খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই ২০১৬: রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় গত ১ জুলাই হামলার আগে ৪ মাস ঝিনাইদহের একটি ছাত্রাবাসে ছিলেন নিহত জঙ্গি নিবরাস ইসলাম। জঙ্গি নিবরাসকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে ছাত্রাবাসটির মালিক ও তার দুই সন্তানসহ ৫ জনকে র্যাব ও পুলিশের পোশাক পরিহিত সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। গত ৬ জুলাই রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ায় অবস্থিত ওই ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। এরপর থেকে ওই ৫ জনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে পরিবারের সদস্যরা।
এই পাঁচজন হলেন ছাত্রাবাসের মালিক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও সোনালীপাড়া জামে মসজিদের ক্যাশিয়ার কওছার আলী (৫০), তার বড় ছেলে ঝিনাইদহ সিটি কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্র বিনছার আলী (২৪) ও ছোট ছেলে নারিকেলবাড়িয়া কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র বেনজির আলী (২২), সোনালীপাড়া জামে মসজিদের ইমাম রোকনুজ্জামান ও সাব্বির নামের এক হাফেজ।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গুলশান হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্রাবাস মালিক বুঝতে পারেন নিহত জঙ্গিদের একজন নিবরাস ইসলাম এই ছাত্রাবাসে থাকতেন। জঙ্গিদের ছবি দেখে তাকে এলাকার অনেকেই চিনতে পারেন। ছাত্রাবাসটির সামনের মাঠে প্রায়ই বিকেলে ফুটবল খেলত নিবরাস। তার আচরণে এলাকার লোকজন কখনও বুঝতে পারেননি যে নিবরাস জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত।
ছাত্রাবাসটির মালিক কওছার আলীর স্ত্রী বিলকিস নাহার বলেন, দুটি রুম প্রতি মাসে ২৩০০ টাকা ভাড়ায় ৮ জন ছেলে থাকত। প্রায় ৪ মাস এখানে থাকার পর ঈদের আগে সবাই চলে যায়। এর মধ্যে ৫ জন ঈদের প্রায় ২০ দিন আগে বাড়ি যাওয়ার নাম করে চলে যায়। আর বাকি ৩ জন ২৮ রোজায় মেস ত্যাগ করে। মেসের সবকিছুর দায়িত্বে ছিল সাঈদ নামে এক ছেলে। গুলশান হামলায় সন্দেহভাজন নিবরাস ইসলামই সাঈদ। আমি ছবি দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। ছবির সাথে চেহারার মিল রয়েছে। আমরা সাঈদের কাছ থেকে ভাড়া বুঝে নিতাম। গুলশান হামলার পরে জানতে পারি নিবরাস ইসলামই নিজেকে এই সাঈদ বলে পরিচয় দিয়েছিল। তার কাছ থেকে ভাড়া বুঝে নিতাম। সে জানিয়েছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য এসেছে।
বিলকিস নাহার আরো বলেন, আমরা সবাইকে চিনতাম না। প্রতিনিয়ত তারা স্কুল-কলেজে যাতায়াত করত। বাইরে ঘোরাফেরা করত। তাদের আচার-আচরণেও জঙ্গিবাদের কোনো প্রকার প্রমাণ আমরা পাইনি। আমার স্বামী ও দুই ছেলে কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর বাসার মধ্যেই সময় কাটে আমার স্বামীর। নামাজের সময় বাড়ির পাশে মসজিদে নামাজ পড়ে আবার বাসায় ফিরে আসে। আমার দুই ছেলেও নামাজ পড়ে।
তিনি জানান, গুলশান হত্যাকাণ্ডের পর ঈদের আগের দিন ৬ জুলাই রাত ১টার দিকে পুলিশ ও র্যাবের পোশাক পরিহিত ১০-১২ জন সদস্য বাসার গেটে শব্দ করেন। এ সময় বাইরে থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিলে তার স্বামী দরজা খুললে তারা বাসার ভেতরে প্রবেশ করে। তিনি বলেন, ছাত্রাবাসের বিভিন্ন রুম তল্লাশি করে কিছু না পেয়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমার স্বামী, দুই ছেলে ও মসজিদ থেকে ঈমাম ও এক হাফেজকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাইনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনালীপাড়ার এক দোকানদার বলেন, কওছার আলী ও তার ছেলেরা কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। গুলশান হত্যাকাণ্ডের পর জানতে পারি কওছার আলীর ছাত্রাবাসে নিবরাস ইসলাম নামের এক জঙ্গি থাকত।
সোনালীপাড়ার বাসিন্দা শামছুল ইসলাম বলেন, ছাত্রাবাসের ছেলেগুলোর চলাফেরা, আচার-আচরণ দেখে কখনও বোঝা যেত না যে তারা জঙ্গিবাহিনীর সাথে জড়িত। ছাত্রাবাসের ছেলেগুলো সবাই নামাজ পড়ত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ ৫ জনকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ ও র্যাবের কেউই তাদেরকে আটক করেনি। আর ওই ছাত্রাবাসে কোনো জঙ্গি থাকত কিনা এরকম তথ্য আমার জানা নেই।