খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১২ জুলাই ২০১৬: জেলা ও মহানগর, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে একই উদ্দেশ্যে ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটে সারাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের জন্য তৃণমূল নেতাদের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম স্বাক্ষরিত চিঠি সংশ্লিষ্ট নেতাদের ঠিকানায় পাঠানো হচ্ছে। সোমবার সংশ্লিষ্ট ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামে এই চিঠি পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলীয় একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
মাহবুব উল আলম হানিফ স্বাক্ষরিত চিঠিতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের প্রতি নির্দেশ ও আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, গত ৩ জুলাই ১৪ দলীয় জোটনেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে তার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪-দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ১৪-দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
চিঠিতে আরো বলা হয়, এই বৈঠকে জোটনেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক দেশব্যাপী ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা এবং মহানগরগুলোতে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই কমিটির অন্যতম কাজ হচ্ছে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও জঙ্গি তৎপরতাকারীদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করা। এবং তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এই কমিটি ১৪-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তি, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিক, কৃষিবিদ, পেশাজীবী, সংস্কৃতি-কর্মী, শ্রমিক, কৃষক, নারী, ছাত্র, যুবক, তরুণ সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ এবং সমন্বয়ে গঠন করবেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সভায় এই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, জেলা ও মহানগরে ১ জনকে সভাপতি, ১৭ জনকে সহ-সভাপতি, ১ জন সদস্যসচিব ও বাকিদের সদস্য, উপজেলায় ১ জনকে সভাপতি, ১০ জনকে সহ-সভাপতি, ১ জন সদস্যসচিব ও বাকিদের সদস্য, ইউনিয়নে ১জন সভাপতি, ৬ জনকে সহ-সভাপতি, ১ জন সদস্যসচিব ও বাকিদের সদস্য এবং ওয়ার্ডে ১ জন সভাপতি, ৩ জন-সভাপতি, ১ জন সদস্যসচিব ও বাকিদের সদস্য করে কমিটি গঠন করতে হবে।
আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে কমিটি গঠন সম্পন্ন করতে হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, আপনারা জানেন যে, বিএনপি-জামায়াত জোট বিভিন্ন ছদ্মাবরণে সাম্প্রতিক সময়ে হত্যা, গুপ্তহত্যা, টার্গেট কিলিং, বিদেশি নাগরিকদের হত্যা, ধর্মীয় উপাসনাগুলোতে আক্রমণ ও বোমা হামলার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল ও বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হেয় করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে উস্কে দিচ্ছে, নিরীহ, নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে হত্যা করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাচ্ছে। এই অপশক্তি দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকেও ব্যাহত করে দেশে সন্ত্রাসবাদ কায়েম করতে চাচ্ছে। এরা পবিত্র ধর্ম ইসলাম ও মানবতার শত্রু, দেশের গণতন্ত্র উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার শত্রু।
এদিকে, গত ৮ জুলাই বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪-দলের যৌথসভায় আগামী ১২ জুলাই থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি করে কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।
ওই সভায় নানক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা বা থানা থেকে জেলা শহরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। আপনারা সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করে কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করবেন। আর কমিটি করার সময় দেখবেন- যাতে লাউ-কদু, কদু-লাউ এক হয়ে না যায়। এটা যেন আমাদের (আওয়ামী লীগ) মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে। এতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের ম“দাতা, পৃষ্ঠপোষক ব্যতীত সকল শিক্ষক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, ইমাম, পুরোহিত, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি থেকে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে অর্ন্তভুক্ত করবেন।
ওই সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও ১২ জুলাই থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি করতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ সমাবেশেও একই কথা বলেন নাসিম। তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি করব। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ১৪-দলকে সবাই সমর্থন করবেন, সহযোগিতা করবেন।