Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

41খোলা বাজার২৪, রোববার, ২৪ জুলাই ২০১৬: নওগাঁ: নওগাঁ প্রতিনিধি : এলাকায় উজান থেকে নেমে আসা পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁ-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের মির্জাপুর সড়কে (বাঁধ) আবারও ফাটল দেখা দেয়ায় যে কোন সময় ভেঙ্গে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফাটলের সংবাদ পেয়ে শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান ওই স্থান পরিদর্শণ করেন। এ সময় জেলা প্রশাসন, রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন স্তারের সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের সাথে এক মত বিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিদর্শনের সময় সড়কের বেহাল অবস্থা দেখে রাস্তা রক্ষার জন্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। শনিবার সকাল থেকে ওই স্থানে মাটি ফেলে রক্ষার জন্যে চেষ্টা করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। সড়কে ফাটল দেখা দেয়ায় এলাকাবাসিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এদিকে গত শুক্রবার সকাল থেকে নওগাঁ-আত্রাই সড়ক পথে ভারি ও মাঝারি যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়েছে। এতে বিপাকে পরেছে আত্রাই উপজেলা প্রায় দুই লাখ মানুষ।
স্থানীয়রা অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলা, রাস্তার কাজে বালু দিয়ে নি¤œমানের কাজের মাধ্যমে সরকারি লাখ টাকা পকেটে তোলায় পরপর দুই বছর একই স্থানে যায়। উধ্বর্তন কর্মকর্তার নজদারিতে দ্রুত সড়কটি সঠিক ভাবে রক্ষা করা ও অনিয়ম-দুনীর্তিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, জেলার আত্রাই উপজেলার ভবানিপুর, মির্জাপুর, রসুলপুর, হাটকালুপাড়া এলাকায় আত্রাই নদী ও ছোট যমুনা নদীর মোহনা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দুই নদীতে সামান্য পানি বৃদ্ধি পেলেই মুহূর্তের মধ্যে ভয়াঙ্কর রূপ ধারন করে। গত ১৪ সালের মত গত বছর ২৩ আগষ্ট ভোর রাতে আত্রাই-নওগাঁ চলাচলের একমাত্র আঞ্চলিক সড়কের মির্জাপুর নামক একই স্থানে ভেঙ্গে যায়। এতে রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানি বন্দি হয়ে পরেন দেড় লাখ মানুষ। এতে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হন। সড়কটির দুই পাশে ব্লক দেয়া ও স্লুইস গেইট নির্মাণের দাবি জানানো হয়ে আসছিলেন এলাকাবাসি। ঘটনারপর দীর্ঘ ৯ মাস পর সড়ক ও জনপদ বিভাগ থেকে ভাঙ্গা স্থানটি মেরামতের জন্যে ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, সংশ্লিষ্টার ব্লক দেয়া ও স্লুইস গেইট নির্মাণে কোন উদ্যোগ না গ্রহণ করেই টাকা বরাদ্দের পর তরিঘরি করে নাম মাত্র মাটি কেটে রাস্তা মেরামত করা হয়েছে। সড়কটি সঠিকভাবে মেরামত না করায় নওগাঁ-আত্রাই সড়কের পুরোপুরি যানবাহন চলাফেরা করতে পারে না। এতে সাধারণ যাত্রীদের মতো ব্যবসায়ীদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এদিকে আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলার তিন লাখ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
মির্জাপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন, আব্দুল হালিম জানান, ভাঙ্গেনের আগে সড়ক যে উচ্চতায় ছিল তার চেয়ে এ বছর ৫ থেকে ৭ ফিট সড়ক নিচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও সড়কের একেবারে গোরা (নীচ) থেকে মাটি কেটে সড়কটি মেরামত করা হয়েছে।
ভবানীপুর গ্রামের শেখ মোহাম্মদ জানান, ভাঙ্গাস্থানে সড়কের কাজ করার সময় কোন সিডিউল টাঙ্গানো হয়নি।
স্থানীয় নাজমুল হক নাহিদ জানান, গত বছর ভাঙ্গনের স্থানটি মেরামতের সময় রাস্তার একেবারে নিচ থেকে মাটি ও বালু তুলে দায় সাড়াভাবে রাস্তটি মেরামত করায় ভেঙ্গে গেছে। গত কয়েক দিন আগে উজান থেকে নেমে আসা সামান্য বৃষ্টিতে সড়কের কিছু অংশ ধ্বসে গেছে। এ বছরও বন্যায় যে কোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে মাটি ফেলে সড়কটি (বাঁধ) রক্ষা করার চেষ্টা করা হলেও তা রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে জানান।
রাণীনগর উপজেলার বড়গাছা গ্রামের বিশ্বজিত কুমার জানান, গত বছর সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের প্রায় ৩০ বিঘার ধান পানিতে তলিয়ে সম্পন্ন নষ্ট হয়ে যায়। তাদের মত এলকার হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হন। এ বছরও ওই স্থানের অবস্থা ভালো নয় এমন জেনে এখন পর্যন্ত কোন জমিতে আমন ধান চাষ করার জন্যে জমি তৈরী করতে সাহস পাইনি।
শাহাগোলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক শামছুল আলম জানান, গত বছরও একই স্থানে ভাঙ্গনে ৪২ লাখ টাকা খরচ করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বরাদ্দের টাকা লুটপাট করায় এ বছরও সড়কটি ভেঙ্গে যায়। সেই স্থানে ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, সংশ্লিষ্টার তার না করে এক-তৃতীয়াংশ কাজ করে বাঁকি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ওই স্থানে ব্লক এবং একটি স্লুইট গেইট নির্মাণের দাবি জানানো হলেও তার কোন উদ্যোগ নেয়নি সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড। নি¤œমাণের কাজ করার ঘটনায় জড়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
নওগাঁর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল হক বলেন, সড়কটি যাতে না ভেঙ্গে যায় সে জন্যে শনিবার সকাল থেকে শ্রমিক লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আগামি তিন/চার দিনের মধ্যে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হবে আশা করা হচ্ছে। পরপর দুই বছর ভাঙ্গন স্থানটি মেরামত করার সময় অনিয়ম ও টাকা লুটপাটের প্রশ্ন করা হলে তিনি কৌশুলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বন্যায় পানির বেশি চাপ হলে কোন কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাশাসক ড. আমিনুর রহমান জানান, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মির্জাপুর স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ সংবাদের ভিত্তিতে পরিদর্শণ করা হয়েছে। রাস্তাটি প্রয়োজনের তুলনায় নিচু হওয়ায় সড়কটি উপর দিয়ে দ্রুত আরো মাটি ফেলে রক্ষা করার জন্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেখা হয়েছে। সড়কের (বাঁধ) মেরামতের অনিয়মের ব্যাপারে প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।