Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

29kখোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৭ জুন ২০১৬: মাদারীপুরে কলেজশিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম পুলিশকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন। তাঁর দেওয়া অধিকাংশ তথ্যের সত্যতা খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। ফাহিমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা, বরিশাল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিযান চালালেও মামলার তদন্তে অগ্রগতি হয় এমন কিছু পাওয়া যায়নি। এমনকি হামলায় অংশ নেওয়া অপর দুজনের ব্যাপারে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েও পুলিশ কিছুই পায়নি।
মাদারীপুর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন।
এদিকে ফাহিমের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় মাদারীপুর মুখ্য বিচারিক হাকিম সায়েদুর রহমান রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাদারীপুর সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক বারেক করিম হাওলাদার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিলেন।
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল মোর্শেদ বলেছেন, ফাইজুল্লাহ ফাহিম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে সে আইএসের ধ্যানধারণায় উদ্বুদ্ধ নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে জড়িত। এ তথ্যও যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট বরিশাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। ফাইজুল্লাহর দেওয়া অধিকাংশ তথ্যই ছিল বিভ্রান্তিকর। মামলার তদন্তে অগ্রগতি হওয়ার মতো কোনো তথ্যই এখনো পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাদারীপুর সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক বারেক করিম হাওলাদার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে সঠিক কোনো তথ্য পুলিশকে দেয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, ফাইজুল্লাহকে নিয়ে বুধবার রাত তিনটা থেকে অভিযানে বের হয় মাদারীপুর সদর থানার পুলিশ। সদর থানার ওসি জিয়াউল মোর্শেদের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি দল অভিযানের অংশ হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যায়। অভিযানে কোনো অগ্রগতি না থাকায় বৃহস্পতিবার রাতে তাকে নিয়ে মাদারীপুরে ফিরে আসেন পুলিশ সদস্যরা। রাত ১০টা ৫০ মিনিটে এক দল পুলিশ ফাইজুল্লাকে নিয়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে যায়। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। জরুরি বিভাগের খাতায় ‘পাবলিক অ্যাসাল্ট’ হিসেবে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের কথা লেখা আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, হাতেনাতে ধরা পড়া জঙ্গি হামলাকারী ফায়জুল্লাহ ফাহিমের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কোনো জড়িত ব্যক্তিদের তথ্য বের করা সম্ভব হয়নি। তাঁর কাছে জানতে চাইলে সে পুলিশকে জানায়, সরকারকে বিব্রত করতে এই হামলা। ওই শিক্ষকের সঙ্গে তাঁদের কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। এমনকি তাঁকে চিনতেন না। তাঁদের কাছে নির্দেশ আসত, তাঁরা সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছেন। কারা নির্দেশদাতা, সেই বিষয়ে কোনো তথ্য আদায় করতে পারেনি পুলিশ।
তবে হামলাকারী ফাইজুল্লাহ ফাহিম তাঁর সঙ্গে থাকা অপর দুজনের নাম বললেও অভিযানে গিয়ে তাঁদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বুধবার হামলার সময় একটি চাপাতি ছাড়াও একটি গ্লাভসও উদ্ধার করা হয় ফাইজুল্লাহ ফাহিমের কাছ থেকে। তবে তাঁর কাছে থাকা ব্যাগটির সন্ধান পাওয়া যায়নি।
মাদারীপুর সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজের গণিত বিষয়ের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলার ঘটনায় মাদারীপুর সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক আয়ুব আলী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ছয় ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। মামলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বাদী উপপরিদর্শক আয়ুব আলী বলেন, গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সালমান তাকসিন ওরফে আবুল হোসেন ওরফে সালিম (১৯), শাহরিয়ার হাসান ওরফে পলাশ (২২), জাহিন (২৩), রায়হান (২৪) ও মেস্বাকে (২৪) আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমকে (১৯) প্রধান আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ বলেছে, ফাইজুল্লাহ জানিয়েছে হামলার দিন বুধবার সকাল ১০টায় তাঁরা মাদারীপুরের টেকেরহাট পৌঁছে নিজেদের ব্যবহৃত মোবাইলগুলো ফেলে দেন। পরে সেখান থেকে মাদারীপুরের একটি স্থানে জড়ো হয়। সেখানে বসে হামলার গোপন আলোচনা হয়। এরপর মাদারীপুর পুলিশ লাইনস মসজিদে জোহরের নামাজ পড়েন তাঁরা। নামাজ শেষে দুপুরের খাবার খাওয়ার পর হামলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ওই এলাকায় ঘুরতে থাকে।