খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৮ জুন ২০১৬: পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যা মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। হত্যারহস্যের জট খুলতে প্রাথমিকভাবে তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার বলেন, ‘মূল জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি, এটাই বাস্তবতা। দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকলেও তথ্য ও বস্তুগত অগ্রগতি হয়েছে। আরও পর্যবেক্ষণ করে একটা জায়গায় পৌঁছাতে চাই।’
মামলার তদন্তকারী সংস্থা নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ সূত্র জানায়, হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে তারা তিনটি প্রশ্নের জবাব খুঁজছে। এগুলো হলো—কেন পুলিশের একজন কর্মকর্তার স্ত্রীকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে; খুনিদের মোটরসাইকেলের পেছনে যাওয়া কালো মাইক্রোবাসটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না; ঘটনাস্থলের কিছু দূরে থাকা দুটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ভিডিওচিত্র ধারণ হয়নি কেন?
তদন্তের মূল দায়িত্বে আছে ডিবি। তবে র্যা ব, সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবি আই) ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিআই) তদন্তে সহায়তা করছে। সিটিআইয়ের উপকমিশনার সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দল এরই মধ্যে চট্টগ্রামে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
গত রোববার সকাল সাতটায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন মাহমুদা খানম। ঘটনার পর পুলিশ জানায়, জঙ্গি দমনে বাবুল আক্তারের সাহসী ভূমিকা ছিল। এ কারণে জঙ্গিরা তাঁর স্ত্রীকে খুন করে থাকতে পারে। এ ঘটনায় সোমবার বাবুল আক্তার হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় তিন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, সংগ্রহ করা একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, ৪০-৫০ সেকেন্ডের মধ্যে মাহমুদাকে খুন করে মোটরসাইকেলের তিন আরোহী জিইসি মোড় থেকে গোলপাহাড়ের দিকে চলে যায়। ওই ভিডিওচিত্রে তিনজনের চেহারা স্পষ্ট নয়। কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে ২০০ গজ দূরে গোলপাহাড় মহাশ্মশান কালীবাড়ির দুটি সিসি ক্যামেরায় সেদিন চিত্রধারণ হয়নি। ওই ক্যামেরায় চিত্রধারণ হলে খুনিদের চেহারা স্পষ্ট বোঝা যেত।
কালীবাড়ির ব্যবস্থাপক বিপু দাশ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, ক্যামেরার কোনো ঝামেলার কারণে হয়তো রোববার সকাল বেলার চিত্র ধারণ হয়নি। শনিবার রাত একটা পর্যন্ত সেখানে অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে শেষে কালীবাড়ির সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সকালে কোনো দরজা খোলা হয়নি। আর এখানে অন্য কারও প্রবেশের সুযোগ নেই। কেউ ভিডিওচিত্র মুছেও ফেলেনি।
কারিগরি ত্রুটি নাকি অন্য কোনো কারণে ভিডিওচিত্র ক্যামেরায় ধারণ হয়নি—তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান মো. ইকবাল বাহার।
পুলিশের সংগ্রহ করা ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, খুনিদের মোটরসাইকেলের পেছনে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস চলে গেছে। সেই মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। নগর পুলিশ কমিশনার বলেন, ভিডিওচিত্র দেখে মনে হচ্ছে মাইক্রোবাসটি খুনিদের সহায়ক হিসেবে ছিল। খুনিরা আক্রান্ত হলে গাড়িটির সাহায্য নিত। ইকবাল বাহার বলেন, তদন্তে সব বিষয়কেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মামলার তদন্তে এখনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলেও আশা ছাড়েননি নিহত মাহমুদার স্বজনেরা। যোগাযোগ করা হলে বাবুল আক্তার অসুস্থ জানিয়ে তাঁর ফুফাতো ভাই মো. ওয়াহিদ বলেন, ‘আমরা চাই দেরিতে হলেও প্রকৃত আসামিরা ধরা পড়ুক। তাদের বিচার হোক।’