খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০১৬: নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির কারাবন্দি নেতারা সেখান থেকেই বাইরে থাকা সদস্যদের ‘হত্যার নির্দেশনা’ দিয়ে আসছিল বলে তথ্য পাওয়ার কথা আদালতকে জানিয়েছে পুলিশ।
বাকলিয়া থানার একটি হত্যা মামলায় জেএমবি সদস্য বুলবুল আহমেদ ওরফে ফুয়াদকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনে মঙ্গলবার পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার পক্ষ থেকে ওই তথ্য তুলে ধরা হয়।
আদালত পুলিশের প্রসিকিউশন শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী জানান, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবি আই) পক্ষ থেকে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছিল। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম হারুণ অর রশিদ পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
শুনানিতে আদালত পুলিশের পরিদর্শক শিল্পী রানী দেবনাথ বলেন, ফুয়াদ জেএমবির একজন ‘উচ্চপদস্থ সদস্য’। তিনি জেলখানা থেকে কারাগারের বাইরে থাকা জেএমবি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘গুপ্তহত্যার তথ্য’ সরবরাহ করেছেন বলে ‘তথ্য’ পাওয়া গেছে।
“এমনকি জেলাখানা থেখে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের নির্দেশনা প্রদান করেছেন- এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।”
২০১৫ সালের ২৫ মে বাকলিয়া এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ এই হত্যা মামলা দায়ের করে। এর তদন্ত করছেন পিবি আই এর পরিদর্শক শেখ মো. এহতেশামুল ইসলাম।
অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নির্মলেন্দু সাংবাদিকদের বলেন, “শোনা যাচ্ছে তিনি (ফুয়াদ) জেলখানা তেকে সহযোগীদের কাছে চিরকূট পাঠিয়েছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।”
বাকলিয়ার হত্যা মামলায় ফুয়াদকে রিমান্ডে নেওয়া হলেও গত ৫ জুন এসপিপতœী মিতু হত্যার সঙ্গেও জেএমবির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলে আসছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, কারাগার থেকে লেখা সেই চিরকূটে কী ছিল- তা জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জানতে চাইছেন তারা।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর সদরঘাট থানার মাঝিরঘাট এলাকায় ছিনতাইয়ের সময় এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারসহ তিন খুনের ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ ৫ অক্টোবর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর ও নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জেএমবি সদস্য ফুয়াদ ও চট্টগ্রামের সামরিক কমান্ডার জাবেদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।
পরদিন ভোরে পুলিশের সঙ্গে অভিযানে গিয়ে গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হন জাবেদ। ওই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের তখনকার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) বাবুল আক্তার।
গত ৫ জুন ভোরে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাবার পথে নগরীর জিইসি মোড়ের কাছে খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু।মোটর সাইকেলে আসা তিন যুবক ছুরি মেরে ও গুলি করে তাকে হত্যা করে চলে যায়।
ঘটনার পর থেকে পুলিশ বারবার বরে আসছে, জেএমবি সংশ্লিষ্টতাকে প্রাধান্য দিয়ে সকল সম্ভাবনা মাথায় রেখেই তারা তদন্ত করছে।
পিবি আই এর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বাকলিয়ার হত্যা মামলার পাশাপাশি এসপিপতœী হত্যার ঘটনা নিয়েও রিমান্ডে তথ্য জানার চেষ্টা হবে।”
তবে ‘সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে’ ওই কর্মকর্তা এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাননি।
গোয়েন্দারা এর আগে বলেছিলেন, চট্টগ্রামের খোয়াজনগরে জেএমবি জঙ্গি গ্রেপ্তার এবং জাবেদ নিহত হবার ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে ঢাকার আশুলিয়ায় পুলিশ হত্যা হয়েছিল বলে তারা জানতে পেরেছেন।
বাবুল আক্তার যেহেতু সে সময় চট্টগ্রামে জঙ্গি দমন অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন, তার স্ত্রী হত্যার পেছনেও জেএমবি ছিল কি না- ফুয়াদকে জিজ্ঞাসাবাদে তা বোঝার চেষ্টা চলবে বলে তদন্তকারীরা জানান।