খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০১৬: তাপস কুমার, নাটোর: চিকিৎসক ও জনবল সংকট, পরাতন যন্ত্রপাতির ব্যবহারসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল। ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করা ১০০শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি নামে মাত্র আধুনিক সদর হাসপাতাল হলেও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে হস্তক্ষেপের অভাবে দায়সারা কাজের মধ্য দিয়ে চলছে হাসপাতালের সামগ্রিক কার্যক্রম।
ফলে, কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার হাজার হাজার মানুষ। জেলা সদরের এই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চলমান চিকিৎসক ও জনবল সংকটসহ হ-য-ব-র-ল অবস্থা যেন দেখার কেউ নেই। এখানে না আছে আধুনিক যন্ত্রপাতি-সরঞ্জামাদি, না আছে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা। উন্নত ও ভাল মানের সেবা প্রদানে নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ অন্যান্য শূন্যপদে কর্মচারী নিয়োগের বিকল্প নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে বড় ধরনের কোন অপারেশন করা হয়না। রোগীর অবস্থা কিঞ্চিত ঝুকিপূর্ন হলেই তাদের রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালসহ অন্যত্র রেফার্ড করা হয়। সরকার অনুমোদিত ডাক্তারদের অর্ধেক পদ শূন্য পড়ে আছে এখানে। ফলে, সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ন বিভাগ থেকে বিনা চিকিৎসায় ফিরতে হচ্ছে রোগীদের। চিকিৎসার্থে বিভিন্ন ক্লিনিকগুলোতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে রোগীরা বাইরে থেকে প্রয়োজনী টেস্ট করিয়ে নেন। হাসপাতালে যে কয়টি হাতেগোনা মেশিন আছে, তা দিয়ে খুব অল্প সংখ্যক রোগীরাই সেবা পান। হাসপাতালটি চালু হওয়ার পরে যেসকল সরকারি চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাদের অধিকাংশই বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তাদের স্থলে নতুন চিকিৎসক না আসায় চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতা বেড়েছে অনেক গুন। তবে, চিকিৎসকের অভাব থাকলেও রোগীদের সেবা প্রদানে কোন সমস্যা হয়না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে অনুমোদিত ৩৩জন চিকিৎসকের মধ্যে বর্তমানে ১৭জন এবং মঞ্জুরীকৃত ৫৫জন নার্সের মধ্যে ৫৩জন কর্মরত আছেন। এছাড়া, হাসপাতালে ৩য় শ্রেণীর ২৫ জন কর্মচারীর মধ্যে ২০জন কর্মরত থাকলেও ৪র্থ শ্রেণীর ৬৫জন কর্মচারীর স্থলে কর্মরত আছেন মাত্র ৪২জন। হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩জনের পরিবর্তে মাত্র ১জন দায়িত্ব পালন করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন ছাড়াও দায়িত্ব বহির্ভুত কাজ করতে হয়। অধিকাংশ সময়ই দুজনের ডিউটি একজনকেই করতে হয়।
অন্যদিকে, দালালের উপদ্রবে ভোগান্তির শেষ নেই দুরদুরান্ত ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের । সবকিছু ঠিকঠাক বুঝে নেওয়ার আগেই দালালের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছেন রোগীর সাথে আসা লোকজন। হাসপাতালের নানা সমস্যার সুযোগ কাছে লাগিয়ে প্রতারনার ফাঁদে ফেলে রোগীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সক্রিয় দালাল চক্র। বিভিন্ন টেস্ট করিয়ে নেওয়া, ক্লিনিকে ভর্তি করানোর নামে রোগীদেরকে সর্বশান্ত করায় ব্যস্ত চিহ্নিত দালাল চক্রটি। দালাল চক্রটি মৃত ব্যক্তির কাছ খেকেও টাকা নিতে ছাড়ছে না। শাকিল নামে দালাল চক্রের এক সদস্যের বিরুদ্ধে গত ১৭জুন হাসপাতালে বাইরে থেকে মেশিন এনে ইসিজি টেস্ট করিয়ে সাপে কাটা মৃত ব্যক্তির আতœীয়দের কাছ থেকে টাকার অভিযোগ রয়েছে। তবে, পুলিশ প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও তার দু’চার দিন পর দালালের উৎপাত আগের মতই চলতে থাকে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
সিভিল সার্জন আজিজুল ইসলাম জানান, দালাল চক্র নিমূলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বরাবরই সময় আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বিষয়টি আমরা উপস্থাপন করে আসছি। হাসপাতালে দালালের উপদ্রব থেকে রেহাই পেতে প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতর্ৃৃবৃন্দকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
পুলিশ সুপার শ্যমাল কুমার মুখার্জী জানান, হাসপাতালে দালালের উপদ্রব ঠেকাতে মাঝে মধ্যেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এছাড়া, লিখিত কিংবা মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।