Thu. Jun 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

03kখোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২ আগস্ট ২০১৬: হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর এক মাস পার হয়েছে। এরই মধ্যে ঐ হামলার নেপথ্যে যারা জড়িত ছিল তাদের ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বা ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এখন তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে জানান ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান। তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এরইমধ্যে হামলাকারীদের চিহ্নিত করেছি। আরো নিশ্চিত হতে তাদের ডিএনএ টেস্টও করা হচ্ছে। হামলাকারীরা যে দু’টি বাসায় বসে হামলার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে তাও আমরা চিহ্নিত করেছি। আটক করেছি তাদের আশ্রয়দাতাদের। আর যারা হামলার প্রত্যক্ষদর্শী তাদের ৬ জন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ‘
মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘এই হামলার নেপথ্যে কারা এবং আরো যারা জড়িত তাদের ব্যাপারেও আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তাদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
গুলশান হামলা নিয়ে তদন্ত করছে ডিএমপির ‘কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম’ ইউনিট। এখন পর্যন্ত চার বিদেশিসহ ৩১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংস্থাটি।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ‘‘গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড হচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্যানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী। তাঁর পরিকল্পনাতেই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালানো হয়। তামিম চৌধুরী প্রায় দুই বছর আগে ক্যানাডা থেকে দেশে আসেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি এখন বাংলাদেশেরই কোথাও আত্মগোপন করে আছেন। ”
তাঁদের দাবি, ‘‘গুলশান হামলায় জড়িত জঙ্গিরা উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলের একাধিক বাসায় প্রশিক্ষণ নেয়। গত সপ্তাহে কল্যাণপুর অভিযানে নিহত ঢাকা অঞ্চলের জেএমবি’র কমান্ডার রায়হান কবির ওরফে তারেক ছিল তাদের প্রশিক্ষক। এছাড়া আরও কয়েকজন প্রশিক্ষককে শনাক্ত করা হয়েছে। যাদের কাজই হলো যারা অপারেশনে যাবে তাদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া। ”
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন।
জঙ্গিরা কোনো ধরনের মাদক সেবন করেছিল কিনা বা অপারেশনের আগে তাদের শরীরে কোনো মাদক ‘পুশ’ করানো হয়েছিল কিনা তা পরীক্ষার জন্য তাদের রক্ত ও চুলের নমুনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফবি আই ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
গুলশান হামলার ঘটনায় নিহত জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে এরইমধ্যে চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ই-ব্লকের ৬ নম্বর সড়কের টেনামেন্ট-৩-এর ৬/এ ফ্ল্যাটের মালিক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি জিয়া উদ্দিন আহসান, তাঁর ভাগ্নে আলম চৌধুরী ও ভবনের কেয়ারটেকার মাহবুবুর রহমান তুহিন। এছাড়া আরেক জঙ্গি আস্তানা শেওড়াপাড়ার ৪৪১/৮ নম্বর বাসার মালিক নূরুল ইসলামকেও ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একদফা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা এখন কারাগারে আছেন।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম এবং আফতাব বহুমুখী ফার্ম-এর এমডি ফজলে রহিম শাহরিয়ারের ছেলে ক্যানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ খান-এর খোঁজ এখনও পাওয়া যাচ্ছেনা বলে তাঁদের পরিবার দাবি করছেন। এ প্রসঙ্গে ডিএমপি উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা তাদের দু’জনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কিন্তু এখন তারা আর পুলিশের কাছে নেই। তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এখন তারা কোথায় আছে তা আমাদের জানা নাই। ”
রাজধানী ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান ক্যাফেতে ১ জুলাই রাতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এর পরদিনই ছিল শব-এ কদর। ঐ হামলায় ১৮ বিদেশিসহ ২৮ জন নিহত হয়। এর মধ্যে ৫ জন জঙ্গি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এটাই প্রথম ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে এখনো নিহত ছয় জঙ্গির মরদেহ পরে আছে। মাসুদুর রহমান জানান, ‘‘এখনো তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ নেয়ার জন্য কেউ যোগাযোগ করেনি। আর যোগাযোগ না করলে শেষ পর্যন্ত লাশ দাফনের জন্য আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামকে দেয়া হবে। ”
প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই রাতে গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে বনানি থানার ওসি সালাহ উদ্দিন খান ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ছাড়াও ১৭ জন বিদেশি নাগরিক এবং তিন জন বাংলাদেশি নিহত হন। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত যৌথ অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’এ পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। জীবিত উদ্ধার করা হয় তিন বিদেশি নাগরিকসহ ১৩ জিম্মিকে। ডয়েচ ভেলে