Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

42খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২২ জুন ২০১৬: রাজধানীর বাস কাউন্টারগুলো থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ৬০টিরও বেশি রুটে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। তাই ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে বুধবার সকাল থেকেই ঘরমুখো টিকিট প্রত্যাশীদের লাইন দেখা যায় গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে। কাউন্টারে এসে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও অনেকে পাচ্ছেন না কাক্সিক্ষত টিকিটটি। আবার দালালদের হাতে টাকা দিয়ে কেউ কেউ আগেভাগেই পেয়ে যাচ্ছেন টিকিট। ভুগতে হচ্ছে অপেক্ষার সারিতে দাঁড়ানো টিকিট প্রত্যাশীদের। গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল সরেজমিনে ঘুরে বুধবার দেখা গেল এই চিত্র।

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো কারণ ছাড়াই প্রতিটি টিকিটে নিয়মিত ভাড়া থেকে ১০০-২০০ টাকা বেশি নিচ্ছে পরিবহন কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া প্রথমদিন যাত্রীদের ছোট লাইন থাকলেও অনেকক্ষণ দেরি করে দেওয়া হচ্ছে টিকিট। দালালদের প্রভাবের অভিযোগও উঠলো যাত্রীদের মধ্য থেকে। এছাড়া কাউন্টার কর্তৃপক্ষ কৃত্রিমভাবে টিকিটের সংকট দেখাচ্ছেন বলেও অনেকে অভিযোগ করেন।
মো. রবিউল ইসলাম সরকারি তিতুমীর কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ কাটাতে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টারে এসেছেন অগ্রিম টিকিট কিনতে। কিন্তু এসে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ।
রবিউল বলেন, সকাল ৮টায় এসেছি, ২টি টিকিট কিনতে পেরেছি দুপুর ১টায়। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত যাত্রীদের তেমন চাপ দেখা যায়নি, তারপরও কর্তৃপক্ষ দেরি করে টিকিট দিচ্ছে। আর তার সঙ্গে দেখাছে টিকিট সংকট।
তিনি বলেন, ঢাকা-গোপালগঞ্জের নিয়মিত ভাড়া ছিল ৩৫০ টাকা কিন্তু ঈদের কারণ দেখিয়ে প্রতি টিকিটে ২০০ টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছে ৫৫০ টাকা।
সেবা গ্রীনলাইন পরিবহনের কাউন্টারে নড়াইলের অগ্রিম টিকিট কিনতে আসা যাত্রী মো সুজন বলেন, সকালে এসেও এখন পর্যন্ত টিকেট কিনতে পারিনি। লাইন ছোট, তারপরও কেন তারা টিকিট দিতে দেরি করছেন, বুঝছি না। আর টিকিট প্রতি বাড়তি নিচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি।
এদিকে অনেকে টিকিট কিনতে এসে বিপাকে পড়ছেন দালালদের কারণে। তারা যাত্রীদের থেকে টাকা নিয়ে লাইন ভেঙে টিকিট এনে দিচ্ছে। এদের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অপেক্ষার সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য যাত্রীদের।
এ সম্পর্কে যাত্রী মামুন মিয়া বলেন, সকাল থেকে দাঁড়িয়ে টিকিট পেয়েছি দুপুর ২টায়। কিন্তু দালালদের কারণে অনেকে লাইনে না দাঁড়িয়েই পেয়ে যাচ্ছেন টিকিট। আর ৫টি টিকেট চাওয়ার পর আমাকে দিয়েছে ৩টি। অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথমদিনই টিকিট নেই!
ঃরপশবঃ-ংতবে যাত্রীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি কোনো ধরনের অনিয়ম হচ্ছে না। স্বাভাবিক নিয়মেই টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
এ সম্পর্কে সেবা গ্রীন লাইন পরিবহনের গাবতলী আন্তঃজেলা বাসস্ট্যান্ডের কাউন্টার ম্যানেজার মনোজ কুমার সাহা বলেন, আমরা স্বাভাবিক নিয়মে টিকিট বিক্রি করছি। আমাদের কাউন্টারে কোনো ধরনের অনিয়ম হচ্ছে না।
টিকিটের কৃত্রিম সঙ্কট ও বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের তো ঢাকায় আরো কাউন্টার আছে। তাই সব কাউন্টারে সীমিত পরিমাণে টিকিট রাখা হয়েছে। পরে আস্তে আস্তে টিকিটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। আর ঈদ উপলক্ষে সব পরিবহনেই কিছু বাড়তি ভাড়া নেয়। আমরাও নিচ্ছি।
গোল্ডেন লাইন পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের কর্মকর্তা মো. হানিফ বলেন, ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারব না। কর্তৃপক্ষ আমাদের যেভাবে বলেছে আমরা সেইভাবে টিকিট বিক্রি করছি।
দালালদের কাছে টিকিট বিক্রি করছে কাউন্টার কর্তৃপক্ষ- এ অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, কে দালাল, কে যাত্রী আমারা কীভাবে চিনব! অনেক সময় দুয়েকজন লাইন না মেনে চলে আসে, তাদের কাছে আমরা টিকিট বিক্রি করি না। কিন্তু তারা দালাল না যাত্রী তা বলতে পারব না।
এতসব অনিয়ম, অভিযোগ আর অপেক্ষার পরও টিকিট হাতে পাওয়া মানুষগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন বিশ্বজয় করে ফেলেছেন। বাড়ি ফিরবেন, স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন, সে আনন্দে এখন থেকেই উদ্ভাসিত হয়ে উঠছিল তাদের মুখ।