খোলা বাজার২৪, শনিবার, ০২ জুলাই ২০১৬: গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁর জিম্মি সঙ্কট বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘এক জঘন্যতম কালো অধ্যায়’ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, মানুষ জিম্মি করে হতাহতের এ ঘটনায় সারা জাতি হতভম্ব ও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তাই সরকার এখন যদি এই মানবতাবিরোধী উগ্রবাদীদের দমন না করে তাদের নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের খেলায় মেতে থাকেন, তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।
শুক্রবার রাতে গুলশানের রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের মহাসচিবের এ বিবৃতি সাংবাদিকদের পড়ে শোনান।
বিবৃতিতে গুলশানের ওই রেস্টুরেন্টে মানুষ জিম্মি করে রক্তপাতের নজীরবিহীন ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘বছরব্যাপী জঙ্গিবাদী দুষ্কৃতিকারীরা দেশজুড়ে কম্পোজিট সন্ত্রাসের মাধ্যমে রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে। গতরাতে (শুক্রবার) গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জন মানুষকে জিম্মি করে দুষ্কৃতিকারীরা। এ ঘটনা দেশের ইতিহাসে এক জঘন্যতম কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জঙ্গিবাদের এই পৈশাচিক আগ্রাসনে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও নানা সম্প্রদায়ের মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমান সরকার শাসনযন্ত্রের দমনক্ষমতা বিরোধী দলের বিরুদ্ধেই কাজে লাগিয়ে যাচ্ছে। ফলে, জঙ্গিবাদ আরো উৎসাহিত হয়ে তাদের হিংস্র আচরণ তীব্রতর করেছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নাৎসীদের পন্থায় ডিক্টেটরি শাসন দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যেই বিরোধী দলের প্রতি সব সময়ই অসহিষ্ণু সরকার। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে এবং ক্রসফায়ারের ভয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকছে। সরকারের দৃষ্টি যেহেতু বিরোধী দলের দিকে, সেহেতু উগ্রবাদীরা নির্বিঘেœ তাদের সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মধ্যযুগীয় বর্বরতার প্রতীক এই উগ্রবাদী জঙ্গিদের সন্ত্রাসের সংগঠন ও পরিকাঠামো নিশ্চিহ্ন করতে হলে দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতীব জরুরি। আর এই জরুরি কাজটি সরকারকেই করতে হবে। সরকার এখন যদি এই মানবতাবিরোধী উগ্রবাদীদের নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের খেলায় মেতে থাকেন, তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জঙ্গি দমনের নামে সপ্তাহব্যাপী সরকারের পুলিশী অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল, রাজনৈতিক এবং বিএনপিকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়ানোর কারসাজি। কিন্তু গতকাল (শুক্রবার) সকালে ঝিনাইদহে হিন্দু সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে কুপিয়ে হত্যা এবং গতরাতে গুলশানে একটি রেস্টুরেন্টে মানুষ জিম্মি করে নজিরবিহীন হতাহতের ঘটনায় সারাজাতি হতভম্ব ও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সরকার নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে গিয়ে দেশের কাঠামোর মূলেই কুঠারাঘাত করছে।’
তিনি হিন্দু সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসের আত্মার শান্তি কামনা ও শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এছাড়া গত রাতে (শুক্রবার) গুলশানে উগ্রবাদীদের দ্বারা মানুষ জিম্মির ঘটনায় রক্তাক্ত পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান বিএনপির মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল রক্তাক্ত ঘটনায় কর্তব্য পালন করতে গিয়ে নিহত পুলিশ সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তাদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-সম্পাদক এসএম আশরাফুর রহমান আশরাফ, ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।