খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১ আগস্ট ২০১৬: , শেরপুর :শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া রেঞ্জের গজনী বিট এলাকার গান্ধিগাঁও গ্রামের শইরাচালী নামক স্থানে একটি বড় বন্য হাতির মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। উক্ত খবর পেয়ে রাংটিয়া রেঞ্জের গজনী বিট কর্মকর্তা আব্দুর রফিক ঘটনাস্থলে যান। শেরপুর জেলার বন্য প্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ উক্ত স্থানে যায়। পরে মৃত হাতিটির ছুরত হাল তৈরী করার জন্য ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা পরিদর্শন করেন। মৃত হাতির ময়না তদন্তের রিপোর্ট তৈরী করার কাজ শেষ করে পরে মৃত হাতিটি পাহারের গর্তে পুতে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রকাশ থাকে যে, মৃত হাতিটির পিঠের উপর একটি ক্ষত চিেহ্নর দাগ দেখা গেছে। তবে কি কারণে হাতিটি মারা গেছে বিষয়টি অজ্ঞাত রয়েছে গেছে। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন থেকে অত্র শেরপুর সীমান্ত অঞ্চলে প্রায়ই বন্য হাতির মৃত্যু হচ্ছে মানুষের হাতে আবার হাতির পায়ে পৃষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে মানুষ এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়।
শেরপুর জেলার ৩টি উপজেলা ৬০ কিমি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চল। এসমস্ত পাহাড়ী অঞ্চলের গ্রামগুলিতে বন্যহাতির তান্ডবে প্রাণহানির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং পঙ্গুত্বের সংখ্যাও কম নয়। দীর্ঘদিন থেকে ভারত থেকে নেমে আসা বন্যহাতির দল খাদ্যের সন্ধানে বাংলাদেশের বনাঞ্চলে প্রবেশ করে। কিন্তু বাংলাদেশের বনাঞ্চলে পূর্বের মতো পশুদের খাবার যে সমস্ত গাছ-পালা থাকা দরকার তা নেই। ফলে হাতির দল খাদ্যের সন্ধানে বনাঞ্চলের লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে কৃষকের গাছ-পালা, ফসল ও ঘর-বাড়িতে তান্ডব চালায়। এই সমস্ত রক্ষায় কৃষকেরা রাতভর জেগে মশাল জ্বালিয়ে নির্ঘুম রাত কাটায়। এতেও শেষ রক্ষা হয়না এই সমস্ত হৃত-দরিদ্র কৃষক ও দরিদ্র শ্রেণীর লোকদের। প্রতিনিয়ত এই সমস্ত বন্য হাতির দল সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে তান্ডব চালায়। এতে প্রায়ই প্রাণহানির সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে এবং পঙ্গুত্বের সংখ্যাও কম নয়। উল্লেখ্য, এই সমস্ত দরিদ্র কৃষক ও নিমাœ আয়ের মানুষেরা পাহাড়ের উঁচু জমিতে নানা জাতের সবজি চাষাবাদ করে জীবন-যাপন করে। কিন্তু হাতির অত্যাচারে বাপ-দাদার ভিটা মাটি ও জায়গা জমি ছেড়ে অন্যত্রে যাওয়ার উপায়ও নেই। আবার এইখানে বসবাস করলে হাতির পায়ে পৃষ্ট হয়ে জীবন দিতে হচ্ছে। এই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বা জীবন দিয়ে আর কতকাল এই সীমান্ত অঞ্চলে বসবাস করতে হবে। এই সমস্ত সীমান্তবাসী দু:খ দূরদশা কেউ যেন শুনতে পায় না। অত্র সীমান্ত অঞ্চলের দু:খ দূরদশা লাঘবের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন কি? প্রকাশ থাকে যে, পশু-পাখির জন্য বনাঞ্চলে যদি পূর্বের ন্যায় পশুদের খাদ্য থাকতো তাহলে হয়ত এই সমস্ত পশুরা লোকালয়ে প্রবেশ করত না। বিগত সময় এই গারো পাহাড়ে অভয় অরণ্য ছিল। অর্থাৎ পশুদের খাবার যে সমস্ত গাছ-পালা থাকা দরকার তা সবই ছিল। এই সমস্ত গাছ-পালা উজার হওয়ায় পশুর দল প্রতিনিয়ত লোকালয়ে ঢুকছে। যে কারণে মানুষ আর পশুর মধ্যে বাঁচা মরার লড়াই চলছে। বিগত ৬ মাসে বন্য হাতির প্রাণ হানির সংখ্যাও কম নয় ১০/১২টি। তেমনি মানুষ এবং হাতি মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। বর্তমানে বন্যহাতির দল ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের হালচাটি, নকশি, গুরুচরণ দুধনই এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। সম্প্রতি দুধনই এলাকায় কৃষকদের ফসলী ক্ষেতে তান্ডব চলাকালিন অবস্থায় কৃষকরা বাধা দিলে জঙ্গলে ফেরৎ যাওয়ার সময় হাজী রুস্তম আলী (৫৫) নামের এক কৃষক তার নিজ বাড়ির ওঠানে থাকাবস্থায় হাতির শুড় দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এবং তার পুত্র নিয়ামত উল্লাহ (২৩) তার পিতাকে বাঁচাতে গিয়ে গুরতর আহত হয়। বিজ্ঞ মহল মনে করেন, পশুদের আবাস্থলের জন্য গারো পাহাড়ে পশুদের জন্য অভয়ারণ্য হিসাবে বাঁশ বাগান, তারাই বাগান, কলাগাছসহ বিভিন্ন বন্যজাতীয় গাছ-পালা লাগানো হলে হয়ত বন্যহাতি ও অন্যান্যপশুদের আক্রমণ থেকে সীমান্তবাসীরা রক্ষা পাবে এমন ধারণা বিজ্ঞ মহলের।