Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪,শুক্রবার, ৫ আগস্ট ২০১৬: মোঃ আফজাল হোসেন, দিনাজপুর :দিনাজপুর শহরের রামনগর-বাঙ্গীবেচা এলাকায় একের পর এক অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন নির্বিকার। নদীতে, ধানের ক্ষেতে ও পানিতে ডুবে অসংখ্য যুবক অপমৃত্যুর ঘটনায় অভিভাবক মহলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এসব হত্যাকান্ডের কোন বিচারিক কার্যক্রমের সুফল পায়নি বলে অনেকেই আক্ষেপ করেছেন। দুই একটি মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা হলেও সঠিক তদন্ত ও প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা পড়ে আছে। বিশেষ করে শহরের রামনগর-বাঙ্গীবেচা এলাকায় একাধিক মৃত্যুর ঘটনায় শহরের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই এলাকাটি ঠিক যেন মৃত্যুর উপত্যকায় পরিনত হয়েছে। তার প্রধান কারন হচ্ছে অভিভাবকদের সন্তানদের প্রতি নিয়ন্ত্রন অক্ষমতা, প্রশাসনিক উদাশীনতা, স্থানীয় কাউন্সিলর ও সমাজপতিদের অবহেলা, পুলিশি টহল বা নজরদারী কম।
সর্বশেষ ২৪ জুলাই ১৬ ইং তারিখে রামনগরে মানিকপীর স্কুল সংলগ্ন বস্তাবন্দি অবস্থায় ইজিবাইক চালক কিশোর বাবু নামে এক লাশ পাওয়া যায়। স্থানটি নির্জন বিধায় বখাটেদের আড্ডা হয় এবং সন্ধ্যার পর স্থানটিতে মাদকসেবীদের নিরাপদ স্থানে পরিনত হয়। এলাকার মানুষ তা জেনেও কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে না। অন্যদিকে আজ থেকে ২৪ বছর পূর্বে রামনগর ইন্দ্রা মোড়ের মৃত ডাঃ শফি এর পুত্র হেলাল নামে এক যুবক প্রকাশ্য দিবালকে রামনগর মোড়ে প্রতিপক্ষের রামদার আঘাতে নিহত হয়। আজ থেকে প্রায় ১০ মাস পূর্বে মুদি দোকানদার মোকলেসুর রহমান ধলাকে কে বা কাহারা হত্যার পর রামনগর মাঠের এক কোনে আগুন দিয়ে ঝলসে দেয় তার লাশ। এ ব্যাপারে নিহত ধলার পিতা বলেন যে, মামলা সমন্ধে আমি কিছুই জানিনা। কাকে ধরা হচ্ছে বা কাকে ছাড়া হচ্ছে এসব সমন্ধে আমি কিছু বলতে পারব না। প্রায় দেড় বছর পূর্বে গোবড়াপাড়া রোডে একলাসুর মিস্ত্রির কন্যাকে তার প্রেমিকসহ হাত পা বাধা অবস্থায় বিরল এলাকার রেল লাইনের ধারে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার হাত দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল এবং রেল লাইনে ফেলায় তাদের লাশ রেলের চাকা দ্বারা কাটা ছিল। এই যুগল প্রেমিকের লাশ যখন রামনগর এলাকায় আনা হয় তখন যুবক-যুবতীদের অভিভাবকরা আতঙ্কীত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে গত ১৭ এপ্রিল’১৬ ইং তারিখে ঘাসিপাড়া বট তলা এলাকার একই পরিবারের যুবক নাদিম কালু, নয়ন ও সাহাবুদ্দিন বাঙ্গীবেচা নদীতে গোসল করতে গিয়ে ডুবে মারা যায়। নদীতে পানি ছিল না কিন্তু অবৈধ বালু উত্তোলন করায় গর্তের সৃষ্টি হয়। তাতে পানি জমা ছিল সেই পানিতে একই পরিবারের তিন যুবক ডুবে মারা যায়। তাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা করা হয়নি এবং কোন মেম্বার, কাউন্সিলর কিংবা পৌর মেয়র অথবা প্রশাসনের কোন ব্যক্তিদ্বয় পরিবারটিকে সমবেদনা জ্ঞাপন করতে আসেননি। যারা অবৈধ বালু উত্তোলন করে গর্তের সৃষ্টি করেছিল তাদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলে জানান মৃত নাদিম কালুর পিতা মোঃ ইকবাল। এই তিন যুবক হত দরিদ্র পরিবারের মেধাবি ছাত্র ছিল। তাদের পিতা কেউ রিক্সা চালক আর কেউ বেলুন বিক্রেতা আবার কেউ ফেরিওয়ালা। কয়েক বছর পূর্বে কয়েকজন জুয়ারি জুয়া খেলতে গিয়ে পুলিশের তাড়া খায়। গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে একাধিক জুয়ারি বাঙ্গীবেচা নদীর পানিতে ঝাঁপ দিলে তারা সকলে পানিতে ডুবে মারা যায়। এসব ব্যাপারে কোন সন্তোষজনক বিচার পায়নি এলাকার মানুষ। এটা শুধু আইনী ব্যাপার নয় এটা গবেষনার ব্যাপার বটে। কি কারনে বার বার মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে রামনগর-বাঙ্গীবেচা এলাকায় ?
রামনগরের মামুনের মোড় জামাই পাড়া মোড়, রাজাপোড়া ঘাট মোর ও বাঙ্গীবেচা ঘাটের নিকট যেসব দোকানপাট রয়েছে তার মধ্যে অনেকগুলো দোকান গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। সেখানে চলে আড্ডাবাজী ও কেরামবোর্ড খেলার আড্ডা। দোকানগুলিতে গভীর রাত পর্যন্ত কিশোর যুবকরা নিয়মিত আড্ডা দেয়। কি কারনে এই যুবক কিশোররা এখানে আড্ডা দেয় তা খতিয়ে দেখে না অভিভাবকরা। সন্তানদের নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে পুলিশ বা আইনি সংস্থার সহায়তা নিতে তারা কুন্ঠিতবোধ করেন। সমাজের প্রতিটি সচেতন মানুষ এবং এলাকাবাসী কাউন্সিলর ও পুলিশ প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করলে অনেকটা সমাধানের পথ খুজে পাওয়া যেতে পারে বলে অভিজ্ঞ জনেরা মনে করেন।