খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২ আগস্ট ২০১৬: বন্ধু রুপম থেকে এমন কিছু শুনবে তা কল্পনাও করেনি দিয়া। সবচেয়ে কাছের বন্ধুটা আজ তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। নিঃসন্দেহে অন্য যে কোন ছেলে থেকে রুপমকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে দিয়া কিন্তু কখনো প্রেমিক বা জীবনসঙ্গী হিসেবে ভাবেনি ওকে।
বেশ অনেক ক্ষেত্রেই উপরের ঘটনার মত ঘটনা ঘটে থাকে। ছেলে এবং মেয়ে যদি একে অপরের বেষ্ট ফ্রেন্ড বা সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয় একটা সময় দুজনের কেউ একজন প্রেমে পড়ে যায়। তখনই দোটানার শুরু হয়। ভালো বন্ধু কী ভালো জীবনসঙ্গী হতে পারে?
পাট্রেশিয়া এলেন, পেশায় একজন থেরাপিস্ট ও সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ। তিনি মনে করেন, ভালো বন্ধু, ভালো জীবনসঙ্গী হিসেবে উত্তম নন। তিনি বলেন, ‘আপনার ভালো বন্ধুই যে আপনার ভালো জীবনসঙ্গী হবে, এ ধারণা ঠিক নয়’। ভালোবাসা আর বন্ধুত্ব দুইটী ভিন্ন বিষয়। হতেই পারে, আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটির সাথে আপনি খুব সহজেই মিশতে পারেন বা নিজেকে তার কাছে সহজেই প্রকাশ করতে পারেন। তবে তার মানে এই নয় যে আপনার আর তার জুটি সেরা।
অনেকে প্রিয় বন্ধুর সাথে অন্তরঙ্গ সময় কাটান এবং ভাবেন তাকে বিয়ে করলেই আমি সারাজীবন সুখে থাকবো। ব্যাপারটা আসলে এতটা সোজা নয়। বিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। সেখানে বন্ধুত্বের আবদার বা অনুরোধ ঠিকমত খাটেনা।
একজন ব্যাক্তি, অন্য একজন ব্যাক্তির প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে ৩টি বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। দুজনের মাঝে রসায়ন, বোঝাপড়া এবং যোগাযোগ। এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয় ঘটলে ভালোবাসা বা প্রেমের সৃষ্টি হয়। আপনার বন্ধুর সাথে হয়ত আপনার বোঝাপড়াটা বেশ ভালো কিন্তু আপনাদের রসায়নটা নয়। তাই হুট করে কাছের বন্ধুর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর আগে একটু সবদিক ভেবে নিন।
এলেন ব্যাখ্যা করেন, বন্ধুর সাথে যোগাযোগটা হয় সমান সমান। আর ভালোবাসার মানুষ বা জীবনসঙ্গীর ক্ষেত্রে যোগাযোগের হার উঠা নামা করে সময়ের সাথে। বন্ধুত্বে তেমন কিছুই খেয়াল রাখতে হয়না কিন্তু বিয়ের সময় অনেকগুলো দিক মাথায় রেখে বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়।
হিসেব করে দেখা যায়, কাছের বন্ধুদের যারা বিয়ে করে তাদের সম্পর্ক কয়েক বছরের বেশি স্থায়ী হয়না। এলেন বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিয়ের পর প্রথম বছর তাদের অসাধারণ কাটে, ২য় বছরটাও ভালোই কাটে। কিন্তু ৩য় বা ৪র্থ বছরে গিয়ে সম্পর্কে একটা একঘেয়ামি চলে আসে। আর তখন বন্ধুত্বটা তিক্ততায় পরিণত হয়ে পড়ে।
লেখিকা ও সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ন্যান্সি পিনা অবশ্য, ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি মনে করেন, এমন কাউকে বিয়ে করা অবশ্যই ভালো যার সাথে আগে থেকে বন্ধুত্ব রয়েছে। বন্ধুত্ব থাকলে একে অন্যের ভালোলাগা, মন্দলাগাগুলো জানতে পারে ফলে তাদের মধ্যে আবেগ ও ভালোবাসাটা বেশি কাজ করে।
তিনি বলেন, ‘বন্ধুত্ব থেকে বিয়ের সম্পর্কের সৃষ্টি থাকলে সেখানে আবেগজনিত বন্ধনটা বেশ পোক্ত হয়। তবে বন্ধুত্ব থেকে প্রেম বা বিয়ের সম্পর্কে যাওয়ার আগে অবশ্যই দুজন দুজনের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতে হবে। আপনি কখনোই আপনার ভাললাগাটা জোর করে আপনার বন্ধুর উপর চাপিয়ে দিতে পারেন না।’
সব মিলিয়ে বলা যায়, বন্ধু বন্ধু হিসেবেই বেশি ভালো। বন্ধুত্ব সম্পর্কটা সারাজীবন সেভাবেই থাকে। জীবনসঙ্গী হিসেবে কাছের বন্ধুকে বেছে নেওয়াটা খুব একটা ভালো সিদ্ধান্ত নয়। তবে বন্ধুত্ব থেকে যদি সম্পর্কটা আপনা আপনিই ভালোবাসায় পরিণত হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই জীবনসঙ্গী হিসেবে বন্ধুই উত্তম।