Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

31খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৩ জুলাই ২০১৬: লোকমান আলী, নওগাঁ : নওগাঁয় বিল মুসনুর ও পলাশ বাড়ী খালের তলদেশ খনন কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে । নওগাঁ সদর উপজেলার বিল মুনসুর, বিল পাকুরিয়া, নলীর বিল, হাসাইগাড়ী বিল, গুটার বিল, বারমাশিয়া বিল, হামরার বিল হয়ে পলাশ বাড়ী সুইচ গেট পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার সরকারী খাস খতিয়ান ভুক্ত খাল খনন কাজ শুরু হয় চলতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসে।
এসব বিলের তলদেশ খনন শেষ হলে ৫০টি গ্রামের সাড়ে ৬হাজার হেক্টর জমি খড়া মৌসুমে সেচ সুবিধার আওতায় আসবে।
অকাল বন্যা থেকে রক্ষাসহ জমির ধান উৎপাদনে সেচ খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। সারা বছর বিলে পানি প্রবাহ নিশ্চিতসহ একদিকে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাবে জেলেরা, অন্যদিকে বিলের পানি দিয়ে সৃষ্টি হবে মৌসুমী নানা প্রজাতির সবজি চাষ। এতে এলাকায় কৃষকদের মাঝে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট দফতর।
নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার ১৫টি ক্যানেল দিয়ে পানি আসে এসব বিলে। স্বাধীনতা পরবর্তী এ বিলের তলদেশ সংস্কার না করায় পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়।
ফলে বিল মুনসুর ও পলাশ বাড়ী এলাকায় অন্তত দেরশো গ্রাম বাসী অকাল বন্যার শিকার হয়ে আসছে। পানি নিস্কাশন ঠিকমত না হওয়ায় বর্ষাকালের আগেই পানিতে তলিয়ে থাকে বিস্তির্ন মাঠ। এ অবস্থায় খালের আশপাশের প্রায় সারে ৬হাজার হেক্টর জমির ধান উৎপাদন ব্যাহত হয়। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যা নিয়ে দীর্ঘ জরিপ করে।
চলতি বছর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভু-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারন ও জলাবদ্ধতা দুরীকরন প্রকল্পের আওতায় ভরাট হওয়া বিলের তলদেশ খনন কার্যক্রম শুরু করে।
স্থানীয় চক পাকুরিয়া গ্রামের আবুল হোসেন, গয়ের পাড়া গ্রামের পিন্টু সর্দার, ভীমপুর গ্রামের আলেট প্রামানিক জানান, অনেক দিন ধরে আমরা বিলের তলদেশ খনন করার জন্য অনেক দিন ধরে বিভিন্ন দফতরে অনেক চেষ্টা করেছি অবশেষে এবার সে আশা পুরন হতে যাচ্ছে। স্থানীয়দের মতে খালের তলদেশ খনন শেষ হলে জলাবদ্ধতা থাকবে না তা ছাড়া সারা বছর মিলবে পানি যা থেকে রবি ফসল সহ সব ফসল উৎপাদন করতে পারবে। স্থানীয়দের মতে বিলের তলদেশ খনন শেষ হলে নওগাঁর হাপানিয়া, দুবলহাটি, বলিহার, হাসাইগাড়ী, মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর মান্দা উপজেলার কসব ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রামের ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০কোটি টাকা ব্যায়ে -উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারন ও জলাবদ্ধতা দুরীকরন প্রকল্পের আওতায় ৩৭কি:মি: এ খাল খনন কাজ ও ষ্টাকচার নির্মান কাজ বাস্তবায়ন করছে। ২০১৫/১৬ অর্থ বছর থেকে আগামী ২০১৮/১৯ সাল পর্যন্ত এ কাজ চলবে বিলের তলদেশ খননেন পাশাপাশী এখানে ৫ টি ব্রীজ নির্মান করবে সংশ্লিষ্ট দফতর। এ ছাড়া বাধের দু’ধারে দেশীয় ও ফলজ গাছ রোপনের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা হবে। স্থানীয় ভীমপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাম প্রসাদ ভদ্র জানান, মৌসুমের আগে অকাল বন্যা আর শুস্ক মৌসুমে পানি সংকটে দেশীয় মাছের যে আকাল খনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবার তা দুর হবে । তিনি বলেন, এখানে দেশীয় মাছের বিশাল মৌজুদ গড়ে উঠবে তা ছাড়া খালের পানি দিয়ে শুস্ক মৌসুমে বিভিন্ন জাতের রবি ফসল চাষ করবে আশপাশের বাসিন্দারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের তথ্য মতে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রায় ২৪হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন হবে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। প্রায় ৫০কোটি টাকার সুফল পাবে কৃষক।
নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন. বিলমুনসুর ও পলাশ বাড়ী খালের তলদেশ খনন সম্পুন্ন হলে এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে।
সরজমিনে দেখা যায়, এসব বিল এলাকার মানুষ বছরে এক ফসলের উপর নির্ভর করে জমি চাষাবাদ করে আসছে। পানি প্রবাহ না থাকায় সামান্য বৃষ্টিপাতে রোপন করা ধান ঘরে তলতে পাওে না কৃষকরা। এ অবস্থার আমুল পরিবর্তন হবে খনন শেষ হলে। এ ছাড়া সারা বছর বিলে পানি প্রবাহ থাকার ফলে মাছ পাবে স্থানীয় জেলেরা।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নওগাঁ সদর অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এসব বিলের তলদেশ খনন কাজ শুরুর পর স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যাপক সহযোগিতা করছে। তাদের দীর্ঘ দিনে প্রত্যাশা পুরন হতে যাচ্ছে এ কারনে এখানকার কৃষকরা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তপক্ষতে সাধুবাদ জানাচ্ছে খনন বাস্তবায়নের জন্য।