Thu. Aug 14th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

18খোলা বাজার২৪, রোববার, ২৪ জুলাই ২০১৬: মাজেদুল হক মানিক, মেহেরপুর : এক তাল গাছের ১৭ টি মাথা, এটি অলৌকিক নয়তো কি ? এমন অপপ্রচারের প্রতারণার কান দিয়ে শত শত মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন মেহেরপুর গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামে। কেউ রোগ মুক্তির আসায় আবার কেউবা কৌতুহল বশত একনজর দেখতে উপস্থিত হচ্ছেন সেখানে। সহজ-সরল মানুষের কেউ কেউ করছেন টাকা পয়সা মানত। আর সুযোগ কাজে লাগিয়ে সেই অপপ্রচারকারীরা আরো সক্রিয় হয়ে উঠছে। মানতের টাকা পয়সা কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে পকেট ভরে বাড়ি ফিরছে। তবে উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউট্রেশনের কারণে একটি গাছের দৈহিক পরিবর্তন ঘটতে পারে। এটি অলৌকিক কিছু নয়। অপরদিকে ইসলামে মানত হারাম তাই এর থেকে দুরে থাকতে মুসলমানদের সতর্ক করেছেন আলেম-ওলামারা।
গাংনী উপজেলা শহর থেকে আড়াই কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে সাহারবাটি গ্রামের অবস্থান। এখানকার মানুষেরা শিক্ষিত, মার্জিত ও সংস্কৃতিমনা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছেন। এক সময়ের সংস্কৃতি চর্চায়ও সাহারবাটি গ্রাম এলাকার সব গ্রামের উপরে ছিল। যার মধ্য দিয়ে কুসংস্কার তাড়াতেন নানা বয়সী সংস্কৃতিমনা মানুষগুলো। সেই গ্রামটিতেই আজ কুসংস্কার বাসা বাঁধতে যাচ্ছে। সাহারবাটি গ্রামের ঘাড়ে মাঠে ইন্তাদুল ইসলামের জমিতে লাগানে একটি তাল গাছ স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে উঠেছে। প্রকৃতির নিয়মেই কয়েকদিন আগে থেকে তালগাছটির অগ্রভাগের কয়েকটি লম্বা মূল গজাতে শুরু করে। এ নিয়ে গ্রামের মানুষের মাঝে অলৌকিক ঘটনা বলে অপপ্রচার শুরু করে কতিপয় স্বার্থন্বেষী ব্যক্তি। জনমনে শুরু হয় বিভ্রান্তি। অলৌকিতার কথা শুনে শুরু হয়ে যায় নানা জল্পনা-কল্পনা। গাছটি এক নজর দেখতে সাহারবাটি গ্রামসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষ ছুটে এসে ভিড় করছে। এ সুযোগে সুযোগ-সন্ধানী সেই ব্যক্তিদের ব্যবসাও শুরু হয়। চতুর কিছু মানুষ নিরিহ এসব মানুষের সরলতা পুঁজি করে ধান্দাবাজির একটি রাস্তার তৈরীর পায়তারা শুরু করেন। তাদের প্রচারণার ফাঁদে পা দেয় কিছু মানুষ। রোগ মুক্তির আসায় গাছটির গোড়ায় আগরবাতি জ্বালিয়ে মানত করেন কয়েকজন। তাদের দেখাদেখি মানত কারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে এতে রোগমুক্তি এখনো হয়নি বলে জানান মানত কারীদের কয়েকজন। সরল বিশ^াসে মানতের টাকা দিলেও রোগমুক্তি না হওয়ায় তারা এখন অবশ্য হতাশ।
এদিকে জায়গাটির গুরুত্ব বোঝাতে ইতোমধ্যে প্রতারক চক্রের সেই সদস্যরা গাছটির চার পাশ একটি বৃত্তাকার সীমানা অঙ্কন করে পবিত্র স্থান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে জুতা-স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। আবার একটি চক্র শিশুদের খাওয়ানোর নাম করে টাকাও সংগ্রহ করছে। গেল শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে এসব প্রতারণা। মুখে পবিত্র স্থান প্রচার করে মিথ্যার ফুলঝুরি ছড়িয়ে মানতের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই প্রতারক চক্রের সদস্যরা।
গাছটি দেখতে আসা সাহারবাটি গ্রামের আধা বয়সী একজন নারী হামেদা খাতুন জানান, হঠাৎ করে গাছের এসব বের হয়েছে। তাই তার স্বামীর মানসিক রোগ মুক্তির জন্য এখানে নিয়ে আসবেন। এজন্য তিনি দেখতে এসেছেন। তবে মানতে যদি রোগমুক্তি না হয় সেক্ষেত্রে তিনি কি করবেন জাইতে চাইলে বলেন, চেষ্টা করতে দোষ কি? এর আগে মানত করে রোগ ভাল হয়েছে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কত জায়গায় মানত করেছি কিন্তু রোগ ভাল হয়নি। তাহলে এখানে কেন মানত করতে চাইছেন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। হামেদা খাতুনের মত এমন শত শত সহজ-সরল মানুষদের বিশ^াসে ধোকা দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই প্রতারক চক্রের সদস্যরা।
এ গ্রামের আহাদ আলী জানান, তিনি বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই গাছটিতে ঐ লম্বা মূলগুলো দেখেছেন। অথচ গ্রামের কিছু সুবিধাবাদি মানুষ এটি অলৌকিক দাবি করে বিভিন্ন অপপ্রচারে লিপ্ত। অনেকেই এটিকে ঘিরে টাকা পয়সা আয়ের একটি পথ তৈরি করার চেষ্টা করছে।
গাংনী ডিগ্রী কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক এনামুল আযীম জানান, এটি একটি পুরুষ তাল গাছ হতে পারে। পুরুষ তাল গাছের অগ্রভাবে এমন অসংখ্য লম্বা মূল বের হয়। পরে ঐ মূলগুলো শুকিয়ে গেলে জট আকারে দেখা যায়। একটি তাল গাছের অনেকগুলো মাথা গজানোর এখন কোন সুযোগ নেই। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো অলৌকিক কিছু নয়।
এ ব্যাপারে কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. আখতারুজ্জামান জানান, প্রকৃতিকভাবে বা গাছের মধ্যকার শরীর বৃত্তীয় কোন প্রভাবে বা অনাহুত কোন মিউটাজেনিক এজেন্টের দ্বারা সৃষ্ট মিউটেশন বা কৌলিতাত্বিক পরিবর্তনের জন্যেই এমনটি হতে পারে। এর সাথে অন্য কোন বিজ্ঞানভিত্তিক সম্পর্ক নেই। যা কিছু জনশ্রুতি রয়েছে। সেসব নিছকই গুজব, বা কুসংস্কারসিদ্ধ মানুষের বিশ্বাস ভিন্ন আর কিছুই নয়। এসব গুববে কান দিয়ে অযথা টাকা-পয়সা খোয়ানোর কোন মানেই হয়না।
মেহেরপুর টিএন্ডটি জামে মসজিদের খতিব মুফতি হাফিজুর রহমান বলেন, কোন গাছের নীচে মানত করা সম্পূর্ণ রুপে হারাম। এটি শিরক, যা মূর্তি পূজার শামিল। এগুলো ইসলাম কখনই সমর্থন করে না। এগুলো যারা বিশ^াস করবে তারা জাহান্নামি হবে।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, এটিকে কেন্দ্র করে কেউ সুবিধা নিতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দ্রুত সেখানে অভিযান চালিয়ে প্রতারণ চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হবে। এসব থেকে দুরে থাকার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।

অন্যরকম