Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

30খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৮ জুলাই ২০১৬: আলিফ হোসেন, তানোর, রাজশাহী: রাজশাহীর তানোরে এক সময়ের রিক্স্যাভ্যান চালক বেল্টু এখন জ্বিানের বাদশা (সর্বরোগ) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (কবিরাজ) পরিচয় দিয়ে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বঘোষিত জ্বিনের বাদশা (কবিরাজ) বেল্টুর ক্যারামতিতে সাধারণ মানুষের জীবন ক্যারাব্যারা ‘তছনছ’ হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে। সরেজমিন অনুসন্ধান করলেই কবিরাজ বেল্টুর নানা অপকর্মের সত্যতা পাওয়া যাবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কথিত কবিরাজ বেল্টুর কাছে চিকিৎসা নিতে এসে তার অপচিকিৎসার শিকার ও চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে অনেকের সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চোখের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে তিনি এসব অপকর্ম করে চলেছেন। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই শুধুমাত্র সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে এক সময়ের দিনমজুর বেল্টু এখন অস্থাবর-স্থাবর মিলে প্রায় কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্বঘোষিত এই জ্বিনের বাদশার নাম বেল্টু তার পিতার নাম এমরান আলী তিনি তানোর পৌর এলাকার তালন্দ গ্রামে বসবাস করছেন। জনৈক মন্ত্রী নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে দালাল হিসেবে তিনি নিয়োগ করেছেন গ্রামের কিছু টাউট-বাটপার। দালালদের কাজ বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজার ও জনবহুল স্থানে গিয়ে প্রচার করা কবিরাজ বেল্টু মানবদেহের জটিল-কঠিনসহ যাবতীয় রোগের চিকিৎসা করছেন। তার কাছে চিকিৎসা নিয়ে তারা দুরাগ্য ব্যাধি থেকে আরোগ্য ও অনেক নিঃসন্তান দম্পত্তি সন্তান লাভ করেছেন। দালালদের এসব মিথ্যা কথা ও প্রচারণায় বিশ্বাষ করে সাধারণ মানুষ তার কাছে চিকিৎসা নিতে এসে অধিকাংশক্ষেত্রে সুস্থ না হয়ে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রাজশাহীর বানেশ্বর এলাকার কলিম উদ্দিন (৩৩) বলেন, চিকিৎসার কথা বলে তার কাছে থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিলেও বেল্টুর চিকিৎসায় তিনি সুস্থ না হয়ে এখন আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আব্দুর রহমান (৪৩) বলেন, তার স্ত্রীর হাতের ব্যথা সারানোর জন্য বেল্টু ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিšত্ত তার চিকিৎসায় তার স্ত্রীর হাতের ব্যথা তো ভালো না হয়ে আরো বেশি হয়েছে,পরে রাজশাহীতে গিয়ে চিকিৎসা করাতে তার অনেক টাকা খরচ হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তানোর পৌর এলাকার তালন্দ গ্রামের এমরান আলী একজন হতদরিদ্র দিনমজুর কৃষক। তার ১০ ছেলে মেয়ের মধ্যে বেল্টু দ্বিতীয়। জীবীকার সন্ধানে দীর্ঘদিন বেল্টু রাজশাহীর বানেশ্বর এলাকায় ছিলেন। এই অবস্থায় হঠাৎ একদিন এলাকায় এসে বেল্টু নিজেকে জ্বিনের বাদশা বলে প্রকাশ করে জানান স্বপ্নে তিনি জ্বিনের বাদশার সাক্ষাৎ পেয়েছেন ও অলৌকিক ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন মূখ দেখেই মানুষের অতীত-ভবিষ্যৎ বলতে পারেন ও যে কোনো জটিল-কঠিন রোগের চিকিৎসা করতে পারবেন। এই প্রচার-প্রচরণার পর তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি, সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে এখন তিনি প্রায় কোটিপতি। এলাকাবাসি কবিরাজ নামের এই প্রতারকের বিরুদ্ধে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এব্যাপারে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা, ইসমত আরা বলেন,প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ‘ডিগ্রী’ ব্যতিত মানবদেহের চিকিৎসা দেয়া দন্ডনীয় অপরাধ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে। এব্যাপারে কবিরাজ বেল্টু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার প্রতিপক্ষরা এসব অপপ্রচার করছে। তিনি বলেন, তার চিকিৎসায় রোগী ভালো হয় তাই তিনি পারিশ্রমিক নিয়ে মানুষের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করেন। তিনি বলেন, জোর করে তিনি কারো চিকিৎসা করেন না কেউ তার কাছে আসলে তিনি চিকিৎসা করেন এটা দোষের কিছু নয়।