খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০১৬: ট্যানারি কারাখানাকে প্রতিদিন জরিমানা হিসেবে ৫০ হাজার টাকা করে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হাইকোর্টের রায় ১৭ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছেন চেম্বার বিচারপতি। একইসঙ্গে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত এই আদেশ দেন।
আদালতে ট্যানারি মালিকদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
এর আগে গতকাল সোমবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল দায়ের করেন ট্যানারি মালিকরা।
গত ১৬ জুন আদালতের আদেশ অমান্য করায় বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের বেঞ্চ ১৫৪ ট্যানারি কারাখানাকে প্রতিদিন জরিমানা হিসেবে ৫০ হাজার টাকা করে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশ দেন।
রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, যত দিন পর্যন্ত কারখানা সরাবে না, তত দিন পর্যন্ত পরিবেশের ক্ষতি হিসেবে ট্যানারিকে সরকারি কোষাগারে ৫০ হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে।
আদালতের এ আদেশ সময়ে সময়ে মনিটরিং করে শিল্প সচিব ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন আকারে জানাবেন। একই সময়ের মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানরির কারণে বুড়িগঙ্গায় কী পরিমাণ পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, তা নির্ণয় করে পরিবেশ সচিবকে আদালতকে প্রতিবেদন আকার জানাতে হবে।
আদালতে শিল্প সচিবের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রইস উদ্দিন।
এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০১ সালে ট্যানারি শিল্প হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। দীর্ঘদিন ধরে ওই আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় অন্য এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ২৪ ফেব্র“য়ারির মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প অন্যত্র সরিয়ে নিতে ২০০৯ সালের ২৩ জুন হাইকোর্ট ফের নির্দেশ দেন। সরকার পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরে ওই সময়সীমা কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়।
এ সময়ের মধ্যেও স্থানান্তর না হওয়ায় আদালত অবমাননার মামলা করেন পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মনজিল মোরসেদ। এ মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে গত বছরের ২১ এপ্রিল আদালতের তলবে হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন শিল্প সচিব।
এরপরও ওই ১০ প্রতিষ্ঠান হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ফের আদালত অবমাননার অভিযোগে আরো একটি আবেদন করেন মনজিল মোরসেদ। এর মধ্যে ১৩ এপ্রিল রাজধানীর হাজারীবাগে এখনো যেসব ট্যানারি ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের তালিকা চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। তিন সপ্তাহের মধ্যে শিল্প সচিবকে এই তালিকা বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করতে হবে।
আদালতের এ আদেশ অনুসারে শিল্প সচিবের পক্ষে আইনজীবী রইস উদ্দিন ১৫৫টি ট্যানারির তালিকা হস্তান্তর করেন। এর মধ্যে মাত্র একটি ট্যানারি স্থানান্তর করে। পরে আদালত ১৫৪ ট্যানারি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।