Fri. Jun 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

18খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৭ আগস্ট ২০১৬: জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ৫০২ সদস্যবিশিষ্ট বিএনপির পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হলেও কাক্ষিত পদ না পাওয়ায় অনেকেই সংক্ষুব্ধ। দু’একজন ইতোমধ্যে কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহার চেয়ে আবেদনও করেছেন। পদত্যাগ চেয়ে আবেদন করতে পারেন আরো কয়েকজন। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় যারা পদত্যাগ করছেন না তারা আর সেভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

শনিবার (৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে ঘোষিত হয়েছে, ১৯ সদস্যবিশিষ্ট বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও ৭৩ সদস্যের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল। গত ১৯ মার্চ ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গনে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
ঘোষিত কমিটিতে অনেকের পদোন্নতি হয়েছে, অনেকে আবার একইপদে বহাল রয়েছেন। তবে অবনমনও (ডিমোশন) হয়েছে অনেকের। তবে অবনমনের জন্য বিএনপির বিগত আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তা, দলে বিতর্কিত ভূমিকা ও কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে দায়ী করা হচ্ছে।
ঘোষিত কমিটিতে ন্যূনতম ৭ জনের অবনমন ঘটেছে। তারা হলেন : বেগম সারোয়ারি রহমান, নাদিম মোস্তফা, নাজিমউদ্দিন আলম, ডা. কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন, আব্দুল লতিফ জনি, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম ও আসাদুল করিম শাহীন।
সারোয়ারি রহমান বিদায়ী স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতার কারণে সাংগঠনিক কাজে অংশ নিতে না পারায় তাকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে রাখা হয়েছে।
বিদায়ী কমিটিতে নাদিম মোস্তফা বিশেষ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকলেও নতুন কমিটিতে তাকে নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে। তিনি ভাইস চেয়ারম্যান পদের আলোচনায় ছিলেন।
নাজিমউদ্দিন আলম বিদায়ী কমিটিতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। নতুন কমিটিতে তাকে নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিএনপির সরকার বিরোধী বিগত আন্দোলনে চরম নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নতুন কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক কিংবা আরো বড় পদের প্রত্যাশী ছিলেন।
জানতে চাইলে নাজিম উদ্দিন আলম বলেন, ‘আমি দলের জন্য কাজ করেছি, এখনো করছি, ভবিষ্যতেও করব। কমিটিতে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আমাকে যেখানে উপযুক্ত মনে করেছেন সেখানেই রেখেছেন। এ নিয়ে আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমাকে নির্বাহী সদস্য পদ দিয়ে ম্যাডাম খুশি থাকলে আমিও খুশি। আমি শুধু বিএনপির জন্য কাজ করে যেতে চাই।’
ডা. কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন বিদায়ী কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তাকেও নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। জানা যায়, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার ভাল সম্পর্ক থাকলেও বিগত কমিটির পর থেকেই সে সম্পর্ক ক্রমেই তিক্ত হতে থাকে। এক পর্যায়ে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এছাড়া দলে তার বিতর্কিত ভূমিকা রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বিএনপিপন্থী ডাক্তারদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতৃত্ব নিয়ে সংগঠনটির বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সঙ্গে ডা. দোলনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ডাক্তারদের বিভক্ত করে তিনি সংগঠনটির নেতৃত্বে যেতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনাটিকে ভালভাবে নেয়নি বিএনপি। এরপর থেকেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে ডা. দোলনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। নতুন কমিটিতে তার অবনমনের ক্ষেত্রে এটিও অন্যতম কারণ বলে মনে করেন কেউ কেউ। তাছাড়া বিএনপিতে ডা. জাহিদের একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানও রয়েছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা থেকে নতুন কমিটিতে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। কিন্তু তারপরেও নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদের প্রত্যাশী ছিলেন ডা. কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন।
বিদায়ী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি নতুন কমিটির নির্বাহী সদস্য হয়েছেন। দপ্তর সম্পাদকের আলোচনায় তার নাম শোনা গেছে। তিনি কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনীতির শিকার বলে মত অনেকের। বিশেষ করে তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ একজনের রোষানলের শিকার বলে জানা যায়। তবে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।
কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম বিগত কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। নতুন কমিটিতে তাকে সহ-প্রচার সম্পাদক ছিলেন। তিনি প্রচার সম্পাদকের আলোচনায় ছিলেন।
তবে সদ্য ঘোষিত কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক পদ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার চেয়েছেন শামীমুর রহমান শামীম। জানতে চাইলে হতাশার সুরে তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘রাজনীতি করতে গিয়ে আমি পাঁচ মাস কারাগারে ছিলাম। অসংখ্য মামলায় জর্জরিত। আন্দোলনের সময় দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু নতুন কমিটিতে আমাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। আগে আমি সহ-দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। এখন আমাকে ডিমোশন দিয়ে ৩ নং সহ-প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। আমার প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে। সেজন্য কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহার চেয়ে মহাসচিব বরাবর চিঠি দিয়েছি।’
বিদায়ী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীনকে নতুন কমিটিতে সহ-প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। তিনি পূর্বের পদে বহাল থাকা কিংবা কোনো সম্পাদকীয় পদের প্রত্যাশী ছিলেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়।
এছাড়া বিদায়ী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান ও মিজানুর রহমান মিনুকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে নেয়া হয়েছে। তারা ভাইস চেয়ারম্যান পদের আলোচনায় ছিলেন। বিদায়ী কমিটির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব আব্দুস সালামকেও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যানের আলোচনায় তার নামও জোরোশোরে উচ্চারিত হচ্ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, এই নেতারা বিএনপির সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলনে চরম নিষ্ক্রিয়তার পরিচয় দিয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, শুধু এরা নয়, বিএনপির বিদায়ী কমিটির কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। কিন্তু দেখা গেল, নতুন কমিটিতে তারা ভাল পদে গেছেন। সেদিক থেকে বলতে গেলে এদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।
এই সাতজনের অবনমনের জন্য কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও দায়ী করছেন বিএনপির আরেক নেতা। তার মতে, কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত এই সাতজন তাদের আক্রোশের শিকার হয়েছেন। বলতে গেলে, আন্দোলনে বিগত কমিটির অধিকাংশ নেতাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের ডাক দিলেও ঢাকার রাজপথে কোনো নেতাকেই দেখা যায়নি। তাহলে শুধু এরা কেন বলি হবেন।
এদিকে, পদপ্রাপ্তির সাড়ে ৪ ঘণ্টার মাথায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মোসাদ্দেক আলী ফালু। বিদায়ী কমিটিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বরাবর লেখা এ পদত্যাগপত্রটি শনিবার (৬ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
পদত্যাগপত্রে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করায় খালেদা জিয়ার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফালু লেখেন, ‘সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও শারীরিক কারণে আমার পক্ষে ওইপদে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন মোসাদ্দেক আলী ফালু।