Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

1kখোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৫ জুলাই ২০১৬: গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে অপারেশনের আগে জঙ্গিদের কাছে টাকা আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের একজন ব্যবসায়ী এই টাকা পাঠিয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। তবে ওই ব্যবসায়ীর পরিচয় এবং কত টাকা এসেছে তদন্তের স্বার্থে এখনই তা প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। হলি আর্টিজান বেকারিতে অপারেশনের ঘটনায় তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মধ্যপ্রাচ্য থেকে টাকা আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘যে চ্যানেলে টাকা এসেছে ওই চ্যানেলটিও আমরা ধরে ফেলেছি। সেই টাকা থেকেই অভিযানে অংশ নেওয়া জঙ্গিরা থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করে এবং অস্ত্র কেনে। এমনকি অপারেশনের আগে যারা অস্ত্র এনে দিয়েছে তাদেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। এতে একটি রাজনৈতিক দলের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলেও জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘গুলশানের হলি আর্টিজানে অপারেশনের পরিকল্পনাকারীরা শনাক্ত হয়েছে। পরিকল্পনাকারীদের ধরতে আমাদের অভিযান চলছে। তবে কাউকেই নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছে না। সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডগুলোর একটার সঙ্গে আরেকটার মিল রয়েছে। এই কাজগুলো করেছে এই গ্রুপ। এদের মাস্টারমাইন্ডও একই। ফলে চক্রটি ধরতে পারলে শেকড়ে পৌঁছা যাবে। বন্ধ করা যাবে জঙ্গিদের সব ধরনের তৎপরতা। তবে গোয়েন্দা ও পুলিশের তৎপরতার কারণে ওরাও সতর্ক হয়ে গেছে। কিন্তু কোনোভাবেই পুলিশ গোয়েন্দাদের হাতে থেকে তাদের রেহাই মিলবে না।’ হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় যে মামলা হয়েছে সেটির তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটি)। সিটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, রিমান্ডে যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এই সংশ্লিষ্ট অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাদের কাছ থেকেও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। যাতে এই হামলার আগে-পরে অর্থের যে হিসাব পাওয়া গেছে তা খুবই ভয়ঙ্কর। মধ্যপ্রাচ্য থেকে এই হামলার আগে টাকা এলেও ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে আগেও টাকা এসেছে জঙ্গিদের কাছে। আবার বাংলাদেশি নামকরা ব্যবসায়ীও জঙ্গিদের টাকা দেন। সব তথ্য প্রমাণ নিয়েই এসব ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে তদন্তকারীরা বলছেন, গুলশানের হামলার সঙ্গে একটি রাজনৈতিক দলের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ওই রাজনৈতিক দলটি তাদের কয়েকজন নেতাকে বাঁচাতে অর্থ ঢালছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের কয়েকজন নেতার যোগসূত্র পাওয়া গেছে। মাস্টারমাইন্ডদের সঙ্গে রয়েছে তাদের সম্পৃক্ততা। ফলে পুরো চক্রটিকে ধরার জন্য দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
এদিকে দুবাই থেকে হুজির পলাতক আমীর মুফতি শফিকুর রহমান কয়েক দফায় তার লোকজনের কাছে টাকা পাঠিয়েছেন। টাকা পাঠানো সংক্রান্ত কাগজপত্র গত শনিবার পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানা এলাকার একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সেখান থেকে ডিবি পুলিশ হুজির পলাতক ও কারাবন্দীদের একটি তালিকা উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় ওই বাড়ি থেকে পুলিশ হুজিবি’র ঢাকার সভাপতি (উত্তর) মুফতি মাওলানা নাজিমউদ্দিনসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। অন্য দু’জন হলেন প্রকৌশলী সাইদুজ্জামান (২৪) ও আনাস (২১)।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শহীদুল্লাহ ওইদিন জানিয়েছিলেন, শনিবার ভোরে পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানা এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। বাড়িটি হরকাতুল জিহাদের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহূত হতো। ধারণা করা হচ্ছে, দুবাইয়ে মুফতি শফিকুর রহমান আত্মগোপন করে আছেন। মুফতি শফিকুর রহমান রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। বিভিন্ন সময়ে হরকাতুল জিহাদের গ্রেফতার হওয়া সদস্যদের বর্তমান কি অবস্থা এবং তাদের পরিবারকে কি ধরনের সাহায্য করা হয়েছে- সে সম্পর্কে কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া একটি তালিকায় হরকাতুল জিহাদ তাদের সদস্যদেরকে কিভাবে আর্থিক সহায়তা করে থাকে সে সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য রয়েছে। যা এখনো যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। ইত্তেফাক