খোলা বাজার২৪ শনিবার, ৬ আগস্ট ২০১৬: আলিফ হোসেন, তানোর : রাজশাহীর তানোর উপজেলা বিএনপি এখন চালাচ্ছে কে ? আওয়ামী লীগ ?, জামায়াত ?, না কি ? বিএনপি ? বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মনে এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব নেতাকর্মীরা বুঝতে পারছেন না তারা কার নির্দেশে চলছেন। তানোরে বিএনপির তৃণমুল নেতা ও কর্মী-সমর্থকরা সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে চাইলেও উপজেলা বিএনপির কতিপয় নেতার নিরবতার কারণে তারা তা করতে পারছেন না। ফলে এসব নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ। এদিকে উপজেলা বিএনপির কতিপয় নেতার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে পড়েছে। তৃণমুলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার অদৃশ্যে ইঙ্গিতে এখানে বিএনপির কর্মকান্ড চলছে। তারা বলেন, তানোর উপজেলা বিএনপিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ওই নেতা। যে কারণে সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে ৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বড় ব্যবধানে বিজয়ী হলেও বিএনপি প্রার্থীরা কোনো প্রতিরোধ বা প্রতিদন্দিতা গড়ে তুলতে পারেনি। এমনকি অদুশ্যে কারণে উপজেলা বিএনপির কতিপয় নেতা তার অনুসারীদের নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের মাঠে কাজ করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় বিএনপির সুত্রগুলো বলছে, বিগত বিএনপির ঢাকা চলো মহাসমাবেশের পর সারাদেশে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম যখন জোরদার ও চাঙ্গা তখন রাজশাহীর তানোর উপজেলা বিএনপির কার্যক্রম নিস্তেজ ও স্থবির। তানোরে বিএনপির কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। এখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যক্রম তেমন পালন হচ্ছে না, আবার স্থানীয়ভাবে বিএনপির তেমন কোন কার্যক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। দলের তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিযোগ তানোরে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো কোনো পর্যায়েই খুব একটা সক্রিয় নয়। দীর্ঘদিন ধরে দলটিতে কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন্দ্বল, মতবিরোধ, গৃহবিবাদ ও পরিক্ষিত নেতাদের দুরে রাখাসহ নানা কারণে তানোর বিএনপি সব থেকে খারাপ সময় পার করছে। এসব নেতাকর্মীরা দাবি করেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির (সাবেক) সাধারণ সম্পাদক ও প্রবীণ নেতা শীষ মোহাম্মদ প্রয়াত হলে এখানে বিএনপি অভিভাবক শুণ্য হয়ে পড়ে। এদিকে উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী কতিপয় নেতা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপণ আঁতাত করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারা দিনে বিএনপি আর রাতে আওয়ামী লীগ করছেন। স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে এসব নেতা আসিন থাকলেও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার অদৃশ্যে ইঙ্গিতে তাঁরা আওয়ামী লীগকেই প্রতিষ্ঠিত করতে গোপনে নানা তৎপরতা করছে। যে কারণে এখানে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা স্থবির ও অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। এসবের বিনিময়ে বিএনপির ওই নেতা নিজে সুবিধা গ্রহণের পাশাপাশি তার নিকট আতœীয়-স্বজনদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে দিয়েছেন। মুলত জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ওই নেতার অদৃশ্যে ইঙ্গিতে তানোর বিএনপির কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে বলে স্থানীয় বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
এ ব্যাপারে তানোর উপজেলা বিএনপির (সাবেক) সাধারণ সম্পাদক মুনসুর রহমান বলেন, তানোর বিএনপি চলে আওয়ামী লীগের ইশারায়। বিএনপির প্রথম সারির এমন কিছু নেতা আছে, যারা দিনে বিএনপি, রাতে আওয়ামী লীগ। এসব নেতাদের এহেন আদর্শহীন কার্যকলাপে সাধারণ নেতাকর্মীরা দল থেকে নিজেদের নিরাপদ দুরুত্বে রাখে। কারণ সহীদ জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী ও প্রগতিশীল নেতাকর্মী যারা জিয়ার আদর্শ নিয়ে কাজ করতে চায়, তাদের আওয়ামী পন্থীরা পদে পদে বিপদে ফেলেন। এ ব্যাপারে তানোর পৌর বিএনপির (সাবেক) সহ-সভাপতি নাজিমুদ্দিন মন্ডল বলেন, উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী কতিপয় নেতার বিশ্বাষঘাতকতা ও আওয়ামী লীগের এজেন্ট হয়ে কাজ করায় সাধারণ নেতাকর্মীরা কেউ ঝুঁকি নিতে চায় না। যে কারণে এখানে বিএনপির দলীয় কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে তানোর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমরান আলী মোল্লার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।