Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

27খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২১ জুন ২০১৬: মার্কিন মুলুকে স্মরণকালের ভয়াবহতম হামলা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ১১ সেপ্টেম্বরের সেই হামলায় সৌদি সম্পৃক্ততার অভিযোগ আগেই ছিল। এবার নতুন করে ‘রহস্যময় সৌদি ইমামকে’ টুইন টাওয়ার ধ্বংসের হোতা বলে বর্ণনা করছে মার্কিন তদন্তকারী দল।
সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের ৯/১১ সম্পর্কিত এক গোপন রিপোর্ট প্রকাশ করার পর নতুন করে আলোচনাটি সামনে এসেছে বলে জানিয়েছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের সিংহভাগ (২৮ পৃষ্ঠা) জুড়ে হামলায় সম্পৃক্ত ‘রহস্যময় সৌদি ইমামের’ জবানবন্দি আছে।
মার্কিন কংগ্রেসের সচিবের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ২০০৪ সালের ফেব্র“য়ারির এক রাতে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের এক বিলাসবহুল প্রাসাদে দুজন আমেরিকান তদন্তকারী ৯/১১ হামলার অন্যতম সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেই জিজ্ঞাসাবাদে হামলায় সৌদি সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে। তবে ভয়াবহ ওই হামলায় কোনো সৌদি কূটনীতিক সরাসরি জড়িত ছিলেন না বলে উল্লেখ করা আছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে রহস্যজনক ওই ইমামের নাম ফাহাদ আল থুমেরি বলে উল্লেখ করা আছে। তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন। ওই মসজিদেই আবার বিমান ছিনতাইকারীদের মধ্যে অন্তত দুজন নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন।
প্রতিবেদনে জাতীয় তদন্ত কমিশনের ‘৯/১১ তদন্তদলের সদস্যরা জানান, ২০০৪ সালে প্রথম চার ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে সাবেক সৌদি কর্মকর্তা থুমেরি বিমান ছিনতাইকারীদের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেন। তাঁকে এরপর ওই বিমান ছিনতাইকারীদের সঙ্গে তাঁর বারবার হেঁটে যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হয়েছিল। কিন্তু এরপরও হামলায় সম্পৃক্ততার খবর অস্বীকার করেন তিনি।
থুমেরি বলেছিলেন, এটি ভুল রেকর্ড বা তাঁর দেশের ওপর মিথ্যা অভিযোগে কলঙ্ক আরোপের চেষ্টা করা হচ্ছে। ওই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তারা তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে থুমেরি সম্ভবত মিথ্যা বলছেন লিখে প্রতিবেদন জমা দেন।
এরপর ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে মার্কিন তদন্তদল আবারও সৌদি আরবে থুমেরির সঙ্গে দেখা করে। এবার সৌদি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তাঁকে ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মার্কিন তদন্ত প্রতিবেদনের বর্ণনায় এবার থুমেরি ছিলেন অনেকটাই নমনীয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দুই ছিনতাইকারীকে চিনতেন বলে স্বীকার করেন। তবে তাঁদের সঙ্গে হামলার বিষয়ে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে দাবি করেন তিনি।
এরপর ২০০৬ সালে মার্কিন সরকারি তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া প্রতিবেদনে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলায় থুমেরি বা অন্য কোনো সৌদি কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রে সহায়তা করেছিলেন বলে নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়।
তবে তদন্ত কমিশনের একাধিক সদস্য উল্লেখ করেন, সৌদি কর্মকর্তারা ছিনতাইকারীদের সাহায্য করেছিলেন এমন সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করে দেওয়া যায় না। তাঁরা আরো জানিয়েছেন, কমিশনকে খুব কম সময়ের মধ্যে কাজ করতে হয়েছিল এবং প্রতিটি তথ্য নিয়েই তারা বিশদ তদন্ত করে দেখতে পারেনি।
এর আগে হামলার পর ২০০২ সালে সংসদীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি উঠেছে। কারণ ওই অংশে সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রে সৌদিদের ভূমিকা থাকার সম্ভাবনা আলোচনা করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন সিনেটর ইয়াং গার্নার নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, প্রতিবেদনের ওই অংশের তথ্যগুলোর মধ্যে থুমেরি এবং দুই ছিনতাইকারীর সম্পর্কের বিষয়টির উত্তর জানাই সবচেয়ে জটিল।
কেউ কেউ এখনো বিশ্বাস করেন, যদি ওই ষড়যন্ত্রে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা) সৌদি সরকারের আদৌ কোনো ভূমিকা থাকে, তার দেখভাল সম্ভবত থুমেরি করতেন।
এই বিষয়ে হামলার পরপরই সৌদি সরকারকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন প্রভাবশালী মার্কিন সিনেটর গার্নার। তবে বছরের পর বছর ধরে চলা তদন্তে সৌদি সরকারের জড়িত থাকার কোনো নিশ্চিত প্রমাণ না পাওয়ায় সৌদি সরকার যুক্তি দেখায় যে, মার্কিন তদন্তদল ‘অন্ধ অনুমান এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বে’র শিকার হয়েছে।
তবে সিনেটর গার্নার জানান, মার্কিনিরা বিষয়টি নিয়ে সচেতন। হামলার ১৫ বছর পরে মার্কিন সিনেট গত ২৮ মে সর্বসম্মতিক্রমে এমন এক বিল পাস করে, যা ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলায় যে কোনোভাবে জড়িত থাকার দায়ে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা সহজতর হবে। প্রতিনিধি পরিষদে আগামী সপ্তাহে বিলটি উত্থাপিত হতে পারে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রোববার সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে ২৮ পৃষ্ঠার বিষয়বস্তু নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হয়েছে এবং এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে ওই সব তদন্তে উদঘাটিত হয়েছে। এরপরও সৌদি সরকারের জড়িত থাকার সম্ভাবনার প্রশ্নটি বিভিন্ন উৎস থেকে উঠে এসেছে।
ওয়াশিংটনে ওই সম্মেলনে আদেল আল জুবায়ের বলেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সব সময়ই সোচ্চার এবং কঠোর সৌদি আরব। বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই স্পর্শকাতর বিষয়ে তো বটেই। আর তাই ঘটনার পরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্তও করেছিল সৌদি আরব। যাতে ওই হামলায় সৌদি সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে বা জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তাদের দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আল-কায়েদাকে অর্থ জুগিয়েছিলেন বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।