Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

34খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২৭ জুলাই ২০১৬: রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় নিহত নয়জনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এক যুবককে তাদের ছেলে বলে দাবি করেছে দুটি পরিবার।
নিহতের মধ্যে নিজেদের সন্তান রয়েছে বলে জানিয়েছে তিনটি পরিবার। ছবির ষষ্ঠ যুবককে সেজাদ রউফ অর্ক ওরফে মরক্কো বলে তার বাবা তৌহিদ রউফ ধারণা করছেন, যদিও তিনি নিশ্চিত নন।
এ বিষয়ে ডিএমপির উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘তৌহিদ রউফ আমাদের কাছে এসে বলেছেন- ‘সেজাদ আমার ছেলে, আমরা ছবি দেখে ধারণা করছি।’ তখন লাশ শনাক্তে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নিয়ে যাওয়া হয় তৌহিদকে।
তৌহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা লাশ দেখেছি। চেহারায় পুরোপুরি মিল নেই। ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে।’
ঢাকা মেডিক্যালে লাশের ময়নাতদন্তকারী ফরেসনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল জানান, তৌহিদ রউফকে বলে দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে।
সেজাদ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালানোর পর কমান্ডো অভিযানে নিহত নিবরাজ ইসলামের বন্ধু। তারা দুজনই মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে পড়তেন। শাহবাগ থানার একটি মামলায়ও দুজনই আসামি ছিলেন।
রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার বাড়ি থেকে সেজাদ গত ৬ ফেব্র“য়ারি বেরিয়ে যাওয়ার পর আর ফেরেননি জানিয়ে তার বাবা ভাটারা থানায় জিডি করেছিলেন।
নিবরাজও ৩ ফেব্র“য়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে তার পরিবারের ভাষ্য। এরপর ১ জুলাই গুলশানের ক্যাফেতে নিহত হওয়ার পর জানা যায়, তিনি ফেব্র“য়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঝিনাইদহের একটি মেসে ছিলেন।
ওই মেসে নিবরাজের আরেক সঙ্গী আবীর রহমানও ছিলেন, যিনি ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়ায় পুলিশের উপর হামলা চালানোর পর গুলিতে নিহত হন।
সেজাদ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ঢাকা মেডিকেলে লাশ শনাক্তের সময় তার বাবার সঙ্গে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাও ছিলেন।
তবে বিপত্তি বেধেছে একটি ছবির যুবকের দাবিদার দুই পরিবার হওয়ায়। কল্যাণপুরে নিহতদের ছবির অষ্টম যুবককে নিজেদের সন্তান বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর দুটি পরিবার।
আনোয়ারা উপজেলার ফুলগাজীপাড়ার বরুমছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিআজিজুল হক দাবি করছেন, ছবির অষ্টম যুবক তার ছেলে সাব্বিরুল হক কণিক।
চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ার বাসিন্দা আজিজুল জানান, তার ছেলে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সাব্বিরুল গত ফেব্র“য়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ছেলে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে ঘর ছেড়েছে ধারণা করলেও ক্ষোভে থানায় জিডি করেননি।
এদিকে ছবির যে যুবককে সাব্বির বলছেন তার বাবা আজিজুল, সেই যুবককে তার সন্তান জোবায়ের হোসেন বলে দাবি করছেন নোয়াখালীর সদরের পশ্চিম মাইজদীর আব্দুল কাইউম।
জোবায়ের নোয়াখালী সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। গত ২৫ মে থেকে তিনি নিখোঁজ জানিয়ে গত ১২ জুলাই থানায় জিডি করে তার পরিবার।
পুলিশ খবর দেওয়ার পর সুধারাম থানায় গিয়ে নিহত নয়জনের ছবি দেখে একজনকে নিজের ছেলে জোবায়ের বলে দাবি করেন কাইউম। এরপর তিনি ঢাকায় রওনা হন। কাইউম জানান, গত ২৫ মে তার ভাস্তে বাহাদুরের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ জোবায়ের।
ছেলেকে হারানোর জন্য জামায়াতের ‘রোকন’ বাহাদুরকে দায়ী করে কাইউম বলেন, ‘সে আমার ছেলেকে শিবিরের রাজনীতিতে নিয়ে গিয়েছিল। তার প্ররোচনায় আমার ছেলে জঙ্গি তৎপতায় জড়িয়ে পড়ে।’
এ বিষয়ে নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘জোবায়েরকে জঙ্গি সন্দেহে পুলিশ খুঁজছিল। তার চাচাত ভাই বাহাদুরের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’
ডিএমপির উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেছেন, নিহতদের মধ্যে সন্তান রয়েছে বলে যারা দাবি করছেন, তাদের ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। তারা মৃতদেহ দেখে পরিচয় নিশ্চিত করবেন। যদি তাতে নিশ্চিত করা না যায় তাহলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় বের করা হবে।