খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৫ জুন ২০১৬: জেসিকা চাকমা, রাঙ্গামাটি : রাঙ্গামাটিতে জনসংহতি সমিতির ডাকা ১৯-২১ জুনের অবরোধকে ঘিরে পাহাড়ি এবং বাঙালিভিত্তিক সংগঠনগুলোর দুটি পক্ষ মখোমুখী অবস্থান নিয়েছে। জেএসএসের ডাকা অবরোধকে প্রতিহত করার হুমকি দিয়েছে পার্বত্য সম-অধিকার আন্দোলনসহ বাঙালিভিত্তিক সমমনা সংগঠনগুলো। এতে জনমনে বিরাজ করছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। তবে আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণে প্রস্তত বলে জানিয়েছে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।
৪ জুন অনুষ্ঠিত রাঙ্গামাটির বরকলে ভূষণছড়া ইউনিয়নের নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক জালিয়াতির মাধ্যমে ভোট ডাকাতির অভিযোগে ওই কেন্দ্রের ফল বাতিল করে সেখানে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে জেলায় আগামী ১৯-২১ জুন তিনদিনের সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। দাবিটি সামনে রেখে এর আগে ১৩-১৪ জুন জেলায় টানা ৩৬ ঘন্টার সড়ক ও নৌপথ পালন করেছে সংগঠনটি। ফের সংগঠনটির ডাকা তিনদিনের অবরোধকে ঘিরে রাঙ্গামাটিতে দেখা দিয়েছে টানটান উত্তেজনা।
১৩-১৪ জুন টানা ৩৬ ঘন্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ শেষে মঙ্গলবার বিকালে ১৯-২১ জুন জেলায় ফের তিনদিনের সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করে জেএসএস। কর্মসূচি ঘোষণাকালে সংগঠনটির পক্ষে জেলা শাখার সহ-সভাপতি কিশোর কুমার চাকমা বলেন, ভূষণছড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ছোটহরিণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৫ বিজিবির সহায়তায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্তৃক কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে এবং ওই কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে আহূত ১৩-১৪ জুন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় ৩৬ ঘন্টার অবরোধ সড়ক ও জলপথ অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। কিন্তু দাবিটি নিয়ে সরকার এগিয়ে আসেনি। সেজন্য গত ৪ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রাঙ্গামাটির বরকলের ভুষণছড়া ইউনিয়নের ছোটহরিণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ফল বাতিল ও পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আবারও জেলায় তিনদিনের সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দিতে বাধ্য হয়েছে সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা শাখা। অবরোধ পালিত হবে ১৯, ২০ ও ২১ জুন প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। দাবিটি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থাকবে জেএসএস। প্রয়োজনে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম অচল করে দেয়া হবে।
অপরদিকে জেএসএসের ডাকা ওই তিনদিনের অবরোধ প্রতিহত করার হুমকি দিয়েছে স্থানীয় বাঙালিভিত্তিক সংগঠন পার্বত্য সম-অধিকার আন্দোলন, পার্বত্য যুবফ্্রন্ট, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদসহ সমমনা সংগঠনগুলো। বুধবার সকাল ১১টায় জেএসএসের ডাকা অবরোধের নামে সা¤প্রদায়িক উস্কানি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে রাঙ্গামাটি শহরে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ হুমকি দেন তারা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনের নেতা মো. জাহাঙ্গীর কামালের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য যুব ফ্রন্টের উপদেষ্টা কাজী১মো. জালোয়া, রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জাহাঙ্গাীর আলম মুন্না, পার্বত্য সম-অধিকার আন্দোলন রাঙ্গামাটি জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বক্কর মোল্লা ও পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাব্বিরসহ অন্যরা। সমাবেশ পরিচালনা করেন পার্বত্য যুব ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান আলম।
সমাবেশে বক্তারা তীব্র সমালোচনা করে বলেন, মুসলমানদের পবিত্র মাহে রমজানে আহুত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ডাকা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ জনসাধারণের মাঝে বির্তকের সৃষ্টি করেছে। পবিত্র রমজান মাসে এ ধরনের অবরোধ ডাকার অর্থই হচ্ছে মুসলিমদের ধর্মের অনুভূতিতে প্রত্যক্ষভাবে আঘাত করা। যা এছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।
সমাবেশে বাঙালিভিত্তিক সংগঠনগুলোর নেতারা হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জেএসএসের ওই হতকারিতামূলক সিদ্ধান্তকে রাঙ্গামাটিবাসী মেনে নেবে না। তারা জেএসএসের উদ্দেশে আগামী ১৯, ২০ ও ২১ জুনের অবরোধ প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় রাস্তায় নেমে জবাব দেয়া হবে। তারা বলেন, আমরা পবিত্র মাহে রমজানের কারণে হরতাল বা অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচি দিচ্ছি না। রমজান শেষে অবরোধকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লাগাতার অবরোধ বা হরতাল দিতে বাধ্য হবেন তারা।
পার্বত্য সম-অধিকার আন্দোলনের নেতা ঠিকাদার জাহাঙ্গীর কামাল সন্তু লারমার উদ্দেশে বলেন, এখনও সময় আছে, আপনার নেতাকর্মীদেরকে তিনদিনের অবরোধ প্রত্যাহার করে নিতে বলুন। তা না হলে ১৯ জুন সব অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য আপনি দায়ী থাকবেন। পাশাপাশি দায়ী থাকবে সরকার।