খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০১৬: বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে। বিশেষত ৯০-এর দশক পরবর্তী সময়ে এই বৃদ্ধির হার বেশ দৃশ্যমান। বর্তমানে মাথাপিছু গড় আয় প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার টাকা (১ হাজার ৩১৬ ডলার)। এই মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে সংসদ সদস্যরা।
সাম্প্রতিক এ গবেষণায় দেখা গেছে, (সুইজারল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস ও সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের যৌথ প্রয়াস) ৬ ছয় বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে ৩২৪ শতাংশ আয় বেড়েছে এমপিদের। প্রায় ১ কোটি টাকা হচ্ছে একেকজন এমপির বার্ষিক গড় আয়। আর তাদের এ আয় সাধারণ মানুষের আয়ের প্রায় শত গুণ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আয় বিবরণীর যে তথ্য জমা দেন, তার ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রকৃত রাজনীতি : স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভেতরের গল্প [‘দ্য রিয়েল পলিটিকস অব বাংলাদেশ : দি ইনসাইড স্টোরি অব লোকাল পাওয়ার ব্রোকারস’] শিরোনামের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে বিজয়ী এমপিদের মাথাপিছু বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে অর্থাৎ ২০১৩ সালের শেষে এ আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা। মাত্র ৫ বছর কয়েক মাসের ব্যবধানে এমপিদের আয় ৩২৪ শতাংশ বেড়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে মজার একটি তথ্য সংযোজন করা হয়েছে। ২০০৮ সাল ও ২০১৩ সালে ২৩ জন এমপি বার্ষিক আয়ের পরিমাণ শূন্য দেখিয়েছেন। গবেষণাটির পর্যালোচনা প্রতিবেদনেও এ আয় শূন্য ধরা হয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আয় ও সম্পদের বিবরণী নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয় যেখানে সাতটি খাতেরও উল্লেখ থাকে।
২০০৮ সালে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকা ২০ শতাংশ এমপির বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮৮ লাখ ও ২ লাখ ১২ হাজার টাকা। অর্থাৎ এ সময়ে উভয় দলভুক্ত এমপিদের আয়ের ব্যবধান ছিল প্রায় ৪১ গুণ। আর ২০১৩ সালে আয়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা ২০ শতাংশ এমপির বার্ষিক গড় আয় ছিল ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। অন্যদিকে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা ২০ শতাংশের গড় আয় ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ এ সময় আয়ের দিক থেকে সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকা এক-পঞ্চমাংশ এমপির তুলনায় সবচেয়ে এগিয়ে থাকা এক-পঞ্চমাংশের গড় আয় ১২৬ গুণ বেশি।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, এই বিষয়ে আমার মতামত হচ্ছে যে, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ আমাদের মতই আরেকটি উন্নয়নশীল দেশ, আমাদের মতই প্রায় সমসাময়িক জনসংখ্যার এবং সেটাও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) যে সূচক সেখানে কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দেশটির নাম হচ্ছে নাইজেরিয়া। সেখানে এর চাইতে ঢের বেশি ইনকাম বৈধভাবে করে পার্লামেন্ট মেম্বাররা। এবং ওখানে হার্ড কারেন্সিতে তাদের অনারিয়াম দেওয়া হয় কোয়ার্টারলি বেসিসে মিলিয়ন ডলারের বেশি। আর এখানে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়। এখন মনে হয় কিছুটা বাড়িয়েছে। তো বৈধভাবে সম্মানি বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। করলে এখানে পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, জনপ্রতিনিধিরা কি জনগণের বাইরের? তাদের উপার্জন থাকবে না? জনগণের আয় বাড়ছে, জনপ্রতিনিধিদেরও বাড়তে পারে। ঢাকার এই এমপি বলেন, পুরো প্রতিবেদন না দেখে এর বেশিকিছু বলা সম্ভব না।