খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৮ জুলাই ২০১৬: রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলাকারীদের মধ্যে নিহত শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলের ঘনিষ্ঠ মিলনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকা থেকে শনিবার মিলনকে গ্রেফতার করা হলেও ঘটনাটি রবিবার জানাজানি হয়।
আটকের পর মিলনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ওই মামলায় রবিবার (১৭ জুলাই) তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়ে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে পাঠানো হলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে গ্রেফতার মিলনের স্ত্রী জহুরা বেগম দাবি করেন, তার স্বামীকে পুলিশ বুধবার দুপুরে আটক করে নিয়ে যায়।
গ্রেফতার মিলন লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার বেতকিবাড়ি গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে। তিনি সর্বশেষ আশুলিয়ার পবনারটেক এলাকায় পিয়ার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করছিলেন। এর আগে তিনি পাশের এলাকা ভাদাইলে মাদারি মাদবর মেমোরিয়াল একাডেমির শিক্ষক ছিলেন।
পুলিশ জানায়, গুলশানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গির একজন শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে মিলন হোসাইনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহত শফিকুল দীর্ঘদিন আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকার মাদারি মাদবর মেমোরিয়াল একাডেমিতে শিক্ষকতা করেন। নিহত শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলকে আশুলিয়ার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়েছিলেন গ্রেফতার মিলন।
মাদারি মাদবর মেমোরিয়াল একাডেমির প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মিলন হোসাইন ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্র“য়ারি আমাদের বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। মিলনের মাধ্যমে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ওই বিদ্যালয়ে যোগ দেন শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল। এর আগে তারা একই থানার (আশুলিয়া) জামগড়া এলাকায় ন্যাশনাল ইনিসিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরি করতেন। পারিবারিক সমস্যার অজুহাতে শফিকুল গত বছর ১০ ডিসেম্বর চাকরি ছেড়ে চলে যান। আর ২০১৪ সালের মার্চ মাসে চাকরি ছেড়ে পবনারটেকে পিয়ার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতার চাকরি নেন মিলন হোসাইন।’
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহীদুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘আশুলিয়ায় অবস্থানকালে শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল মাদারি মাদবর মেমোরিয়াল একাডেমির শিক্ষক নূর মোহাম্মদের মাধ্যমে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েন। তার সঙ্গে ওই বিদ্যালয়েরই শিক্ষক মিলন হোসাইন, ইলিয়াস আলী ও নূর মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। এদের মধ্যে শফিকুল গুলশানে রেস্তোরাঁয় জিম্মি উদ্ধার অভিযানে নিহত হয়েছেন। মিলনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নূর মোহাম্মদকে ডিবি পুলিশ আটক করেছে। আর ইলিয়াস পলাতক রয়েছেন।’
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির বলেন, ‘শনিবার মিলনকে আটকের পর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নাজমুর রহমান নিপু পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিলন হোসাইনের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। জঙ্গি শফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা থাকার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ১ জুলাই রাতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। ওই হামলায় পুলিশ কর্মকর্তা ও বিদেশিসহ ২২ জন নিহত হন। এ ছাড়া পরদিন যৌথ অভিযানে ৬ সন্ত্রাসী নিহত হন।