Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

24kখোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১২ জুলাই ২০১৬: নওগাঁর আত্রাইয়ে গত বছরের স্মরণকালের বন্যায় বিধ্বস্ত নওগাঁ-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের মির্জাপুর নামক স্থানের ভাঙ্গা জায়গায় নিম্নমানের কাজ করার ফলে যে কোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে ওই এলাকার হাজার হাজার জনগন তাদের আবাদি ফসল নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে। এদিকে নওগাঁ শহরের সাথে আত্রাই উপজেলা বাসীর যোগাযোগের এক মাত্র মাধ্যম হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের।

স্থানীয়দের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলায় রাস্তার কাজে অনিয়ম ও দুনীর্তির মাধ্যমে সরকারি লাখ লাখ টাকা পকেটে ঢোকার ফলে পর পর দুই বছর একই স্থানে ভেঙ্গে যায়। প্রশাসনিক নজরদারিতে দ্রুত সড়কটি সঠিক ভাবে নির্মাণ করা অনিয়ম ও দুনীর্তিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর, মির্জাপুর, রসুলপুর ও হাটকালুপাড়া এলাকায় আত্রাই নদী ও ছোট যমুনা নদীর মোহনা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দুই নদীতে সামান্য পানি বৃদ্ধি পেলেই মূহর্তের মধ্যে ভয়াঙ্কর রুপ ধারণ করে। ২০১৪ সালের মত গত বছর ২৩ আগস্ট ভোর রাতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আত্রাইয়ের মির্জাপুর নামক স্থানে নওগাঁ-আত্রাই আঞ্চলিক সড়ক ভেঙে এলাকার সমুদয় ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। সেই সাথে এলাকার শত শত পরিবার প্রায় ২ মাস পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে। এতে আত্রাই-রাণীনগর উপজেলার প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। বন্যার পানি শুকিয়ে যাওয়ার ৯ মাস পর সড়ক ও জনপদ বিভাগ থেকে ভাঙ্গা স্থানটি মেরামতের জন্য ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এদিকে সড়কটির দুই পাশে ব্লক দেয়া ও স্লুচগেট নির্মাণের দাবি জানিয়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ । নিম্নমানের কাজ করার ফলে যে কোন সময় আবারও ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা ব্লক দেয়া ও স্লুইচগেট নির্মাণের কোন উদ্যোগ না নিয়েই টাকা বরাদ্দের পর তরিঘরি করে নাম মাত্র মাটি কেটে রাস্তা মেরামত করে চলে যায়।

স্থানীয়রা জানান, সড়কটি সঠিক ভাবে মেরামত না করায় সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এতে আত্রাই-রাণীনগর উপজেলার ৩ লাখ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

মির্জাপুর গ্রামের জাহিদ হাসান জানান, ভাঙ্গনের আগে সড়ক যে উচ্চতায় ছিল তার চেয়ে এ বছর অনেক নিচু করে নির্মান করা হয়েছে। এছাড়া সড়কের একেবারে নীচ থেকে মাটি কেটে সড়কটি মেরামত করা হয়েছে।

ভবানীপুর গ্রামের আবুল কালাম জানান, ভাঙ্গাস্থানে সড়কের কাজ করার সময় কোন সিডিউল টাঙ্গানো হয়নি এবং সড়কটি সোজা না করে পানির চাপের দিকে বাঁকা করে মেরামত করা হয়েছে। ফলে পানির চাপ সহ্য করতে পারবেনা সড়কটি। গত কয়েক দিনের সামান্য বৃষ্টিতে সড়কের বেশ কিছু অংশ ধ্বসে গেছে। এ বছরও যে কোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শাহাগোলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক শামছুল আলম বলেন, ‘আগের বছর একই স্থানে ভাঙ্গনে ৪২ লাখ টাকা খরচ করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বরাদ্দের টাকা লুটপাট করায় গত বছরও সড়কটি ভেঙ্গে যায়। সেই স্থানে এবারে ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ ইসরাফিল আলম জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগকে সঠিক ভাবে সড়কের কাজ করার নির্দেশ দিলেও তারা তা না করে এক-তৃতীয়াংশ কাজ করে বাঁকি টাকা লুটপাট করেছে। ওই স্থানে ব্লক এবং একটি স্লুইচ গেইট নির্মাণের দাবি জানানো হলেও তার কোন উদ্যোগ নেয়নি সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড। নিম্নমাণের কাজ করার ঘটনায় জড়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি’।

নওগাঁ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল হক বলেন, ‘নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে সেখানে একটি স্লুইচগেট নির্মান ও রাস্তার দুই পাশে ব্লক দেয়ার জন্য’। পরপর দুই বছর ভাঙ্গা স্থানটি মেরামত করার সময় অনিয়ম ও টাকা লুটপাটের প্রশ্ন করা হলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘বন্যার পানির বেশি চাপ হলে কোন কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হয় না’।