খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৭ জুন ২০১৬: টাইব্রেকারে আরতুরো ভিদালের নেওয়া প্রথম শট ফিরিয়ে দিলেন সার্জিও রোমেরো। পুরো আর্জেন্টিনা তখন তাঁর দিকে তাকিয়ে। লিওনেল মেসি—আর্জেন্টিনা অধিনায়ক, আর্জেন্টিনার স্বপ্নসারথি। যাঁর পায়ে ২৩ বছরের শিরোপা-খরা ঘোচানোর স্বপ্ন দেখছিল আকাশি-নীলরা। টাইব্রেকারের শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর চেয়ে বড় ভরসা আর কে হতে পারে?
আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নিতেই এসেছিলেন মেসি। গুটি গুটি পায়ে পেনাল্টি স্পটের দিকে গেলেন। বাকিটুকু? হওয়ার কথা ছিল ইতিহাসের পথে যাত্রা, হয়ে গেল দুঃস্বপ্ন। ছোট্ট দৌড়ে যে শটটি নিলেন মেসি, সেটি উড়ে গেল বারের অনেক ওপর দিয়ে!
শুধু এগিয়ে যাওয়ার সুবিধা হারানোর জন্য নয়, মেসির ওই শট মানসিকভাবেও আর্জেন্টিনাকে দিয়ে গেছে বড় এক ধাক্কা। যে ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারল না আলবিসেলেস্তেরা। লুকাস বিলিয়াও গোল করতে ব্যর্থ হওয়ায় শতবার্ষিকী কোপা আমেরিকার গোলশূন্য ফাইনালে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে জিতে গেল চিলি।
দে জা ভ্যু? ঠিক যেন গতবারের কোপা আমেরিকার মতো। গোলশূন্য ড্র ফাইনাল শেষে টাইব্রেকারে চিলির উচ্ছ্বাস।
দে জা ভ্যু মেসির জন্যও। আর্জেন্টিনার জার্সিতে আরও একটি ফাইনাল, টানা তিন বছরের তৃতীয়বার। কিন্তু আরও একবার হতাশা নিয়েই ফিরতে হচ্ছে এখনো আন্তর্জাতিক শিরোপা ধাঁধার সমাধান খোঁজা মেসিকে। তাতে তাঁর দায়ও কি কম? পেনাল্টি মিস করেছেন বলে নয়, ম্যাচেও বা মেসিকে ‘মেসির মতো’ করে দেখা গেল কই!
মেট লাইফ স্টেডিয়ামে আজ দুই দলে তারকার অভাব ছিল না, কিন্তু ম্যাচের শুরু থেকেই সবটুকু আলো কেড়ে নিলেন রেফারি। সেটি আবার খেলায় ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা যার সবচেয়ে বেশি, সেই মেসিই পুরো সময় ধরে হয়ে রইলেন অনেকটা নিষ্প্রভ। টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত খেলেছেন, চোট নিয়েও আলো ছড়িয়ে গেছেন। ৫ গোলের পাশে চার অ্যাসিস্ট। গোলগুলোও কী দুর্দান্ত! কিন্তু আজ সবচেয়ে বড় উপলক্ষের দিনে আর জ্বলে উঠতে পারলেন না মেসি। অথচ আজই তাঁকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল আর্জেন্টিনার।
ইস্ট রাদারফোর্ডের প্রায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় হাঁসফাঁস করতে হয়েছে, দুই দলই ১০ জনের হয়ে পড়ায় দৌড়াতে হয়েছে অনেক বেশি। এত কঠিন এক মৌসুমের পর ১২০ মিনিটের ফাইনালে ১০ জন নিয়ে খেলা কঠিনই।
কিন্তু তাতেও কি মেসিকে নিয়ে আক্ষেপ কমছে? পরিস্থিতি তো দুই দলের জন্যই একই ছিল, কিন্তু মেসিকেই যেন সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করল সেটি। ম্যাচের শেষ দিকের কিছু সময় আর অতিরিক্ত সময়ের কিছুক্ষণ ছাড়া ম্যাচজুড়ে অনেকটা সময়ই যেন হেঁটে হেঁটে কাটিয়েছেন মেসি। যেন আগের ফাইনালগুলোর মতো। ২০১৪ বিশ্বকাপ, ২০১৫ কোপা আমেরিকা, ২০১৬ শতবার্ষিকী কোপা আমেরিকাৃবড় উপলক্ষগুলোতে দর্শক হয়েই রইলেন মেসি।
রেকর্ডও তাই বলে। আর্জেন্টিনার হয়ে বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালেই গোল করতে পারেননি মেসি। কী বলবেন একে? চাপ? হয়তো! হয়তো কোনো অভিশাপ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে মেসিকে।
এবারের পর থেকে তাড়িয়ে বেড়াবে দুঃস্বপ্নও। টাইব্রেকার চলার সময়েই শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন, চিলির জয়োৎসবের সময়ও ডাগআউটে গিয়ে বসে রইলেন। সেই শূন্য, হতবাক দৃষ্টি। যেন প্রাণপণে প্রার্থনা করছেন, একটু আগে যা ঘটল, তা স্রেফ একটা দুঃস্বপ্নই হয়তো। একটু পর ঘুম থেকে উঠলেই যেন দেখতে পান সুন্দর সোনালি সকাল।
কিন্তু সেটি হওয়ার নয়। বাস্তবতা এটাই যে আরও একবার জাতীয় দলের হয়ে ব্যর্থ মেসি। এবং এবার তাঁর কারণেই ব্যর্থ আর্জেন্টিনা। খলনায়ক শব্দটা একটু কঠোর হয়ে যায়, কিন্তু আর্জেন্টিনার এই হারের দায় তো মেসিরই।