Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

29খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৯ জুলাই ২০১৬: : কুড়িগ্রামে ১২তম দিনে বন্যায় বানভাসির সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে এতে বানভাসী লোকের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৬ লাখে। নদনদীর সাথে পাল্লা দিয়ে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দী মানুষের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে চলে গেছে। বিপুল সংখ্যক বানভাসি মানুষের জন্য সরকারি ত্রান কোনভাবেই তাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। দুর্গম চরের মানুষ বন্যা ও বৃষ্টির মধ্যে অমানবিক জীবন-যাপন করছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ। বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে নারু দাস (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এপর্যন্ত পানিতে ডুবে কুড়িগ্রামের সদর,নাগেশ্বরী ও উলিপুরে ৩ জনের সলিল সমাধি হল। এদিকে,জেলার রৌমারী উপজেলা সম্পুর্ণরুপে বন্যা কবলিত হওয়ায় রৌমারী উপজেলাকে সরকারিভাবে দুর্যোগপুর্ণ উপজেলা হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্ল্যাহ্ মামুন তালুকদার। এছাড়া জেলার ৯ উপজেলায় কমেনি সাড়ে ৬ লক্ষাধিক বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘ হচ্ছে। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও ল্যাট্রিনের অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে উচু বাধ, পাকা সড়কে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার পরিবার। বন্যা কবলিত এলাকার সবগুলো উচু বাধ, পাকা সড়ক ও বিভিন্ন উচু প্রতিষ্ঠানে বানভাসী পরিবার গুলো তাদের গবাদি পশু নিয়ে গাদা-গাদি করে বসবাস করছে। আশ্রয় নেয়া পরিবার গুলো জানায় জরুরী ভিত্তিতে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করা হোক। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আক্তার হোসেন আজাদ জানান বন্যা দুর্গতের মাঝে এপর্যন্ত ৫শ ৭৫ মেট্রিক টন চাউল ও সাড়ে ১৫ লাখ টাকা বিতরন করা হয়েছে । তবে জন প্রতিনিধিরা বলছেন এ ত্রান সকল বানভাসীর জন্য অপ্রতুল। বেশির ভাগ বানভাসীর ভাগ্যে ত্রান সহায়তা না জোটায় এক বেলা খেয়ে না খেয়ে থাকার অভিযোগ তাদের। জেলার ৯ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সাড়ে ৫শ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক ও ৪০ কিলোমিটার নদ-নদীর তীর রক্ষা বাঁধ। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ২ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. এস এম আমিনুল ইসলাম জানান, দুর্গত এলাকায় ৮৫টি মেডিকেল টিম চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে মেডিকেল অফিসার রয়েছে তারা আমাদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য খোলা আশ্রয়কেন্দ্রসহ সবখানে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। পানি কমার সাথে সাথে হয়ত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে তার আগে বানভাসীদের সচেতন করাও হচ্ছে বলে এ সিভিল সার্জন জানান। প্রয়োজনে যে কোন স্বাস্থ্য সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মকবুল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চলমান বন্যায় ৮ হাজার ৩৭৩ হেক্টর ফসল জলমগ্ন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন কৃষক। এরমধ্যে শাকসবজি ১ হাজার ৮৯ হেক্টর, বীজতলা ২ হাজার ৪১৮ হেক্টর, রোপা আমন ৩ হাজার ১৪৯ হেক্টর, আউশ ৮৯১ হেক্টর ও পাট ৮২৬ হেক্টর। পাট কর্তনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আকতার হোসেন আজাদ জানান, এ পর্যন্ত ৬৭৫ মে. টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বিতরণ হয়েছে ৫৭৫ মে.টন। প্রাপ্ত ১৮ লাখ টাকার মধ্যে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আরো ২০ লাখ টাকা ও ৭০০ মে’ টন চাল চাওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহফুজুর রহমান জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরিবর্তিত রয়েছে তিস্তা, দুধকুমারসহ অন্যান্য নদীর পানি।