খোলা বাজার২৪, রোববার, ২৪ জুলাই ২০১৬: জেসিকা চাকমা, রাঙ্গামাটি : রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার ৪টি উপজেলায় ৮৬টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও শিক্ষিকারা। বর্তমানে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন কাটছে তাদের। গত ৬ মাস ধরে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ আছে বলে জানান শিক্ষকরা।
জানা যায়, জেলার বিলাইছড়ি, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও রাজস্থলী- এই চার উপজেলায় মোট ৮৬টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০০৯ সাল থেকে ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ প্রকল্পের অর্থায়নে ‘মৌলিক শিক্ষা সহায়তাদান’ প্রকল্প হিসাবে চালু করে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। ২০১৫ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। প্রকল্পটি চালু অবস্থায় বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণের অর্ন্তভূক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ করা হয়নি। তার আগেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষক- শিক্ষিকাদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা জানিয়েছেন, জেলার চার উপজেলার ৮৬টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এতে ওইসব বিদ্যালয়ের প্রায় ৬ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ভবিষ্যৎ অনিশ্চত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন কর্মরত শিক্ষকরা।
তারা বলেন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন সুবিধা (সিএইচটিডিএফ) প্রকল্পের আওতায় ‘মৌলিক শিক্ষা সহায়তা দান’ প্রকল্প নামে ২০০৯ সাল থেকে জেলার চার উপজেলা জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী ও বাঘাইছড়ির দুর্গম ও প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় মোট ৮৬টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এতে ওইসব দুর্গম এলাকার বঞ্চিত শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ হয় প্রতিটি বিদ্যালয়ে চারজন করে স্থানীয় মোট ৩৩৬ শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীর। শর্ত ছিল প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণসহ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতে অন্তর্ভূক্ত করার। কিন্তু প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৫ সালের জুন মাসে শেষ হয়ে গেলেও বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ ও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতে আনা হয়নি। তারপরও পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। অথচ গত ৬ মাস ধরে বেতন-ভাতাও পাচ্ছেন না তারা। শিক্ষকরা বেতন-ভাতা না পাওয়ায় বর্তমানে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হওয়ার পথে। এতে ওইসব বিদ্যালয়ের প্রায় ৬ হাজার শিশুর পড়ালেখা নিয়ে সম্পূর্ণ অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় বিপাকে পড়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। পাশাপাশি সন্তানদের পড়ালেখা নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন অভিভাবকরা।
জুরাছড়ি উপজেলা বেসরকারি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শিমেইতলী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্নেহ কুমার চাকমা, বিলাইছড়ি উপজেলা বেসরকারি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শালবাগান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবাস চন্দ্র চাকমাসহ অন্য শিক্ষকরা বলেন, তারা বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ ও চাকরির বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতে হস্তান্তর হওয়ার আশায় কেবল ৪ হাজার ৭শ’ টাকা সম্মানি নিয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। কিন্তু পাঁচ বছর পর্যন্ত অল্প বেতনে চাকরি করার পরও বিদ্যালয়গুলো আজও জাতীয়করণের আওতায় আনা হয়নি। তাদের বেতন-ভাতাও রাজস্ব খাতে অন্তর্ভূক্ত হয়নি। বর্তমানে তাদের বেতন-ভাতাও বন্ধ হয়ে গেছে। গত ৬ মাস ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এ অবস্থায় পাঠদান চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বেতন-ভাতা দেয়া না হলে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। বর্তমানে কষ্ট করে হলেও পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তারা বিষয়টির মানবিক দিক বিবেচনা করে ওইসব বিদ্যালয় অবিলম্বে জাতীয়করণসহ শিক্ষকদের চাকরি ও বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতে অন্তর্ভূক্তির জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষকরা জানান, এ বিষয়ে একাধিকবার রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদকে আবেদন দিয়েছেন। চেয়ারম্যান চলতি বছর গত জুনে বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণ এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতে হস্তান্তরসহ নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্যনির্বাহী কর্মকর্তা এসএম জাকির হোসেন বলেন, বিদ্যালয়গুলো প্রকল্পের আওতায় ইউএিনডিপির অর্থায়নে চালু করা হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেগুলো জাতীয়করণের চেষ্টা চলছে। পরে বিস্তারিত জানা যাবে।