Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ শনিবার, ৬ আগস্ট ২০১৬: সালে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার নানিয়ারচর উপজেলার চেঙ্গি নদীর ওপর দিয়ে একটি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সরকার। কিন্তু গত ২২ বছরেও নির্মিত হয়নি ব্রিজটি। অথচ সেটি নির্মিত হলে ওই একটি ব্রিজই কেবল বদলে দিতে পারত পিছিয়ে পড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের উন্নয়নের দৃশ্যপট। এবারও সর্বশেষ ব্রিজটি নির্মাণে সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরিদর্শনকালে ঘোষণা দিলেও গত ৮ মাসেও তার কোনো কাজ শুরু হতে পারেনি।
উল্লেখ্য, যাতায়াত ও পরিবহন সুবিধা গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাঙ্গামাটি-নানিয়ারচর-লংগদু সড়ক সংযোগ স্থাপনে চেঙ্গি নদীর ওপর দিয়ে ওই সেতুটি নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে এ সরকার। সরকার ইতিমধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদনসহ বরাদ্দও দিয়েছে। ৪৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করতে প্রাথমিক বরাদ্দ হিসেবে ইতিমধ্যে ৮ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে নির্মাণ কাজ শুরুর জন্য গত বছর ৩১ অক্টোবর ব্রিজটি পরিদর্শন করেন সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওই সময় চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে এবং ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। মন্ত্রীর ওই ঘোষণায় তাৎক্ষণিক উৎফুল্ল হন এলাকাবাসী। কিন্তু ঘোষণার ৮ মাসেও শুরু হতে পারেনি চেঙ্গি সেতুর নির্মাণ কাজ। ওই সময় মন্ত্রী জানান কাজটি দেয়া হবে সেনাবাহিনীকে। তবে কী কারণে আজও সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হতে পারেনি তা জানতে যোগাযোগ করা হলে রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু মুছা বলেন, কাজ সেনাবাহিনী করবে। বর্তমানে সেতুটির নকশা প্লান তৈরির কাজ চলছে। এটি চূড়ান্ত হলে নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
ওই সময় সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, সেতুটি পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার স্থানীয় জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি। এটি ছিল এলাকাবাসী সবার এক দফা এক দাবি। তাই দাবিটি বিবেচনা করে পার্বত্য এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই সেতুটি নির্মিত হলে বান্দরবানের বগালেক থেকে শুরু করে তিন পার্বত্য জেলায় গড়ে ওঠা বিস্তৃত সড়ক যোগাযোগের সংযোগ স্থাপন হবে। এতে সবক্ষেত্রে এখানাকর জনগণের জীবনমান উন্নয়নসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগযোগ স্থাপনে তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানকে সংযুক্ত করবে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের চেঙ্গি ব্রিজ। এতে করে এ তিনটি পাহাড়ি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সর্বক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন ঘটবে এ অঞ্চলের। পাশাপাশি দ্রুত উন্নীত হয়ে বদলে যাবে এ অঞ্চলে বসবাসকারী অধিবাসীদের সার্বিক ও স্বাভাবিক জীবনমান।
সরেজমিন পরিদর্শনে বিষয়টি নিয়ে মতামত চাওয়া হয় এলাকাবাসীর। এ ব্যাপারে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা বলেন, নানিয়ারচরের চেঙ্গি নদীর উপর সেতুটি নির্মিত না হওয়ায় রাঙ্গামাটি-নানিয়ারচর-লংগদু-বাঘাইছড়ি সড়ক দিয়ে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা যাচ্ছে না। অথচ সড়কটির যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে রাঙ্গামাটি জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি দুর্গম তিনটি উপজেলা নানিয়ারচর, লংগদু ও বাঘাইছড়ির যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হয়ে উঠবে। এর ফলে এলাকার জনসাধারণের যাতায়াতসহ মালামাল পরিবহন ও বাজারজাতকরণের সুবিধা গড়ে উঠবে সহজে।
নানিয়ারচর উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব বলেন, এটি একটি ব্যয় বহুল নির্মাণ কাজ। তারপরও আশা করছি এ সরকারের আমলেই সেতুটি নির্মাণ হবে। সেতুটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় প্রায় শতকোটি টাকার অধিক লাগতে পারে।
নানিয়াচর উপজেলার সাবেক্ষণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুশীল জীবন চাকমা সুপন বলেন, ব্রিজটি নির্মাণ করা হলে এলাকার জন্য লাভ-ক্ষতি দুটোই আছে। তবে ব্রিজটি নির্মাণ করা দরকার।
একই ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার চন্দনা চাকমা বলেন, এই পাহাড়ি অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ চাষাবাদ হয়ে থাকে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ার ফলে বেশিরভাগ উৎপাদিত পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। চেঙ্গি নদীর উপর দিয়ে সেতুটি নির্মিত হলে রাঙ্গামাটি জেলা শহরের সঙ্গে নানিয়ারচর-লংগদু-বাঘাইছড়ি উপজেলার যেমন সরাসরি সড়ক যোগাযোগ গড়ে উঠবে তেমনি এ পাহাড়ি এলাকার সুবিধাবঞ্চিত চাষিরা তাদের উৎপাদিত পণ্য জেলা সদরসহ বিভিন্ন শহরে বাজারজাতের সুবিধা পাবেন।