Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

38খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১১ জুলাই ২০১৬: আইএস নয়, গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলাসহ বিগত দিনের সকল প্রকার হত্যা, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ১৪ দলের নেতারা।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ১৪ দলের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সমাবেশে সোমবার বিকেলে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
অন্যদিকে জঙ্গিবাদ ইস্যুতে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতে কর্মসূচি প্রদান করেছে জোট।
১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘এটি সরকারের বিরোধিতা করার সময় না। এটি সরকারের সমালোচনা করার সময় না। এটি সরকারকে সহযোগিতা করার সময়। জঙ্গিবাদকে পরাজিত করতে আপনারা সবাই এগিয়ে আসুন। ইতোমধ্যে সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ সবাই এগিয়ে এসেছেন।’
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘২০ জুলাই ঢাকায় অভিভাবক সমাবেশ হবে। ২১ জুলাই নারী সমাবেশ হবে ঢাকায়। আমরা তাদের বুঝাব, আপনার সন্তানের খবর রাখেন। সে কি করছে, সেদিকে নজর দেন। এরপর রংপুর, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, কুমিল্লা যাবো আমরা। পাড়া-মহল্লায় যাবো, কমিটি করবো; জঙ্গিবাদের উৎস কোথায় তা খুঁজে বের করবো।’
নাসিম বলেন, ‘এতদিন অনেকে নিখোঁজ হয়েছে, তখন আপনারা বলেছেন র‌্যাব গুম করেছে। এখন দেখা যাচ্ছে তারা আমার বাংলার মানুষকে খুন করছে। খালেদা, আপনি তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে চান। প্রাক্তন শিবিরকর্মীরা জঙ্গি হয়েছে। এদের সাথে মিলে খালেদা ক্ষমতায় যেতে চায়।’১৪ দলের সমন্বয়ক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, গুলশানের ঘটনার রাতে খালেদা জিয়া নিজের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া দেশবাসী বা নগরবাসীর নিরাপত্তা চাননি। নিজের কথা ভেবেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেই রাতে লন্ডনে তারেক রহমানের ফোন সারা রাত ব্যস্ত ছিলো। কোথায় তিনি এতো ব্যস্ত ছিলেন- সে প্রশ্ন দেশবাসীর থেকেই যাবে।’
এসময় জঙ্গিবাদ রুখতে পাড়া, মহল্লা, ওয়ার্ডে কমিটি গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।
প্রতিবাদ সমাবেশে গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলার দিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাকিস্তান থেকে টেলিফোন করা হয়েছিলো বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
হানিফ বলেন, ‘তারেক রহমানের কর্মচারী পরিচয়ে খালেদা জিয়াকে গুলশান হামলার দিন পাকিস্তান ও লন্ডন থেকে টেলিফোন করা হয়- হামলার ঘটনায় খালেদা জিয়া জড়িত এটা কি প্রমাণ করে না?’
যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘এই সুন্দর রাষ্ট্রে হত্যা, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ কায়েম করার জন্য খালেদাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিকভাবে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য তিনি ও তার দল জড়িত।’
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড আইএস-এর নয়, বেগম খালেদা জিয়ার সৃষ্টি। তাকে রাজনীতি থেকে চিরতরে না সরানো র্পযন্ত জঙ্গীবাদ থামবে না।’
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রী সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন বলেন ছাত্রলীগের একবিন্দু রক্ত থাকতে এদেশ থেকে জঙ্গীবাদ নির্মূলের কাজ করে যাবে। এ কাজের জন্য বৃহৎ কোনো শক্তির প্রয়োজন নেই, ছাত্রলীগ একাই যথেষ্ট।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের কোনোরকম সহযোগিতা না করার জন্য আইনজীবীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
খালেদার সম্পর্কে ভিন্ন অভিযোগ নিয়ে মঞ্চে আসেন তৃণমূল বিএনপির সভাপতি ও ৩১ দলীয় জোট বাংলাদেশ ন্যাশনাল এলায়েন্সের প্রধান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তিনি ১৪ দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কথাকে কেন আপনারা গুরুত্ব দেন? তার কথা গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে? তার কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে আপনারা আপনাদের কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যান। আমরা আপনাদের পাশে আছি। আপনারা জনগণের হৃদয় জয় করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এদেশ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। কিন্তু এখন একদল সন্ত্রাসী অরাজকতা করছে। এ জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সাংস্কৃতিক জাগরণ লাগবে। আপনারা আপনাদের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, তারানা হালিম, কবরীদের কাজে লাগান।’
সমাবেশে তথ্যমন্ত্রী ও জাসদের (একাংশ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘বর্তমানে যে ধারাবাহিক আক্রমণ চলছে, তার শুরু কোথায়? এসব ধারাবাহিকভাবে চলে এসেছে। আগুন সন্ত্রাস যারা করেছেন, তারাই একের পর এক ধারাবাহিক আক্রমণ করছেন।
ইনু বলেন, ‘এসব আক্রমণের সঙ্গে ধর্মের বা ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। এরা ইসলামের ক্ষতি করছে। ৭১ এর পরাজিত শক্তি এরা। এদের ৭১ এও পরাজিত করেছি আমরা, এখনো করবো। আপনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলুন, জয় আমাদের হবেই।’
গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর ১৪ দলের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ সমাবেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানে এক শ্রেণির মানুষ মনে করছে ধর্মীয় দোহাই দিয়ে এদেশে জঙ্গীবাদ কায়েম করবে কিন্তু এটা সম্ভন নয়। কারণ, এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। তারা জঙ্গীবাদকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেবে না।’
আরো বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হোসেন, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজিদুল হক, বাসদের সমন্বয়ক রেজাউর রশীদ খান, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, স্বাচিপের মহাসচিব এম এ আজিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ কামাল প্রমুখ।