খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১১ জুলাই ২০১৬: গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁ থেকে জব্দ করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ৭৪ ধরনের আলামত। আদালতের অনুমতি নিয়ে এসব আলামত শিগগিরই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়ার পর পুলিশের ‘হেফাজতে’ থাকা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসানাত করিমের কাছ থেকেও গোয়েন্দারা গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন। এ ছাড়া বাবুর্চি সাইফুল ইসলামের ব্যাপারেও বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঠিক আগমুহূর্তে রেস্তোরাঁর সামনের সড়কে তিন যুবককে সন্দেহজনকভাবে ঘুরতে দেখা গেছে। অস্ত্রধারী জঙ্গিরা রেস্তোরাঁটিতে ঢুকেই যখন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, তখনও ওই যুবকরা সেখানে অবস্থান করছিল।
ঘটনাস্থলে প্রথম দফায় পুলিশ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা উধাও হয়ে যায়। এখন তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ধারণা করা হচ্ছে, হলি আর্টিসানে হামলায় জড়িত পাঁচ জঙ্গির ‘ব্যাকআপ’ পার্টি হিসেবে তারা সেখানে উপস্থিত ছিল। এ ছাড়া হলি আর্টিসানের ভেতরে ও আশপাশের বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দারা অনেক অজানা ক্লু পেয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত হওয়া তিন যুবকের গতিবিধি বেশ সন্দেহজনক। দূরে অবস্থান থাকলেও তাদের দৃষ্টি ছিল হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁর দিকে। রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারী জঙ্গিরা ঢুকেই প্রথম যে বিস্ফোরণ ঘটায়, তখন গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৭৯ নম্বর সড়কসহ আশপাশের সড়কগুলোতে পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিলেও ওই তিনজনকে অনেকটা নির্লিপ্ত দেখা গেছে। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে ৭৯ নম্বর সড়কে পুলিশ যাওয়ার পরও তাদের উপস্থিতি দেখা গেছে। একপর্যায়ে তারা কোনো ধরনের দৌড়াদৌড়ি না করে ধীরগতিতে ক্যামেরার আড়ালে চলে যায়। তাদের পরনে শার্ট-প্যান্ট দেখা গেছে।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, তারা সন্দেহ করছেন, তিন যুবক রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পুরো ঘটনাটি তদারকির দায়িত্বে ছিল। এরাও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হতে পারে। এ জন্য তাদের চিহ্নিত করতে একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, জব্দ করা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু সন্দেহজনক বিষয় পাওয়া গেছে। এখনও অনেক ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তদন্তে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে এগুলো মেলানো হচ্ছে। এত বড় ঘটনার বিষয়ে দ্রুতই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না।
এদিকে কমান্ডো অভিযানে হলি আর্টিসান জঙ্গিমুক্ত করার পর পুলিশের ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে ৭৪ ধরনের আলামত জব্দ করে। এসব আলামতের মধ্যে জিম্মি অবস্থায় নিহত ব্যক্তিদের পোশাক, নিহত জঙ্গিদের পোশাক, ব্যাগ, অস্ত্র, বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন, নানা ধরনের ছাপচিত্রের নমুনাও রয়েছে। এসব আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য তা শিগগিরই সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আলামতগুলো পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছিলেন, কারিগরি পরীক্ষার জন্য জব্দ করা বেশ কিছু আলামতের নমুনা যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর বা ভারতের ল্যাবে পাঠানো হতে পারে। তবে গতকাল পুলিশের একজন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী সব আলামতই সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হবে। প্রয়োজন হলে এসব আলামতের নমুনা বিদেশি ল্যাবে যাবে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, আলামত হিসেবে জব্দ করা মোবাইল ফোনগুলো জিম্মি অবস্থায় নিহত ব্যক্তিদের। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, হামলাকারী জঙ্গিরা জিম্মিদের ফোন ব্যবহার করে কথা বলেছে। ঘটনাস্থলে হামলাকারীদের কোনো মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে কি-না তা যাচাই করা হচ্ছে।
হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় কমান্ডো অভিযানের আগমুহূর্তে জিম্মি অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রকৌশলী হাসানাত রেজা করিমকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। জিম্মি অবস্থায় জঙ্গিরা তার হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তা স্বীকারও করেছেন। বলেছেন, তার সঙ্গে স্ত্রী, ছেলেমেয়েও জিম্মি ছিল। ওই অবস্থায় তাদের প্রাণ রক্ষা করতে জঙ্গিদের নির্দেশ মেনেছেন তিনি। তার কাছে অস্ত্র দিয়ে তাকে ছাদে নেওয়া হয়। এ ছাড়া তিনি রেস্তোরাঁয় জঙ্গিদের নানা কার্যক্রম ও কথোপকথনের বিষয়েও বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, হাসানাত করিমের তথ্যে অসংলগ্নতা রয়েছে। এগুলো যাচাই করা হচ্ছে।