খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৭ জুন ২০১৬: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) নাজমুল করিম খান বলেছেন, ‘তনুর কাপড়ে সিআইডির ডিএনএ টেস্টে পাওয়া তিন পুরুষের শুক্রানুর সঙ্গে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ও ঘটনাস্থল, পারিপার্শ্বিক থেকে প্রাপ্ত আলামত মিললে হত্যারহস্য উন্মোচিত হবে।’
বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি।
তনুর লাশের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করার আড়াই মাস পর প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ ও ধর্ষণ প্রশ্নে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। প্রতিবেদনে মৃত্যুর আগে তনুর ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ হওয়ার কথা বলেছেন চিকিৎসকরা।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দলের প্রধান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কামদা প্রসাদ সাহা বলেছেন, ‘তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, মৃত্যুর পূর্বে তার সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স হয়েছে। যেহেতু দশ দিন পর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে, মৃতদেহ পচা ছিল, দশ দিন পর পচা গলা মৃতদেহ থেকে নতুন করে কোনো ইনজুরি বোঝা সম্ভব হয়নি।’
দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তেও সোহাগী জাহান তনুর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু বেরিয়ে না আসায় চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এসপি নাজমুল করিম খান। তিনি বলেন, ‘শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাননি চিকিৎসকরা, তাহলে ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ দেখলেন কীভাবে?’
এসপি জানান, নিজেদের ল্যাবে তনুর আলামতের ডিএনএ টেস্টে ‘যাদের বীর্যের’ উপস্থিতি পাওয়া গেছে তাদের সনাক্ত করতে সন্দেহভাজনদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। যা নিয়ে কয়েকবার সভা করে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত মিলিয়ে দেখা হয়েছে। আমাদের আগামী সপ্তাহের বৈঠকে তনু নিয়ে প্রাপ্ত সব তথ্য-উপাত্ত আবার পর্যালোচনা করা হবে। সেখানেই সন্দেহভাজনদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে নাজমুল করিম বলেন, ‘ঘটনাস্থলটি একটি স্পর্শকাতর জায়গা, যার সঙ্গে জাতীয় বিষয়ও জড়িত। হুট করে কিছু করা যাবে না। সব তথ্য উপাত্ত মিলিয়ে কাজটি এগিয়ে নিতে হচ্ছে। তবে হত্যারহস্য শিগগরিই বের করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।’
প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ রাতে তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় তনুর বাড়ির ২০ গজ দুরে জঙ্গলের মধ্যে থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের বাড়িতে তনুকে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় ২১ মার্চ তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২৯ মার্চ তনু হত্যা মামলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় সিআইডি ৫ সেনা সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।
তনুর প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয় ধর্ষণের আলামত নেই, মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের ভিত্তিতে ৩০ মার্চ বেলা পৌনে ১২টায় তনুর লাশ উত্তোলন করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করে ওই দিনই পুনরায় দাফন করা হয়।
১২ জুন সকালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন ময়নাতদন্তকারী বোর্ড কর্তৃপক্ষ। মৃত্যুর আগে ধর্ষণ নয় তার সঙ্গে ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মৃত্যুর কারণ জানতে পুলিশকে অধিকতর তদন্তের পরামর্শ দেন দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামদা প্রসাদ সাহা।
এদিকে মৃত্যুর ২৫ বছরের মধ্যে ময়না তদন্ত করলেও মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করা সম্ভব বলে জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাবেক পরামর্শক অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক। এ ছাড়া তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তার পরিবার।