Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

53খোলা বাজার২৪, রোববার, ১২ জুন ২০১৬: ঝুঁকিতে’ থাকা বাংলাদেশি হিন্দুরা তাদের নিরাপত্তার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ভারত সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বার্তা সংস্থা পিটিআই’র বরাত দিয়ে খবরটি ছেপেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অনলাইন ও হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ধারাবাহিক হামলার প্রেক্ষিতে তারা চাইছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ভারত সরকার যেন বিষয়টি ঢাকার কাছে তুলে ধরে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ইউনিট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও মানবাধিকার কর্মী রানা দাসগুপ্ত পিটিআইকে বলেছেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হলো হিন্দুরা। এ সম্প্রদায়টি বাংলাদেশে ঝুঁকির মুখে। মৌলবাদী ও জামায়াতিরা বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের মূলোৎপাটনের চেষ্টা করছে। আমরা মনে করি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ট দেশ হিসেবে ভারত এক্ষেত্রে কিছু করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে আমাদের বড় আশা রয়েছে। তার উচিত এ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ১০ জুন হিন্দুদের আশ্রমের সেবক নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্দেহজনক ইসলামী জঙ্গিরা।
এ নিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ কর্মীদের ওপর ধারাবাহিক হামলার চতুর্থ শিকার হলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এ ব্যক্তি।
রানা দাসগুপ্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের একজন প্রসিকিউটরও।
তিনি বলেছেন, ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ও মৌলবাদী গ্রুপগুলো হিন্দু সম্প্রদায়কে সমূলে উৎপাটন করতে চায়। গত দু’বছর ধরে ধর্মীয় এই তৎপরতার আরো অগ্রগতি হয়েছে।
তার দাবি, বাংলাদেশকে একটি মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হতে দিয়ে স্থিতিশীল ভারত উপমহাদেশ অর্জন করা কখনও সম্ভব হবে না। তাই ভারত যদি এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা চায় তাহলে আমাদের দেশে (বাংলাদেশে) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বিনাশ করা বন্ধ করতে তাদেরকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে একজন পুরোহিত, একজন খ্রিস্টান দোকানি, একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীসহ এক সপ্তাহে নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে হত্যা করা হয়েছে।
ফেব্র“য়ারিতে, উগ্রপন্থিরা একটি মন্দিরের পুরোহিতকে কুপিয়ে হত্যা করে। তার সহায়তায় এগিয়ে যাওয়া এক ভক্তকে গুলি করে আহত করে। এপ্রিলে একজন প্রফেসরকে রাজশাহীতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একই মাসে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন দর্জিকে হত্যা করা হয় তার দোকানের ভিতর। বাংলাদেশে প্রথম এলজিবিটি সম্প্রদায়ের ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও তার এক বন্ধুকে সন্দেহভাজন ইসলামী জঙ্গিরা ঢাকায় তার বাসায় হত্যা করেছে। এ ছাড়া ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ ও উদারপন্থি ব্লগারদের ওপর ধারাবাহিক হামলা হয়েছে।
বাংলাদেশের সুপরিচিত অভিনেতা ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (এফডিসির) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পীযুষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থা ভয়াবহ। যদিও আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার রয়েছে তবু তৃণমূল পর্যায়ে পরিস্থিতি নির্মম। ধর্ষণ, হত্যা, লুট, অগ্নি সংযোগ, হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সহায় সম্পত্তির ক্ষতিসাধন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।’
পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর ভারত চাপ সৃষ্টি না করছে এবং চাপ সৃষ্টি না করলে মৌলবাদীদের থামানো যাবে না।
তিনি আরো বলেন, এ অঞ্চলে ভারত একটি বড় শক্তিধর দেশ। প্রতিবেশী দেশে যখন হিন্দুদের নৃশংসভাবে জবাই করা হয় ভারত তখন অলস বসে থাকতে পারে না।
পুরোহিতকে হত্যার পর বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশন তাদের কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছে নিহতের পরিবার ও আশ্রমের সহযোগীদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে। কমিশনের দ্রুত এ পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রানা দাসগুপ্ত।
তারা বলেছেন, ভারতকে এর চেয়ে বেশি কিছু করতে হবে। বাংলাদেশের হিন্দু নেতারা দাবি করছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আরও নিরাপত্তা দেয়ার জন্য। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নেতারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের একজন সিনিয়র মন্ত্রী মনে করছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা আসলে ধর্ম নিরপেক্ষ ও উদার আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে বাধা সৃষ্টির জন্য করা হচ্ছে।
ঢাকা থেকে টেলিফোনে পিটিআইকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে এর জন্য দায়ী মৌলবাদী ও জামায়াত চক্র। তারা বাংলাদেশের খারাপ ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চায়। এসব হামলা সংখ্যালঘুদের উদ্দেশ্য করে নয়, বরং আসল টার্গেট হলো আমাদের সরকারের ক্ষতি করা এবং আমাদের দেশকে একটি মৌলবাদী দেশে পরিণত করা। আমরা কখনও তা হতে দিতে পারি না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর পদক্ষেপ।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, হিন্দুদের নিরাপত্তা রক্ষায় ভারত যদি পদক্ষেপ নেয় তাহলে ঢাকা কি করবে। এমন প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে অত্যন্ত সুসম্পর্ক। ভারত আমাদের বন্ধু। যদি ভারত বিষয়টি আমাদের কাছে তুলে ধরে আমরা আলোচনা করবো। এতে ক্ষতির কিছু নেই।