খোলা বাজার২৪ শনিবার, ৬ আগস্ট ২০১৬: সালাম, মুন্সীগঞ্জ :মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের মালির পাথর খালটিকে ঘিরে আধুনকি সভ্যতার যুগেও গড়ে উঠেছে প্রায় তিন শকাধিক খোলা ঝুলন্ত পায়খানা। আবার একটু বৃত্তবানরা পরিবারগুলোও যোগ হয়েছে তাদের মিছিলে। অর্থবিত্তে স্বাভলম্বী হলেও তারা মানসিকতায় পরিবর্তন হতে পারেনি। অনেক বাড়ীতে পাকা লেট্রিন তৈরী করলেও এসব পায়খানার মল , মূত্র পাইপের মাধ্যমে সরাসরি খালে ছেড়ে দিচ্ছে। এলাকার বেশীরভাগ বাড়ীতে খোলা পায়খানা ব্যবহার করতে দেখা গেছে। আশে পাশে একাধিক ইন্ডাষ্ট্রিজ গড়ে ওঠায় এলাকাটি এখন ঘনবসতিপূর্ন গ্রামে পরিনত হয়েছে। এমন পরিস্থিতির জন্য অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা কলকারখানাকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। স্থানীয় সচেতন একাধিক বাসিন্ধা অভিযোগ করে বলেন, এই এলাকায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এলাকায় বসবাসরত বেশিরভাগ লোক খেটে খাওয়া শ্রমিক। দুঃখজনক হলেও সত্য এসব এলাকার শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে খোলা পায়খানা ব্যবহার করে আসছে। স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার নেই বললেই চলে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে গ্রামে রোগ ব্যাধি হচ্ছে নিত্য দিনের সঙ্গী। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে ম্যানিটেশন ব্যবস্থা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কলকারখানার শ্রমিক, কর্মচারী ও তাদের পরিবার ছোট খাট বস্তীতে বসবাস করেন। আর এসব বস্তির বেশীরভাগ টয়লেট বাঁশের তৈরী করা। বস্তিতে বসবাসরত নি¤œ আয়ের মানুষগুলো অনেকক্ষেত্রে খোলা পায়খানাই ব্যবহার করে বেশী। খোলা পায়খানাগুলো অনেকটাই খাল কেন্দ্র করে নির্মান করা হয়েছে।এ থেকে উত্তোরন করার জন্য গণসচেতনতা মূলক প্রচারনার দাবী স্থানীয়দের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মালির পাথর,ফিরিঙ্গিবাজার, নৈদিঘিরপাড়, ডিঙ্গাভাঙ্গা ও তার পার্শবর্তী এলাকায় এখনো প্রায় তিন শতাধিক খোলা পায়খানা ব্যবহার হচ্ছে। ফলে এ গ্রামগুলোর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে মারাত্মকভাবে। গ্রামের অনেক মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুরা প্রায়ই ডায়রিয়া, জন্ডিস,খাদ্যে বিষক্রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বড়দের বেলায়ও একই সমস্যা লক্ষ করা গেছে। এছাড়া এ সকল গ্রামগুলোতে বিশুদ্ধ পানির ব্যাপক অভাব রয়েছে। ময়লা ও পয় নিষ্কাশনে নেই কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
মালির পাথর এলাকায় বস্তিতে বসবাসকারী রাইস মিলের শ্রমিক কবির বলেন, আমরা নি¤œ আয়ের মানুষ বস্তি বাড়ীত ভাড়া থাকি। বাড়ীর মালিক যদি স্বাস্থ্যস¤œত পায়খানা তৈরী করে দিত তাহলে ভাল হতো। খোলা পায়খানা ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি । স্কুল ছাত্রী মাহমুদা আক্তার বলেন,এলাকার বাসিন্ধাদের প্রতিদিনের মল, মূত্র সরাসরি খালের মাধ্যমে গিয়ে ধলেশ্বরী নদীতে গিয়ে মিশছে। এসব খোলা পায়খানার দূর্গন্ধে এলাকায় টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
মালির পাথর এলাকার বাসিন্ধা করিম জানান, আমরা ঘরভাড়া দিয়ে যে টাকা পাই তাতে চলেনা। পাকা পায়খানা বানানোর সামর্থ আমাদের নেই। তিনি আরো বলেন, নি¤œ আয়ের লোকগুলো মূলত এখানে ভাড়া থাকেন বেশী। সরকারীভাবে কোন সহযোগিতা পেলে স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা স্থাপন করা হবে।
পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান হাজ্বী মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি মাত্র দায়িত্বভার গ্রহন করেছি। এলাকায় গিয়ে এসব খোলা পায়খানাগুলো উচ্ছেদ করে পরিবারগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। এছাড়াও এসব খোলা পায়খানার কারনে পরিবেশ মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে।
স্যানিটারি ইন্সপেক্টর জামাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, এ বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মহিলা মেম্বাররা ব্যবস্থা নিবে। এতে তারা ব্যর্থ হলে আমাদের লিখিতভাবে জানালে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া জাহান বলেন, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা তিনি আরো বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।