খোলা বাজার২৪ শনিবার, ৬ আগস্ট ২০১৬: খালেদা জিয়াকে চারটি প্রস্তাব দিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে- জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ, বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে বক্তব্য না দেয়া, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন না করা ও গণতন্ত্র ফেরাতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করা।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে চা-চক্রে অংশ নেয়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা এই চার প্রস্তাবের কথা জানান। তিনি জানান, বৈঠকে আমরা এসব প্রস্তাব দিয়েছি। বিএনপি চেয়ারপারসনসহ উপস্থিত নেতারা শুধু শুনেছেন। কিন্তু কোনো মন্তব্য করেননি। বিএনপি নেতাদের মনোভাব দেখে মনে হয়, তারা সহজে জামায়াতকে ছাড়বে না। ফলে জাতীয় ঐক্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন এ নেতা।
তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু জামায়াত প্রসঙ্গে কথা বলায় সরকারের দুর্নীতি ও অপশাসন চাপা পড়ে যাচ্ছে। তাদের ভাষ্য, এতে লাভবান হচ্ছে সরকার। এ নিয়ে তারা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতের প্রায় দুই ঘণ্টার ওই চা-চক্রের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের স্ত্রী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার আহ্বানে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনো ঐক্য করতে যাইনি। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য গড়ায় খালেদা জিয়াকে কিছু প্রস্তাব দিয়েছি।
তিনি বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। এটা একটা ভালো কাজ করেছেন। উনার আগে এই ডাকটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিদেশ থেকে ফিরে এসে উনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। আসলে উনার নেতৃত্বে কোনো ঐক্য হয়নি। স্বাধীনভাবে জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রচেষ্টা নেয়া দরকার। সেখানে যেমন জামায়াত থাকবে না, তেমনি বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাত ও দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য গণবাহিনীও থাকবে না।
জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি মানব সন্তান পেতে হলেও আমাদের দশ মাস অপেক্ষা করতে হয়। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। কোনো তাড়াহুড়া করিনি। নিশ্চয় আমাদের সব প্রস্তাব সবাই মানবে না। আবার আমাদের মানার মতো প্রস্তাব কেউ স্বীকার না করলে তাদের সঙ্গেও বনিবনা হবে না। এটা অনেকটা বিয়ের ঘটকালির মতো। বিয়ে হয় উভয়ের পছন্দে, রাজনীতিও হবে সে রকম।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, বিএনপি নেত্রীকে বলেছি জামায়াত ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার শতবার বলা দরকার, আপনি রাষ্ট্র ও দেশের প্রয়োজনে জাতীয় ঐক্যের প্রচেষ্টা নিন। যদি বারবার বলার পরও তিনি তার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হন, তাহলে আপনা-আপনিই জাতিকে পরিত্রাণের দায়িত্ব খালেদা জিয়ার কাঁধে গিয়ে পড়বে। তিনি (খালেদা জিয়া) যদি সফল হন, তিনি নেতা হবেন। আর যদি তিনি ব্যর্থ হন, তাহলে জাতিকে এই ক্রান্তি থেকে উত্তরণের জন্য সেই দায়িত্ব অন্য কারোর ওপর যাবে। এটা বসে থাকবে না। কারণ এটি বহমান নদীর মতো।
মতিঝিলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী বলেন, খালেদা জিয়াকে বলেছি, বঙ্গবন্ধু ছাড়া রাজনীতি করব না, জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি করব না। খালেদা জিয়াকে জাতীয় নেতৃত্ব দিতে হলে প্রথমে স্পষ্টভাবে বলতে হবে যে জামায়াত তার জোটে নেই।
তিনি বলেন, বৈঠকে আমি বলেছি, বঙ্গবন্ধুকে গালাগালি করা যাবে না। তার রাজনীতি নিয়ে যদি কোনো কথা হয়, তাহলে রাজনীতির সীমায় থেকে করবেন। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিনে খালেদা জিয়ার যদি প্রকৃত জন্মদিন হয়, সেটা পালন করা চলবে না। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে বলেছি, আপনি ঘর থেকে বের হন, আপনার ঘরে সবাই আসবে, আর আপনি বসে থাকলে হবে না। আপনি বের হন, আপনি অন্যের ঘরে যান। আমাদের ওপরে যেমন কোনো কিছু চাপিয়ে দিলে মানব না, শুনব না। ঠিক তেমনি তাদের ওপরও তেমন কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না।
দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধান শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশে মাত্র দু’জন পুরুষ, আর সবাই অন্য লিঙ্গের মানুষ। আর এ কারণে তিনি মনে করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দেশের ক্রন্তিকাল থেকে উত্তরণের চেষ্টা করা উচিত, তবে তা খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নয়। বঙ্গবন্ধু যেমন অবিসংবাদিত নেতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে সেই অবস্থানে এসেছেন। তিনি বাংলদেশের প্রধান জাতীয় নেতা। শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ চিন্তা করা অবাস্তব। ঠিক তেমনি খালেদা জিয়াকে বাদ দেয়াও অবাস্তব। এ রকম কাজ পাকিস্তানের সময় আইয়ুব-ইয়াহিয়ারা করেছেন। কারণ তারা বঙ্গবন্ধুকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেননি, যার পরিণতিতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়ে পাকিস্তান খণ্ডিত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যের ডাক পেলে সেখানেও যাবেন বলে এক প্রশ্নের জবাবে জানান কাদের সিদ্দিকী।
সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী জুমার খুতবায় জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য ঠিক করে দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। একই সঙ্গে পিস টিভির সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধের পর অনুমোদনহীন পিস স্কুল বন্ধের নির্দেশনা নিয়েও সমালোচনা করেন কাদের সিদ্দিকী। দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের মতামত ব্যক্ত করার পর জামায়াতের ঔদ্ধত্যেরও সমালোচনা করেন তিনি।
জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতারকৃতদের মেরে ফেলার সমালোচনা করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমাদের আইনশৃংখলা বাহিনীর ভেতরে এদের লোক আছে কিনা আমার সন্দেহ হয়। শোলাকিয়ার হামলাকারী শফিউল ইসলামসহ দু’জন র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ারও সমালোচনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক, কেন্দ্রীয় নেতা নাসরিন কাদের সিদ্দিকী, শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার প্রমুখ।