Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

29খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১১ জুলাই ২০১৬: ভারতের ইসলামী বক্তা জাকির নায়েকের পিস টিভির ডাউন লিংকের অনুমতি বাতিলের পর বাংলাদেশে অনলাইন ও সোশাল মিডিয়ায়ও এই টিভির সম্প্রচার বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানিয়েছেন, শিগগিরই টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, “সোমবার নির্দেশনা পাওয়ামাত্র অনলাইনে পিস টিভির লাইভ, ইউটিউব বা ফেইসবুকের ইউআরএল নির্দিষ্ট করে বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ‘জঙ্গিবাদে উৎসাহ যোগানোর’ অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশে তার পিস টিভির ডাউন লিংকের অনুমতি বাতিল করে সরকার।
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরদিন সোমবার তথ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এতে বলা হয়, “মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ডাউন লিংকের শর্ত ভঙ্গ করায় বিদেশি ফ্রি-টু-এয়ার টিভি চ্যানেল পিস টিভির ডাউন লিংকের অনুমতি বাতিল করা হল।”
সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ভেতরে পিস টিভির সব ধরনের সম্প্রচার বন্ধের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য অধিদপ্তর, বিটিভি ও কেবল অপারেটরদের সংগঠন কোয়াবকেও পাঠানো হয়েছে এই প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি।
অনুলিপি পাঠানো হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসিতে।
টিভিতে সম্প্রচার বন্ধ হলেও ইন্টারনেটে বেশ কয়েকটি সাইটে এই টিভি লাইভ সম্প্রচার করে আসছিল। এছাড়া ইউটিউবেও এই টিভির লাইভ সম্প্রচার হয়; রয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ভিডিও। ফেইসবুকে এই টিভির অসংখ্যা পেইজ রয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বাংলাদেশের ভেতরে পিস টিভির সব ধরনের সম্প্রচার বন্ধ করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল তারানা হালিমের কাছে।
তিনি বলেন, “যেহেতু এটি একটি সরকারি নির্দেশনা, তারা নারী অধিকারের বিপরীতে কথা বলেছে, জঙ্গিবাদের কথা বলেছে- এ সমস্ত জিনিষ আমলে নিয়েই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাজেই এটি বাস্তবায়ন করা আমাদের কর্তব্য।”
“খুব দ্রুতই বিটিআরসি’র সাথে বসে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ এ বিষয়ে বলেন, “ইউটিউব ও ফেইসবুকে থাকা পিস টিভির সকল কনটেন্টের ইউআরএল চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই ইউআরএলগুলো পাওয়ার সাথে সাথে বন্ধ করা হবে। নির্দেশনা আমাদের কাছে এসেছে। নির্দেশনা পাওয়া মাত্র এই কাজ শুরু হয়ে গেছে।”
সুবক্তা হিসেবে পরিচিত ইসলামি বক্তা জাকির নায়েককে ঘিরে বিতর্ক বহু দিনের। জঙ্গিবাদের প্রতি তার সমর্থনসূচক বক্তব্য যেমন সমালোচিত; তেমনি সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় ওহাবি মতবাদ প্রচারকারী হিসেবে তাকে সন্দেহের চোখে দেখেন অনেকে।
জাকির নায়েক পরিচালিত মুম্বাইভিত্তিক ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিষ্ঠান হল এই পিস টিভি। এ টিভিতে ধর্ম নিয়ে আলোচনায় তার বিভিন্ন ব্যাখ্যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।
গত ১ জুলাই গুলশানে বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম জঙ্গি হামলায় সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে অন্তত দুইজন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জাকির নায়েকের মত ইসলামী বক্তাদের নিয়মিত অনুসরণ করতেন। তার কথায় প্ররোচিত হয়ে ভারতের কয়েকজন তরুণ আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে বলেও খবর এসেছে।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর জাকির নায়েকের বিষয়ে উদ্যোগী হয় ভারত সরকার। মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। মুম্বাইয়ে তার অফিস ঘিরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ভারতের সম্প্রচারমন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু শুক্রবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “আমরা অভিযোগ তদন্ত করছি। কারণ এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, সেই সঙ্গে সামাজিক সম্প্রীতির জন্যও হুমকি।”
এদিকে বাংলাদেশেও পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের দাবি জোরালো হয়ে উঠতে থাকে। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের ভেতরেও নড়াচড়া শুরু হয়।