খোলা বাজার২৪, শনিবার, ১৬ জুলাই ২০১৬: আলিফ হোসেন, তানোর : রাজশাহীর তানোর পৌর সদরের ইসলাহিয়া দাখিল মাদরাসা ছাত্রশিবির তৈরীর আঁতুড় ঘর ও কারখানায় পরিনত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদরাসা ঘিরে জামায়াত-ছাত্রশিবিরের রাজনীতি আবর্তিত ও শিক্ষক-কর্মচারিগণ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত বলে এলাকায় ব্যাপক প্রচার রয়েছে। জানা গেছে, জামায়াত নেতা অধ্যাপক হাবিবুর রহমান মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি, মাদরাসার সুপার মকছেদ আলী জামায়াতের রোকন, সহকারী শিক্ষক মাওলানা আমিনুল ইসলাম রাজশাহী পশ্চিম জেলা জামায়াতের আমির, সহকারী শিক্ষক মাওলানা সিরাজুল ইসলাম তানোর উপজেলা জামায়াতের আমির এছাড়া বাকি শিক্ষক-কর্মচারিগণ সকলেই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছেন। মাদরাসা পরিচালনা কমিটি ও প্রধান থেকে শুরু করে শিক্ষক-কর্মচারীদের রাজনৈতিক পরিচয়, অতীত ও বর্তমান কর্মকান্ড নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ সময় মাদরাসায় জঙ্গিবাদবিরোধী আলোচনা, নিয়মিত জাতীয় সংগীত চর্চা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সরকার প্রধানের প্রতিকৃতি না লাগানো, জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মৌলবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও আধূনিক চিন্তা-চেতনার বিষয়গুলোকে সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়ে নৈতিক শিক্ষার নামে জামায়াতি ধ্যাণ-ধারনায় শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা, তাদের দিয়ে জামায়াতের বিভিন্ন জেহাদি পুস্তক পড়ানো, প্রচারপত্র বিতরণ, মফস্বল এলাকায় লিফলেট-পোষ্টার শাঁটানো, জনমত গড়ে তোলার পাশপাশি ইসলামী জালসা এবং ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলের নামে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের পূর্ণবাসন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার কোনো কোনো শিক্ষক বিভিন্ন অভিযোগ মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ও আতœগোপণে থেকেও বেতনভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছেন বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে মাদরাসার আয়-ব্যয়. শিক্ষক-কর্মচারি ও শিক্ষার্থীদের বিষয়ে পরিচালনা কমিটির কোনো নজরদারি না থাকায় এমনকি মদদ দেয়ায় মাদরাসাটি জামায়াত-শিবিরের আস্থানায় রুপ নিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন মহলের।
স্থানীয়রা জানান, ইসলাহিয়া মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারী ও পাঠদান নিয়ে সাধারণের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সুত্র জানায়, জামায়াত মতাদর্শী শিক্ষকরা পাঠদানের আড়ালে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি চর্চা ও জনমত গড়ে তোলার জন্য জামায়াত নেতাদের লেখা বিভিন্ন জেহাদি পুস্তক পাঠদানের পাশপাশি বিভিন্ন কৌশলে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের নাম থেকে শুরু তাদের অর্থের উৎস্য, পাঠদান, শিক্ষক-কর্মচারীদের রাজনৈতিক পরিচয় ও কর্মকান্ড নিয়ে সাধারণের মধ্যে রয়েছে নানা গুঞ্জন ও কৌতুহল। জামায়াত মতাদর্শী শিক্ষকগণ সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে (দুর্বলতা) কাজে লাগিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে জামায়াতের রাজনীতি চর্চা ও ছাত্রশিবির গড়ার কারিগর হিসেবে কাজ করছে। জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি ও মিছিলে মাদরাসার শিশু-কিশোরদের সামনে রেখে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় ও গোপণে প্রতিনিয়ত জামায়াত শিবিরের বৈঠক বলেও অভিযোগ রয়েছে। স¤প্রতি এলাকার সচেতন মহল ও প্রগতিশীল সমাজ এই মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের রাজনৈতিক পরিচয়, তাদের কর্মকান্ড, আয়-ব্যয় ও মাদরাসার বিভিন্ন বিষয়ে সরেজমিন তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সরকারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। নাম প্রকাশে অচ্ছিুক একাধিক গ্রামবাসি জানান, এখানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতনের একটি অংশ নিয়মিতভাবে জামায়াতের দলীয় ফান্ডে জমা দেয়া হয় ও নিয়মিত গোপণে জামায়াত-শিবিরের বৈঠক হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য জামায়াত বিএনপির নেতাকর্মীদের নেপথ্যে থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। আবার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের বিষয়ে বিষাদার ও যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির জন্য মোনাজাত করানো হয়। এ ব্যাপারে তানোর ইসলাহিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মকছেদ আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোনো শিক্ষক-কর্মচারী ব্যক্তিগত জীবনে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন এতে দোষের কিছু নেই। তিনি বলেন, মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বাইরে কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ড করা হয় না। এব্যাপারে তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, লিখিত বা সুনিদ্রিষ্ট অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।