খোলা বাজার২৪,শনিবার, ১৮ জুন ২০১৬: ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ধর্মগুরু স্বামী সেবানন্দকে হত্যার হুমকি দেওয়ার পর থেকে মিশনে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পূজা দিতে এসে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। প্রবেশ নিষেধ করায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন পূণ্যার্থীরা।
শনিবার দুপুর ২টার দিকে রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে দেখা যায়, রামকৃষ্ণ মিশনের বাইরে অনেকে পূজা অর্চনা করতে এসে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের মিশনের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কেউ কেউ ঢোকার জন্য অনুরোধ-উপরোধ করলে তাদের সঙ্গে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকে দুর্ব্যবহার করতেও দেখা গেল। এতে ক্ষোভ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন পূণ্যার্থীরা।
রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা নিরাপত্তা দিচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা মিশনের কোনো ছবি তুলতে দিচ্ছেন না। এছাড়া কোনো গণমাধ্যম কর্মীকে মিশনে ঢুকতে দেওয়া বা কারো সঙ্গে কথা বলতেও দিচ্ছেন না তারা। মিশনের পুরোহিতদের হয়ে পুলিশ সদস্যরা বলছেন তারা কারো সঙ্গে কথা বলতে চান না।
এছাড়া মিশনে আগের লাগানো সিসি ক্যামেরার সঙ্গে নতুন কিছু ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
গণমাধ্যমকর্মীর পরিচয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় ভেতরে ঢুকতে পেরে কথা হয় এসআই সুকান্ত বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, মিশনে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। উপর থেকে আমাদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এবং দর্শনার্থীদের প্রবেশ সংরক্ষণের জন্য। আপনারা জানেন আমরা আইনের সেবক। আইন সবার জন্য সমান।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, সকাল থেকে মিডিয়ার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। হুমকি দেওয়ার পর থেকেই মিশনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিচ্ছি এবং দেব।
সিসিটিভি ক্যামেরার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিশনের বাইরে ২টি এবং ভেতরে বেশ কয়েকটি সিসিটিভি রয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মিশনের চারদিকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
পুলিশের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পর নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে মিশনের পুরোহিত সর্বচৈতন্যের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
পূজা অর্চনা করতে এসে মিশনের ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন সন্দীপ রায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে ঢাকায় এসছেন। সন্দীপ পেশায় একজন ব্যবসায়ী। পূজা দিকে এসে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, অনেক আশা নিয়ে মিশনে এসেছিলাম। খুব খারাপ লাগছে পূজা না দিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে। এটা কোন ধরনের নিরাপত্তা! ভিতরেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না! আমরা এ ধরনের নিরাপত্তা চাই না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে সন্দীপ বলেন, গেইটে এসে দেখছি কোনো পুলিশ নেই। ভিতরে ৪ জন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। এখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষের আনাগোনা। এই কয়েকজন পুলিশ সদস্য কী নিরাপত্তা দেবে! এটা কোনো নিরাপত্তা নয়। এটা হয়রানি।
মিশনের ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকাদের আরেকজন অমূল সরকার, রেখা পোদ্দার, তরুণ কর্মকারসহ আরো বেশ কয়েকজন পূণ্যার্থী। তাদের সবার একই অভিযোগ। মিশনের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
তারা বলেন, নিরাপত্তা তো আমাদের জন্যই। কিন্তু আমাদেরকে কেন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না? গেইট বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রত্যেক মানুষের স্বাধীনভাবে বাঁচার এবং স্ব স্ব ধর্ম পালনের অধিকার আছে। আমাদের অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
মিশনে প্রবেশ করতে চাওয়ায় পুলিশ তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
মিশনের বিপরীত পাশেই রয়েছে একটি কাপড়ের দোকান। দোকানের কর্মচারী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, আমার বাড়ি বরিশাল। এই দোকানে ৪ মাস হলো কাজ নিয়েছি। হুমকির ব্যাপারে শুনেছি।
হুমকির বিষয়ে আব্দুল্লাহ বলেন, এক সপ্তাহ আগেও এখানে গেইট বন্ধ রাখতে দেখিনি। এখন সারাদিনই গেইট বন্ধ থাকে এবং ভেতরে পুলিশও দেখি। সবসময় একজন গেইটে দাঁড়িয়ে থাকে। সকাল থেকে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ভেতরে একটি হাসপাতাল ও স্কুল রয়েছে। স্কুল মনে হয় বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ ছেলে মেয়েদের আসতে দেখি না।
এদিকে রামকৃষ্ণ মিশনের সহসম্পাদক স্বামী সেবানন্দকে চিঠি পাঠিয়ে হত্যার হুমকিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার বাংলা দৈনিক ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র এক প্রতিবেদনে তাদের এ উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের সহসম্পাদক স্বামী সেবানন্দকে আইএসের খুনের হুমকির ঘটনায় বাংলাদেশে যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
গত ১৬ জুন ইসলামিক স্টেটসের (আইএস) পক্ষে এ বি সিদ্দিক নামের এক ব্যক্তির লেখা একটি চিঠি ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে আসে। তাতে মিশনের সহসম্পাদককে অবিলম্বে ভারতে চলে যেতে বলা হয়। না হলে ২০ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে কুপিয়ে হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয় তাকে। এ ঘটনায় মিশনের তরফে ঢাকার ওয়ারী থানায় ডায়েরি করে চিঠির একটি অনুলিপি তুলে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ রামকৃষ্ণ মিশনের পাশাপাশি ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নিরাপত্তাও জোরদার করে।