। প্রতিবছর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়, কিন্তু এসব অর্থ কোনো খাতে ব্যয় হয়, সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে কিনা- তা বিস্তারিত জানানো হয় না। জনগণের অধিকার রয়েছে এই খাতে বরাদ্দের টাকা স্বচ্ছভাবে ব্যয় হচ্ছে কিনা-তা দেখা।
জবাবে সংসদকার্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, “সবাই বলেছেন এ খাতে বরাদ্দের ব্যাপারে আপত্তি নেই, প্রশ্ন তুলেছেন স্বচ্ছতার। আমি দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই, প্রতিরক্ষা খাতে সব ব্যয় পরিপূর্ণভাবে অডিট করা হয়, এখানে স্বচ্ছতার কোনো অভাব নেই। আমাদের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দেশের জন্য যে সম্মান বয়ে আনছেন, তা সত্যিই অতুলনীয়। তাই ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় : স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত বরাদ্দের বিরোধীতা করে ছাঁটাই প্রস্তাবকারীরা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পূর্ণ প্রশ্নবিদ্ধ। ইউপি নির্বাচনে যা হয়েছে তা সত্যিই দুঃখজনক। গ্রাম পুলিশ অভুক্ত থাকছেন। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্বিকার থেকেছে। শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ হ্রাসে টেন্ডারে কাজ হচ্ছে। এতে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। উপজেলায় যেসব থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়, এই বরাদ্দ পেতে নাকি ১০-১৫ ভাগ অর্থ ঘুষ দিতে হয়।
জবাবে এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “সময়মতো বরাদ্দ না দিলে খরচে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, এদিক লক্ষ্য রেখে এবার সময়মতোই সব বরাদ্দ দিয়েছি। বিগত সময়ের তুলনায় ৩-৪ ভাগ বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শতকরা পাঁচ ভাগের নীচে কোনো টেন্ডার হলে তা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ব্যাপারে আইন করা হচ্ছে। আইনটি চালু হলেই কেউ-ই তা আর করতে পারবে না। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে সরকার ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দেরও বিরোধিতা : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের বিরোধিতা করে ছাঁটাই প্রস্তাবকারী সংসদ সদস্যরা বলেন, শিক্ষার্থীরা আজ আতঙ্কিত, ভুল প্রশ্ন, ভুলে ভরা বইয়ের কারণে। আবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগও রয়েছে। এমপিওভুক্তির অভাবে শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আড়াই বছরে কয়টা স্কুল-কলেজকে এমপিওভুক্তি করেছে? একটাও করা হয়নি। মনে হয় সরকার শিক্ষাকে সম্প্রসারণ করতে চায় না।
জবাবে শিক্ষামন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে প্রস্তাব উত্থাপনকারী অর্থমন্ত্রী বলেন, “এমপিওভুক্তির ব্যাপারে অনেকেই সোচ্চার, কিন্তু ভূঁইফোড় কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে তাদের ব্যাপারে কোনো কথা বলেন না। ২৮ হাজারের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য যে আবেদন দেওয়া হয়েছে তার এক তৃতীয়াংশেই খামাখা। ৩-৪ জন শিক্ষক আর একজন ছাত্র নিয়েও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্যরা সোচ্চার হন না কেন?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দের বিরোধিতা : এ খাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল তিন হাজার ৫৭৬ কোটি টাকার সম্পূরক বরাদ্দের দাবি জানালে তার বিরোধিতা করে ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপনকারীরা বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রতিনিয়ত মানুষ খুন হচ্ছে, এমনকি পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারও রেহাই পাচ্ছে না। এভাবে চললে জনগণ হতাশ হয়ে যাচ্ছে। কঠোর হস্তে এসব সন্ত্রাসীদের দমন হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন করতে সরকারকে আরো সতর্ক থাকতে হবে।
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা কোনো অতিরিক্ত ব্যয় করছি না, শুধু যা প্রয়োজন তাই করছি। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ বাহিনীতে ৫০ হাজার লোকবল নিয়োগ ছাড়াও তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, বাসস্থান, যানবাহনসহ আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে সব কিছুই করা হচ্ছে।