Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

Kolpana-Chakmaখোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১১ জুন ২০১৬: জেসিকা চাকমা, রাঙ্গামাটি: কল্পনা চাকমাকে অপহরণের বিশ বছর পূর্ণ হল আজ। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাতে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে অপহরণের শিকার হন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমা। ঘটনাটির জন্য তৎকালিন স্থানীয় সেনাক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের প্রকাশ্যে দায়ী করে আসছে কল্পনার পরিবারসহ নানা মহল। ফেরদৌসসহ অন্যদের আসামি করে মামলাও করেছে কল্পনার পরিবার। কিন্তু সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়ায় আজও কল্পনার কোনো হদিস নেই বলে দাবি করেছেন বাদিপক্ষ।
উল্লেখ্য, শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়। দেশে-বিদেশে বহুল আলোচিত ঘটনা কল্পনা চাকমা অপহরণ। কিন্তু দীর্ঘ বিশ বছরেও হদিস মেলেনি কল্পনা চাকমার। উদ্ঘাটন হয়নি ঘটনার কোনো রহস্য। এর কোনো সুস্পষ্ট জবাব নেই সরকারের। এতটা বছর ধরে কল্পনা চাকমা কোথায় রাষ্ট্রের কাছে জবাব চেয়ে আসছেন তার পরিবারসহ গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ। কিন্তু সরকার থেকে কোনো সঠিক জবাব মেলেনি।
এদিকে পাহাড়ি নেত্রী কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে এবং তদন্তের নামে প্রহসন ও কালক্ষেপণের প্রতিবাদে আজ (রোববার) রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার চট্টগ্রাম নগরীতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।
কল্পনার দুই বড়ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা (কালীচরণ) ও লাল বিহারী চাকমা (ক্ষুদিরাম) বলেন, কল্পনাকে অপহরণকালে তাদের দুই ভাইকে বাড়ির বাইরে নিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে অপহরণকারীরা। কিন্তু পালিয়ে প্রাণে বেঁচে গেছেন তারা। ঘটনার পর কল্পনার বড়ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা বাঘাইছড়ির তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দিতে অপহরণকারীদের মধ্যে স্পষ্টতই টর্চের আলোতে তাদের বাড়ির পাশে কজইছড়ি সেনাক্যাম্পের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস এবং তার পাশে দাঁড়ানো ভিডিপি প্লাটুন কমান্ডার নুরুল হক ও ছালেহ আহমেদকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ওই ঘটনায় কালিন্দী কুমার চাকমা বাদী হয়ে জিআর নং-১৯৪/৯৬ এবং বাঘাইছড়ি থানার মামলা নম্বর-০২, তারিখ:১২/০৬/১৯৯৬ মামলা করেন।
জানা যায়, সরকার ১৯৯৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি আব্দুল জলিলকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়। কিন্তু ওই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজও প্রকাশ করা হয়নি।
জানা যায়, ২০১০ সালের ২১মে বাঘাইছড়ি থানার এসআই ফারুক আহম্মদ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদনে কল্পনা চাকমার সন্ধান পাওয়া যায়নি মর্মে উল্লেখসহ মামলাটি বাতিলের আবদেন জানানো হয়। কিন্তু মামলার বাদী কালিন্দী কুমার চাকমা নারাজি আবেদন জানান। এতে বিচারক সিআইডির মাধ্যমে পুন:তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশে সিআইডি কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ ২০১২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট দেন। কিন্তু ওই তদন্ত রিপোর্টেও প্রকৃত দোষীদের নাম উল্লেখ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন বাদীপক্ষ।
এরপর ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি সিআইডি প্রতিবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত মুখ্যবিচারিক হাকিম মো. সিরাজুদ্দৌলাহ কুতুবী রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপারকে (এসপি) মামলার পুন:তদন্তের আদেশ দেন। ওই আদেশে তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২০ জুলাই রাঙ্গামাটির চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বরাবরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তৎকালিন রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার আমেনা বেগম।