Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

6kখোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৮ জুলাই ২০১৬: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামালপুরের আট রাজাকারের মধ্যে তিনজনের ফাঁসি ও পাঁচজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। অন্য দুই বিচারপতি হলেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন আশরাফ হোসেন, আবদুল মান্নান ও আবদুল বারী। আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন অ্যাডভোকেট শামসুল হক, ইউসুফ আলী, শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মো. হারুন ও মো. আবুল হাসেম।
এর আগে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে আট আসামির বিরুদ্ধে রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতিরা। মোট ২৮৯ পৃষ্ঠার রায়ের মূল অংশের প্রথমাংশ পাঠ করেন বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী।
রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় ছিলেন রাজাকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক ও এস এম ইউসুফ আলী।
মামলার আট আসামির মধ্যে অ্যাডভোকেট শামসুল হক ও এস এম ইউসুফ আলী কারাগারে আছেন। তাদেরকে সকাল ৯টার দিকে পুলিশি প্রহরায় ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়।
পলাতক রয়েছেন ছয়জন। এরা হলেন আলবদর বাহিনীর উদ্যোক্তা মো. আশরাফ হোসেন, ইসলামী ব্যাংকের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মো. আবদুল মান্নান, মো. আবদুল বারী, মো. হারুন ও মো. আবুল হাসেম।
এর আগে রোববার এই আট আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ১৯ জুন উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতায় হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট ও গুমের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে এই আট আসামির বিরুদ্ধে।
যুদ্ধাপরাধের পাঁচ অভিযোগে গত বছরের ২৬ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই আটজনের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।
যুক্তিতর্কের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আরজি জানায়। অন্যদিকে আসামিপক্ষ অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন করে।
চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল এই আট আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ২ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর পুলিশ শামসুল হক ও ইউসুফ আলীকে গ্রেপ্তার করে।
নিয়ম অনুযায়ী বাকিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও তারা তা করেননি।
গ্রেপ্তার শামসুল হক জামালপুর জেলা জামায়াতের প্রাক্তন আমির এবং সিংহজানি স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ইউসুফও একসময় জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।
এই দুজন একাত্তরে রাজাকার বাহিনীতে এবং বাকি ছয়জন আলবদর বাহিনীতে ছিলেন বলে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে জানা যায়।
তাদের বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগ
প্রথম অভিযোগ : একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও শান্তি কমিটির সদস্য শামসুল হক ও এস এম ইউসুফ আলী এবং তাদের অন্য সহযোগীরা তৎকালীন জামালপুর মহকুমায় সাধারণ মানুষকে অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটনায়। শাস্তি কমিটির পরামর্শ ও নির্দেশনায় পাকিস্তানি বাহিনী ও স্থানীয় আলবদর বাহিনী দুই আসামির অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় একাত্তরের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জামালপুরে হত্যা-ধ্বংস চালায়, স্বাধীনতাকামী এক হাজার লোককে হত্যা করে তারা।
দ্বিতীয় অভিযোগ : আসামি আশরাফ হোসেন, শরীফ আহমেদ, আবদুল মান্নান, মো. হারুন ও আবদুল বারী ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই এবং ২২ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানার মইষ ভাদুরিয়া ও ধূপদহ গ্রামের শহীদ আবদুল হামিদ মোক্তারের বাড়ি, মো. সাইদুর রহমান ভূঁইয়ার বাড়ি, আমির আলী খানের বাড়ি, পিটিআই হোস্টেলের টর্চার ক্যাম্প ও জামালপুর শ্মশানঘাটে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে।
তৃতীয় অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১০ জুলাই রাত ৩টার দিকে আসামি শরীফ আহমেদ, আশরাফ হোসেন, আবদুল মান্নান, আবদুল বারী, আবুল হাসেম, শামসুল হক, ইউসুফ আলী ও আলবদর বাহিনীর সদস্য ও শান্তি কমিটির সদস্যরা জামালপুরের সিঅ্যান্ডবি রোডের (পুরাতন) দয়াময়ী লেনের মল্লিক ভিলা থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন শহীদ নুরুল আমীনকে অপহরণ করে। তারপর ওই দিন সকাল ১০টায় তার মরদেহ ব্রহ্মপুত্র নদের চ্যাপতলা ঘাটে ভেসে ওঠে।
চতুর্থ অভিযোগ : জামালপুরে আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে বদর বাহিনী গঠিত হয়, তিনি সে সময় মহকুমাটির ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। জামালপুরের আশেক মাহমুদ ডিগ্রি কলেজকে সে সময় নির্যাতন কেন্দ্র ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহার করা হতো, যার প্রধান ছিলেন আশরাফ হোসেন। আসামি আশরাফ হোসেনের পাশাপাশি আলবদরের সদস্য শরীফ আহমেদও জামায়াতে ইসলামীর প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। আবদুল মান্নান, আবদুল বারীসহ অন্যদেরও সেখানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। একাত্তরের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামিরা সেখানে অনেককে আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা করেছে।
পঞ্চম অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামি শরীফ আহমেদ, আশরাফ হোসেন, আবদুল মান্নান, আবদুল বারী, আবুল হাসেম, শামসুল হক ও ইউসুফ আলী এবং স্থানীয় আলবদর বাহিনীর সদস্য ও পাক সেনারা জামালপুরের পিটিআই হোস্টেলকে নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করত। সেখানে হাজারখানেক নিরস্ত্র মানুষকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো এবং রাতে তাদের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে শ্মশানঘাটে নিয়ে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হতো।